ঢাকা, বুধবার, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ০৩ জুলাই ২০২৪, ২৫ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

তীব্র যানজট: গাড়ি কমানো ছাড়া উপায় দেখছে না ট্রাফিক বিভাগ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২০ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০২২
তীব্র যানজট: গাড়ি কমানো ছাড়া উপায় দেখছে না ট্রাফিক বিভাগ

ঢাকা: ক্রমেই তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে রাজধানী ঢাকার যানজট। প্রায় প্রতিটি সড়কে দিনভর গাড়ির দীর্ঘ জটলায় অসহনীয় হয়ে উঠেছে জনজীবন।

নির্ধারিত কর্মঘণ্টার বাইরেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে অপেক্ষমাণ থাকা রাজধানীবাসীর এই দুর্ভোগের শেষ কোথায়?

এদিকে, ভোর থেকে প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত গাড়ির চাপ সামলাতে হিমসিম খাচ্ছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ। তারপরেও যানজটের মাত্রা থেকে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রণের বাইরেই। এ অবস্থায় সড়কে গাড়ির চাপ কমানো ছাড়া কোন উপায় দেখছেন না সংশ্লিষ্টরা।

তারা বলছেন, ধারণক্ষমতার কয়েকগুণ গাড়ি একসঙ্গে সড়কে বেরিয়ে এলে কোন উপায় প্রয়োগ করে লাভ নেই। তাৎক্ষনিকভাবে এ অবস্থায় যানজট কমাতে বা সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে সড়কে গাড়ি কমানোর কোন বিকল্প নেই।

ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা শহরে পর্যাপ্ত রাস্তা নেই। এর মধ্যে উন্নয়নকাজের কারণে অনেক সড়ক সংকুচিত হয়ে পড়েছে। যদি ধারণক্ষমতা না থাকে তাহলে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন গাড়ির রেজিস্ট্রেশন কেন দেওয়া হচ্ছে? পলিসি লেভেলে এটা নিয়ে গবেষণা করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ না নিলে এটা নিয়ন্ত্রণের কোন উপায় নেই।

তিনি বলেন, ট্রাফিক পুলিশ শুধুমাত্র ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাটাই দেখে। সড়ক দেখে আরেকটা সংস্থা, সড়কে সড়কে বিভিন্ন খোড়াখোড়ি করছে অন্য সংস্থা। অনেকে সমন্বয়ের কথা বলেন। কিন্তু কোন সমন্বয়েই কোন লাভ হবে না। যানজট কমাতে হলে সড়কে গাড়ি কমাতে হবে, নয়তো সড়ক বাড়াতে হবে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাফিক পুলিশের আরেক কর্মকর্তা বলেন, স্কুল শুরু কিংবা ছুটির সময়ে দেখবেন একজন ছাত্র একটি গাড়ি। এর বাইরে অফিসমুখী গাড়িতো রয়েছেই। আর গণপরিবহনে একটি গাড়িতে একসঙ্গে প্রায় ৫০ জন চলাচল করে। তাই সড়কে গাড়ি কমানো, অর্থাৎ ব্যক্তিগত গাড়ি কমিয়ে আনতে হবে।

ডিএমপি মোহাম্মদপুর ট্রাফিক জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) কাজী হানিফুল ইসলাম বলেন, ঢাকা শহরে সড়ক এমনিতেই কম। তার উপর এখন মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মতো মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। কোথাও কোথাও সুয়ারেজের লাইনের কাজ করতে সড়কে খোড়াখোড়ি রয়েছে। এমনসব সড়ক রয়েছে যেখানে আগে চার লেন গাড়ি চলাচল করতো, এখন দুই লেনও চলতে পারে না। তাহলে কম সড়কের মধ্যেও প্রায় ৫০ ভাগ সড়ক কমে গেলো।

উন্নয়ন কাজগুলো করারও সুযোগ দিতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দীর্ঘ প্রায় ২ বছর বন্ধের পর পুরোদমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলেছে। এ সময়টাতেও কিন্তু অনেক নতুন গাড়ি বেড়েছে। এখন সবকিছু খুলে দেওয়ায় সব গাড়ি একসঙ্গে সড়কে নেমে এসেছে। এজন্য স্কুল ও অফিসের সময়টাতে যানবাহনের চাপ বেড়ে যাচ্ছে।

উন্নয়ন কাজগুলো সম্পন্ন হলে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে মনে করছেন ট্রাফিক পুলিশের এই কর্মকর্তা।

ডিএমপির তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) সাহেদ আল মাসুদ বলেন, আমরা গাড়ির চাপ সামলাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। তীব্র গরমে দীর্ঘ সময় সড়কে থেকে আমাদের অনেক সদস্য অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। যানবাহনের তীব্র চাপের মধ্যেও আমরা স্বাভাবিক চলাচল ধরে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি, কিন্তু কতক্ষণ এটা ধরে রাখা যায়?

গাড়ি না কমালে এই যানজট নিয়ন্ত্রণের কোন উপায় নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, অনেকে যানজটের কথা বলছেন, কিন্তু আজকে অর্ধেক গাড়ি বের করার কথা বললে অনেকেই মানতে চাইবেন না। সড়কে গাড়ি কমালেই যানজটের ৮০ ভাগ সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে, আর বাকি যেগুলো আছে সেসব আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।

সড়কে গাড়ি কমানোর প্রস্তাব দিয়ে শনিবার (১৯ মার্চ) রাজধানীর উত্তরায় এক অনুষ্ঠানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, নম্বর প্লেটে যাদের জোড় সংখ্যা রয়েছে এমন গাড়ির চলবে জোড় তারিখের দিনে। বিজোড় দিনে বিজোড় সংখ্যার গাড়ি। এভাবে চললে রাজধানীতে যানজট কম হবে।

তিনি বলেন, রাস্তা আমার, কতগুলো গাড়ি চলবে সেই ক্ষমতা আমার নাই। তা হলে কীভাবে হবে? রাস্তা আমার আন্ডারে, ট্রাফিক পুলিশ আমার আন্ডারে না, তাহলে তো হবে না। রাজধানীর কোন রাস্তায় কী পরিমাণ গাড়ি চলাচল করে, কোন কোন রাস্তায় বেশি যানজট এসব বিষয়ে গবেষণা করে কার্যকর ট্রাফিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

রাজধানীর সড়কে পরিচালিত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এআরআই)-এর এক গবেষণায় দেখা যায়, রাজধানীতে যানজটের কারণে প্রতিদিন নষ্ট হচ্ছে এক কোটি ৯০ লাখ কর্মঘণ্টা। যানজটে নষ্ট হওয়া অতিরিক্ত সময়ের মূল্য গড়ে ঘণ্টায় ৭০ টাকা ধরে হিসাব করলে দেখা যায়, প্রতিদিন ক্ষতির পরিমাণ ১৩৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি শহরের আয়তনের কমপক্ষে ২৫ শতাংশ সড়ক থাকতে হয়। তবে ঢাকায় সড়ক রয়েছে সাত-আট শতাংশ। যদিও গাড়ি চলাচলের মতো রয়েছে মাত্র তিন-চার শতাংশ সড়ক।

ট্রাফিক বিভাগের তথ্য অনুযায়ী সড়কের কম করে হলেও ৩০ ভাগ বা তারও বেশি দখল করেছে অবৈধ পার্কিং এবং নানা ধরনের দখলদারিত্ব।

এদিকে, স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যানের (এসটিপি) হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে ঢাকায় প্রায় ১৫ ভাগ যাত্রী ব্যক্তিগত গাড়িতে যাতায়াত করেন। অথচ এই ব্যক্তিগত গাড়ির দখলে থাকছে ৭০ ভাগেরও বেশি রাস্তা।

বাকি ৮৫ ভাগ যাত্রী অন্য কোনো ধরনের গণপরিবহন ব্যবহার করেন। অর্থাৎ ৮৫ ভাগ মানুষের ব্যবহৃত গণপরিবহনে সড়কের মাত্র ৩০ ভাগ ব্যবহৃত হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৮ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০২২
পিএম/এনএইচআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।