ঢাকা, বুধবার, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ মে ২০২৪, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

২১ বছর পর ধরা পড়লেন ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদণ্ডের আসামি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০২ ঘণ্টা, মার্চ ২, ২০২২
২১ বছর পর ধরা পড়লেন ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদণ্ডের আসামি ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আজিজুল হক রানা ওরফে শাহনেওয়াজ

ঢাকা: গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ২০০০ সালে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আজিজুল হক রানা ওরফে শাহনেওয়াজ ওরফে রুমান অবশেষে গ্রেফতার হয়েছেন।

ঘটনার দীর্ঘ ২১ বছর বছর আত্মগোপনে থাকার পর মঙ্গলবার (১ মার্চ) রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশর (ডিএমপি) কাউন্টারে টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)।

সিটিটিসি জানায়, ২০০০ সালে গোপালগঞ্জে শেখ হাসিনার সভামঞ্চের পাশে বোমা পুতে রাখার দায়িত্বে মুফতি হান্নানের সঙ্গে ছিলেন আজিজুল হক রানা। এমনকি শক্তিশালী দুটি বোমা বানানোর কাজেও যুক্ত ছিলেন জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) এই নেতৃত্বস্থানীয় সদস্য।

বোমা দুটি উদ্ধারের পরর পরই গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়া থেকে ঢাকায় চলে আসেন গ্রেফতার আজিজুল হক। এরপর নাম-পরিচয় গোপণ করে টেইলারিং, মোদি দোকানদার, বই বিক্রেতা এবং সর্বশেষ খিললক্ষেতে প্রিন্টিং ও স্ট্যাম্পপ্যাড বানানোর কাজ করতেন তিনি।

ঘন ঘন অবস্থান পরিরিবর্তন ও নাম-পরিচয় পরিবর্তন করে দীর্ঘ ২১ বছর রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করে সাংগঠনিক কাজও পরিচালনা করে আসছিলেন আজিজুল। হুজি বর্তমানে প্রায় নিস্ক্রিয় থাকলেও যে দুই-একজনের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল এবং তাদের পরিরিকল্পনার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে তাকে আদালতে পাঠানো হবে বলে জানানো হয়।

মাদ্রাসা ছাত্র থেকে হুজিতে আজিজুল

গ্রেফতার আজিজুল হক রানা ১৯৮৭ সালে গাজীপুরের শ্রীপুরে জামিয়া আনোয়ারিয়া মাদ্রাসায় নূরানী বিভাগে ভর্তি হন। ওই মাদ্রাসায় তিনি ওস্তাদ মাওলানা আমিরুল ইসলাম এর সান্নিধ্যে আসেন। আমিরুল ইসলাম হুজির সক্রিয় সদস্য এবং মুফতি হান্নানের অনুসারী।

মাওলানা আমিরুল ইসলাম আজিজুলকে হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশে যোগদানের জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। সে সময় ওই মাদ্রাসায় মুফতি হান্নান, আব্দুর রউফ, আব্দুস সালাম সহ হরকাতুল হুজির সিনিয়র সদস্যদের যাতায়াত ছিল এবং গোপন বৈঠক করতেন।  

আজিজুল হক সংগঠনে যোগদানের পর অন্য ছাত্রসহ প্রশিক্ষণ ও তালিম নেওয়ার জন্য হুজি নেতা মুফতি ইজহারের চট্টগ্রামের লালখান মাদ্রাসায় যান এবং তালিম গ্রহণ করে। সেখানে তিনি বোমা তৈরি, আত্মরক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।

যেভাবে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টায় আজিজুল

মুফতি হান্নান সংগঠনের অপারেশনাল কার্যক্রমের জন্য সাহসী জিহাদী বিশ্বস্ত কয়েকজন লোক সংগ্রহ করার জন্য মাওলানা আমিরুল ইসলামকে দায়িত্ব দেন। এরপর মাওলানা আমিরুল ইসলাম আজিজুল হক রানাকে নির্বাচন করে একটি চিঠি দিয়ে গোপালগঞ্জ বিসিক এলাকায় সোনার বাংলা সাবান ও মোমবাতি তৈরির কারখানায় পাঠান।

ওই কারখানায় মুফতি হান্নানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাকে মাওলানা আমিরুল ইসলামের দেওয়া পত্রটি দেন আজিজুল। মুফতি হান্নান তাকে সংগঠনের নিয়মকানুন সম্পর্কে বুঝিয়ে দেন এবং আজিজুল হকের নাম পরিবর্তন করে ছদ্মনাম ‘শাহনেওয়াজ’ প্রদান করেন।  

শাহনেওয়াজ পরিচয়ে আনুমানিক ১৫ দিন মোমবাতি প্যাকিংয়ের কাজ করেন। বিশ্বস্ততা অর্জন করলে কারখানার পেছনে একটি কক্ষে গোপন বৈঠকে উপস্থিত থাকার অনুমতি পান, যেখানে বোমা তৈরির কাজ চলতো।

বোমা তৈরির কাজে আজিজুল হক ইউসুফ, মেহেদী হাসান, ওয়াসিম আক্ত, মহিবুল, শেখ এনামুল হক, আনিসুল ইসলামসহ কয়েকজন নিয়োজিত ছিলেন।

২০০০ সালে শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে কোটালীপাড়াস্থ শেখ লুৎফর রহমান সরকারি আদর্শ কলেজ মাঠে অবস্থিত সভামঞ্চের পাশে মাটির নিচে একটি ৪০ কেজি ওজনের বোমা এবং হেলিপ্যাডের পাশে মাটির নিচে একটি ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রাখে। মুফতি হান্নানের সঙ্গে বোমা পুঁতে রাখার দায়িত্বে ছিলেন আজিজুল হক।

বোমা উদ্ধারের পর আজিজুল গোপালগঞ্জ থেকে পালিয়ে ঢাকায় চলে আসেন এবং মাওলানা আমিরুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করেন। আমিরুলের পরামর্শেই তিনি আত্মগোপনে যান আজিজুল।

ভুয়া নামে পরিচয়পত্র-ড্রাইভিং লইসেন্স

আজিজুল আত্মগোপনে যাওয়ার পর নেত্রকোণা গিয়ে ভুয়া নাম-পরিচয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স করেন। এরপর সেই পরিরিচয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রও বানান তিনি। আজিজুল বিভিন্ন স্থানে গিয়ে বিভিন্ন পরিরিচয়ে অবস্থান করতেন। ঘন ঘন অবস্থান পরিরিবর্তনের কারণে দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকতে সক্ষম হন তিনি।

এর মধ্যে বিদেশে পালিয়ে যেতে পাসপোর্ট তৈরির চেষ্টা করেন আজিজুল। পাসপোর্ট তৈরিতে পুলিশ ভ্যারিফিকেশনের বিষয় থাকায় পরে তিনি এ থেকে সরে আসেন।

সিসিটিসির প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, গ্রেফতারের সময় আজিজুলের কাছ থেকে জিহাদী বই, ২ টি মোবাইল ফোন, পেনড্রাইভ ও কম্পিউটারের হার্ডডিক্স উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে খিলক্ষেত থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ মামলায় তার ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হবে।

তিনি বলেন, হরকাতুল জিহাদ মাঠে কিছুটা সক্রিয় রয়েছে, আশা করছি আমরা জিজ্ঞাসাবাদে তার মাধ্যমে কিছু তথ্য পাবো। তাদের কিছু পরিকল্পনা সম্পর্কেও জানতে পারবো। তাকে গ্রেফতারের মাধ্যমে হুজির আরেকটি নেটওয়ার্ক ধ্বংস করে দিতে পারবো।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাকে গ্রেফতারে দেরি হলেও পুলিশ সফল হয়েছে। কারণ সে গ্রেফতার এড়াতে পারেনি। ওই মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আরো চারজন পলাতক আছেন আমরা তাদের বিষয়েও কাজ করছি।

আজিজুলকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নাশকতার কোনো পরিরিকল্পনার তথ্য পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, কিছু সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাতেন তিনি। হরকাতুল জিহাদের তেমন অস্তিত্ব নাই, যে ২-১ জন আছে আমরা এ বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবো। এ সময়ে যদি কাউকে বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন, কাউকে রেডিকালাইজড করে থাকলে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০২ ঘণ্টা, মার্চ ০২, ২০২২
পিএম/এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।