ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

গরু নয়, অটোরিকশা দিয়ে ঘানিতে সরিষার তেল উৎপাদন

মোস্তাফিজুর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২২
গরু নয়, অটোরিকশা দিয়ে ঘানিতে সরিষার তেল উৎপাদন

পাবনা: পাবনায় ‘যান্ত্রিক গরু’ (ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা) দিয়ে ঘানিতে সরিষার তেল উৎপাদন করে তাক তাগিয়ে দিয়েছেন শারমীন নামে স্থানীয় এক নারী উদ্যোক্তা।  

বাজারে সরবরাহকৃত যেসব তেল পাওয়া যায় তার বেশিরভাগই মেশিনে প্রস্তুত।

কিন্তু ‘যান্ত্রিক গরু’ দিয়ে ঘানিতে স্বাস্থ্যসম্মত সরিষার তেলে উৎপাদন করছেন তিনি। শারমীনের বৈদ্যুতিক কলের গরু দিয়ে সরিষার তেলের ঘানিঘরের এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ সারা ফেলেছে জেলায়। এমন সাহসী ও ব্যতিক্রমী উদ্যোগে অনুপ্রাণিত হয়েছেন স্থানীয় নারী-পুরুষ।

প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবহার হয়ে আসছে কাঠের ঘানি। সময় ও আধুনিকতার ছোঁয়াতে এখন এই ঘানির ব্যবহার নেই বল্লেই চলে। কিন্তু পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার গোকুলনগর গ্রামের মেয়ে শারমীন ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সংমিশ্রনে কাঠের ঘানি থেকে উৎপাদন করছেন সরিষার তেল। শিক্ষা জীবন শেষ করে চাকরির পিছে না ছুটে নিজের প্রচেষ্টায় স্বাবলম্বী হতে চেয়েছেন তিনি। তার এই উদ্যমী সাহসিকতা আর প্রচেষ্টায় নিজ গ্রামেই স্থাপন করেন সরিষা তেলের ঘানিঘর। করোনাকালীন ফেসবুক পেজের মাধ্যমে গ্রাহকদের কাঠের ঘানিতে ভাঙানো সরিষার তেল সরবরাহের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করেন তিনি। আর এই কাঠের ঘানিকে সচল রাখতে পশু ব্যবহার না করে তিনি প্রযুক্তি খাটিয়ে যান্ত্রিক মেশিনের তিন চাকার ‘যান্ত্রিক গরু’ ব্যবহার করেছেন। এই কাঠের ঘানিতে যান্ত্রিক কলের গরুর সাহায্যে উৎপাদন করছেন সরিষার তেল। গ্রামের বাড়িতে নিজের পৈত্রিক জমিতে ৬টি ঘানি বসিয়ে শারমীন এখন স্বাবলম্বী। ঘানিঘর থেকে মাসে উপার্জন করছেন লক্ষাধীক টাকা। প্রতিদিন তার ঘানিঘর থেকে ৫০ লিটার সরিষার তেল উৎপাদন হচ্ছে। আর এই তেল স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে সরবরাহ হচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। শারমীনের ঘানিঘরের সরিষার তেলের পাশাপাশি তেল থেকে বের হওয়া খৈলেরও ব্যাপক চাহিদা রয়েছে স্থানীয় মৎস্য চাষিদের কাছে। দুটি ঘানি দিয়ে যাত্রা শুরু করে আজ তার ৬টি ঘানিতে উৎপাদন হচ্ছে তেল। অর্থের যোগান পেলে এই ঘানিঘরের পরিসর আরও বাড়াতে চান এই নারী উদ্যোক্তা।

গত বছরের প্রথম দিকে এই ঘানিঘর শুরু করেন নারী উদ্যোক্তা শারমীন। পরিবেশবান্ধব ও প্রযুক্তি নির্ভর এই ঘানিঘরের গল্প এখন সবার মুখে মুখে। শুরুর প্রথম পর্যায়ে সফলতা পাওয়ায় আরও ৪টি ঘানি বসান তিনি। এখন তার ৬টি ঘানিতে প্রতিদিন প্রায় ৬০ লিটার করে সরিষার তেল উৎপাদন হচ্ছে। তবে ক্রেতাদের চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হলেও অর্থের কারণে প্রতিষ্ঠানটির পরিসর বাড়াতে পারছেন না। তবে সরকারি সহযোগিতা পেলে এই ঘানিঘর আরও বড় পরিসরে করতে চান শারমীন। প্রায় সাত লাখ টাকা ব্যয় করে ঘানিঘরের কার্যক্রম শুরু করেন তিনি। ছয়জন শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন এই ঘানিঘরে। প্রতিটি ঘানিতে প্রতিদিন ৩০/৪০ কেজি করে সরিষা ভাঙানো হয়। আর প্রতিটি ঘানিতে ১০ থেকে ১২ লিটার তেল উৎপাদন হচ্ছে। প্রতি লিটার ঘানির সরিষার তেল ২৫০টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন তিনি।

নিজের ঘানিঘর নিয়ে শারমিন বলেন, শিক্ষা জীবন শেষ করে নিজে কিছু করা প্রত্যয় থেকে তার এই ঘানিঘর করা। মেশিনে যন্ত্রের মাধ্যমে সরিষা পিষে তেল বের করার ফলে তার গুণগত মান সঠিক থাকে না। কিন্তু আমরা কাঠের ঘানিতে তেল উৎপাদন করছি। স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে জীবন্ত গরু ব্যবহার না করে যান্ত্রিক কলের গরু ব্যবহার করছি আমরা। এখন আমার এই ঘানিঘরে তেলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আমি এখন একজন উদ্যোক্তা কিন্তু স্থানীয় বাজারে আমার তেল দিতে পারছি না। ফেসবুক পেজের মাধ্যমে সারা বাংলাদেশে প্রতিদিন বোতলজাত করে চাহিদা অনুপাতে তেল পাঠিয়ে দিচ্ছি। অনেকেই আবার আমার ঘানিঘর থেকেই তেল নিয়ে যাচ্ছে। তবে প্রতিষ্ঠানটি আরও আধুনিক ও বড় করার ইচ্ছা আছে। সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আমি এই প্রতিষ্ঠানটিকে সারা বাংলাদেশের মডেল হিসেবে দাঁড় করাতে চাই।

বিসিক শিল্প নগরীর কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, তেলের গুণগত মান নিয়ে আমি কোনো কথা বলবো না। বিসিক সরকারের দেওয়া নির্দেশনা অনুসারে নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে সারা বছরই কাজ করছে। স্বল্প সূদে জেলার ছোট ছোট উদ্যোক্তাদের আর্থিক প্রণোদনাসহ প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। ভেজালের বাজারে দেশি প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেই আগের দিনের কাঠের ঘানিতে সরিষার তেল উৎপাদন করছে এটি সত্যিই ভালো একটি উদ্যোগ। আমরা এই নারী উদ্যোক্তার কথা জানতে পারলাম আপনাদের মাধ্যমে। আমাদের কাছে আবেদন করলে অবশ্যই তাকে সরকারিভাবে সহযোগিতা করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।