ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সার্চ কমিটি গঠন নিয়ে যা বললেন পর্যবেক্ষকরা

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২২
সার্চ কমিটি গঠন নিয়ে যা বললেন পর্যবেক্ষকরা

ঢাকা: নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটির মাধ্যমে যোগ্য লোক খুঁজতে আইন করার প্রস্তাব দিয়েছিল এক-এগার সময়কার ড. এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। যে প্রস্তাবের আলোকেই রাষ্ট্রপতির প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে আইন ছাড়াই দু’টি কমিশন গঠন করা হয়েছে।

এবার সেই প্রস্তাবেই ভিত্তিতে আইন তৈরি করে নির্বাচন কমিশন গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এতে ড. শামসুল হুদা কমিশনের সদস্য মুহাম্মদ ছহুল হোসাইনকেও রাখা হয়েছে। যদিও তারা প্রস্তাব করেছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে রাখতে। আইনে সেই বিষয়টি রাখা না হলেও বিশিষ্ট ব্যক্তির কোটায় প্রথমবারের মতো সার্চ কমিটিতে রাখা হলো কোনও নির্বাচন কমিশনারকে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দেওয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে সভাপতি করে গঠিত ছয় সদস্যের সার্চ কমিটিতে রাখা হয়েছে।

কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মুসলিম চৌধুরী, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন এবং কথা সাহিত্যিক অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক।

এ নিয়ে নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা বলছেন, কমিটি গঠন আপাত দৃষ্টিতে ভালো হয়েছে। তবে বৃক্ষের পরিচয় তার ফলে। তাই তারা নির্বাচন কমিশনার হিসেবে কেমন ব্যক্তিকে সার্চ করে বের করবেন, তার উপর নির্ভর করবে কমিটির পরিচয়।

সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার এ বিষয়ে বলেন, কমিটিতে চারজন সদস্যের নিয়োগ আইন দ্বারা নির্দিষ্ট করেই দেওয়া। আর দু’জন বাইরের। একজন কথা সাহিত্যিক অন্যজন সাবেক নির্বাচন কমিশনার। আপাত দৃষ্টিতে সার্চ কমিটি ভালো হয়েছে। এখন বৃক্ষ তোমার নাম কি, ফলে পরিচয়; বিষয়টি হচ্ছে এমন।

তিনি বলেন, তারা যাদের অনুসন্ধান করে বের করবেন, তাদের নাম যেন প্রকাশ করা হয়। সরকারের বলে দেওয়া নাম দিলে হবে না। একজন ব্যক্তির নাম প্রকাশ হলে, তার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ থাকলে, তা মানুষই জানাবে। তাই নাম প্রকাশ করা খুব প্রয়োজনীয়। আমরা বলবো- আইনে সততা, নিরপেক্ষতা, নীতির কথা বলা হয়েছে। সার্চ কমিটি যেন সেগুলো মেনে যোগ্য লোকদের নামই রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠায়।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ এ বিষয়ে বলেন, প্রজ্ঞাপনটি দেখেছি। খুব ভালো হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। চার জনের কথা বলার কিছু নেই। কারণ আইন মোতাবেক ওই চার জনকে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি বেঁধে দেওয়া। এখন বাকি দুই জনের একজন সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন। তিনি খুব বিজ্ঞজন। ভালো মানুষ। তার খুব সুনাম আছে। এছাড়া আরেকজন হলেন কথা সাহিত্যিক আনোয়ারা হক। তিনিও ভালো মানুষ। আমার দৃষ্টিতে সার্চ কমিটি ভালো হয়েছে। প্রত্যাশা থাকবে একটি সুন্দর নির্বাচন কমিশন গঠনে তারা সৎ, যোগ্য লোককে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে নামের তালিকা দেবেন।

শনিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সার্চ কমিটি গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করেন।
এতে বলা হয়, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২ এর ধারা ৩ মোতাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দেওয়ার জন্য আইনে বর্ণিত যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের নাম সুপারিশ করার লক্ষ্যে অনুসন্ধান (সার্চ) কমিটি গঠন করা হলো।

অনুসন্ধান কমিটি ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ মোতাবেক দায়িত্ব ও কার্যাবলী সম্পন্ন করবে। সার্চ কমিটির সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মেয়াদ শেষ হচ্ছে। নিয়মানুযায়ী, এর আগেই নতুন ইসি গঠন করা হবে। সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের মনোনীত করার পর রাষ্ট্রপতি তা চূড়ান্ত করেন। তবে এবার নতুন আইন অনুযায়ী সার্চ কমিটি গঠন করা হলো।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গত ১৭ জানুয়ারি মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ অনুমোদন দেওয়া হয়। গত ২৭ জানুয়ারি বিলটি জাতীয় সংসদে পাসের পর ২৯ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি আইনটিতে সম্মতি দেন। ৩০ জানুয়ারি ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল, ২০২২’ এর গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ অনুযায়ী সার্চ কমিটি (অনুসন্ধান কমিটি) গঠন করে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।  

আইন অনুযায়ী, আপিল বিভাগের একজন বিচারকের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠিত হবে। আইনে বর্ণিত যোগ্যতা-অযোগ্যতা বিবেচনা করে তারা ১০ জনের নাম প্রস্তাব করবেন। ১০ জনের মধ্য থেকেই পাঁচ জনকে নিয়ে রাষ্ট্রপতি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ হবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০২২
ইইউডি/জেডএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।