ঢাকা: সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব কাজী হাবিবুল আউয়ালকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অপর চার নির্বাচন কমিশনার হলেন—অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ বেগম রাশিদা সুলতানা, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবীব খান, অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর ও আনিছুর রহমান।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ আগামী পাঁচ বছরের জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার পদে তাদের নিয়োগ দিয়েছেন। শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সই করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সংবিধানের ১১৮(১) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি তাদের নিয়োগ দিয়েছেন।
কাজী হাবিবুল আউয়াল
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব থাকার সময়ে কাজী হাবিবুল আউয়াল ২০১৪ সালের ৩ মার্চ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে সচিব হিসেবে যোগ দেন। তারপর ১ ডিসেম্বর তিনি একই মন্ত্রণালয়ে সিনিয়র সচিব হিসেবে নিয়োগ পান। ২০১৫ সালের ২০ জানুয়ারি তিনি অবসরে যান। এরপর ২১ জানুয়ারি তাকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে সিনিয়র সচিব হিসেবে এক বছরের জন্য পুনরায় নিয়োগ দেওয়া হয়।
কাজী হাবিবুল আউয়াল ১৯৫৬ সালের ২১ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৬ সালে এলএলবি (অনার্স) এবং ১৯৭৮ সালে এলএলএম ডিগ্রি লাভ করেন।
রাশিদা সুলতানা
অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ বেগম রাশিদা সুলতানা নতুন নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে পাস করা রাশিদা সুলতানার বাড়ি সিরাজগঞ্জ। জুডিশিয়াল সার্ভিসের সদস্য হিসেবে তিনি বিভিন্ন জেলায় দায়িত্ব পালন করেন।
আহসান হাবীব খান
২০১৪ সালের ২৭ আগস্ট আহসান হাবীবকে তিন বছরের জন্য বিটিআরসির কমিশনার পদে চুক্তিতে নিয়োগ দেয় সরকার। এর আগেও তিন বছরের জন্য বিটিআরসির স্পেকট্রামের মহাপরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এছাড়া বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত বিটিআরসিতে একটি প্রকল্পে এক বছরের জন্য মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন এই সেনা কর্মকর্তা। আহসান হাবীব ২০১৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর সেনাবাহিনী থেকে অবসরে যান।
মো. আলমগীর
নতুন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর সবশেষ ২০১৯ সালের ১০ জুন সচিব হিসেবে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে যোগ দেন। ২০১৯ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর তিনি সিনিয়র সচিব হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে কর্মরত ছিলেন। এর আগে তিনি কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
মো. আলমগীর ১৯৮৬ সালে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে সহকারী কমিশনার হিসেবে সিলেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে চাকরিজীবন শুরু করেন।
মো. আলমগীর ১৯৮২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে অনার্স এবং ১৯৮৩ সালে একই বিষয়ে এমএসএস ডিগ্রি অর্জন করেন। মো. আলমগীর ৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৬২ তারিখে মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন।
মো. আনিছুর রহমান
নতুন নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পাওয় মো. আনিছুর রহমান ১৯৬২ সালের ৩১ ডিসেম্বর শরীয়তপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগ থেকে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৯৮৫ ব্যাচের বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের সদস্য হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন।
আনিছুর রহমান ২০১৭ সালের গত ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। একইবছরের ৫ জানুয়ারি তিনি জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে সচিব পদে যোগদান করেন। গত ২৭ জানুয়ারি ২০২০ তারিখ হতে তিনি এ বিভাগের সিনিয়র সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
নতুন আইনে সার্চ কমিটির মাধ্যমে কমিশন গঠন
নতুন আইনে নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য গত বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে ১০ জনের নাম সুপারিশ করে অনুসন্ধান (সার্চ) কমিটি। এর আগে ২২ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের জাজেজ লাউঞ্জে সপ্তম ও শেষ বৈঠকে ১০ জনের নাম চূড়ান্ত করা হয়।
এবারই প্রথম আইন অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠন হলো। গত ২৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে আইন পাসের পর নির্বাচন কমিশন গঠনে যোগ্য ব্যক্তি বাছাইয়ে ৫ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি প্রথম বৈঠকের পর নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ও বিশিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে নাম চেয়েছিল অনুসন্ধান কমিটি। এরপর বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল বাদে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কাছে তিন শতাধিক নাম জমা পড়ে। এর মধ্যে কমিটি কয়েক দফায় বিশিষ্টজনদের সঙ্গে বৈঠক করে মতামত নেন। পরে ওয়েবসাইটে ৩২২ জনের নাম প্রকাশ করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২২/আপডেট: ২০১৩ ঘণ্টা
এমআইএইচ/আরআইএস/এমজেএফ