ঢাকা: সুনামগঞ্জের শাল্লায় যুদ্ধে বিধ্বস্ত মানুষজনের জন্য ত্রাণ সহায়তা দিতে কাজ শুরু করেন স্যার ফজলে হাসান আবেদ। সেখানেই ১৯৭২ সালের ২১ মার্চ প্রতিষ্ঠা হয় বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিটির (ব্র্যাক)।
সেই সংস্থা এখন শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় বেসরকারি সংস্থায় পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের ১০টি দেশে এখন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে ব্র্যাক। বিশ্বখ্যাত ব্যাংলাদেশের এই প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক দেশে-বিদেশে সুবিধাবঞ্চিতদের স্বাবলম্বী করার কাজ আরও বেগবান করার অঙ্গীকার নিয়ে উদযাপন করলো তাদের ৫০ বছর পূর্তি।
সোমবার (২১ মার্চ) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র (বিআইসিসি) মিলনায়তনে ব্র্যাকের সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়।
দুই পর্বের এই অনুষ্ঠানে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সংস্থাটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাকের সাবেক কর্মীরা। সন্ধ্যায় দ্বিতীয় পর্বে উপস্থিত ছিলেন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ক্রীড়া, বিনোদন ও গণমাধ্যমের বিশিষ্টজনরা।
সন্ধ্যায় আয়োজনের শুরুতে ব্র্যাকের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাণী পাঠ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। এ সময় বাণী পাঠ করে তিনি বলেন, ‘বিগত ৫০ বছরে ব্র্যাক ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম, ঘরে ঘরে গিয়ে খাবার স্যালাইন বানানোর প্রক্রিয়া শেখানোর মাধ্যমে ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণ, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমানো, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদান এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে দারিদ্র্য দূর করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। ব্র্যাক উদ্ভাবিত উন্নয়নের বিভিন্ন উদ্যোগ ও মডেল আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। ’
আয়োজনে ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, ব্র্যাক ক্ষুদ্রঋণ, কুটিরশিল্পকে কেন্দ্র করে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা, মানবাধিকার, সড়ক নিরাপত্তা, অভিবাসন, নগর উন্নয়নসহ নানামুখী কার্যক্রমে ব্র্যাক ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশ ও দেশের বাইরে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা হিসেবে ব্র্যাকই প্রথম আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পা রেখেছে। বাংলাদেশসহ এশিয়া ও আফ্রিকার দশটি দেশের ১০ কোটিরও বেশি মানুষের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে আত্মনির্ভরতা অর্জনে কাজ করে চলেছে এই সংস্থা।
তিনি বলেন, ঝরেপড়া শিশুদের জন্য স্কুলের পাইলট প্রকল্প শুরু করে ব্র্যাক। পরবর্তীকালে এর ব্যাপক প্রসার ঘটে। আজ পর্যন্ত ব্র্যাকের স্কুলগুলো থেকে এক কোটি ৪০ লাখ শিশু মানসম্পন্ন প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে পরবর্তী ধাপে এগিয়ে গেছে। ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়। একই বছর ব্র্যাক ব্যাংকেরও সূচনা। ব্র্যাকের বিশ্বখ্যাত আলট্রা পুওর গ্র্যাজুয়েশন প্রাগ্রাম অতি দারিদ্র্য থেকে উত্তরণের পথ দেখায়। এই মডেল বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে যাত্রা শুরু করে ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনাল। বর্তমানে নগর দারিদ্র্য নিরসন এবং যুব জনগোষ্ঠীর দক্ষতা উন্নয়নে বিশেষভাবে কাজ করছে ব্র্যাক। স্মরণকালে দেশের সবচেয়ে বড় সংকট রোহিঙ্গা ও কোভিড-১৯ সংকটে সরকারের বৃহত্তম দেশীয় উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে কাজ করছে এই সংস্থা। সরকারের আর্থসামাজিক নীতি-কৌশল প্রণয়ন প্রক্রিয়াতেও আরও বেশি সম্পৃক্ত হয়েছে ব্র্যাক। ব্র্যাকের সকল কর্মসূচি, কার্যক্রম ও মডেল, সর্বোপরি ব্র্যাক ব্র্যান্ডটিই গড়ে উঠেছে নারীর ক্ষমতায়নকে কেন্দ্র করে। নারীর অন্তর্নিহিত সম্ভাবনার পূর্ণ বিকাশে কাজ করে চলেছে সংস্থাটি। ভবিষ্যতের সমস্যার ক্ষেত্রগুলোকে আগাম চিহ্নিত করা ও সমাধান নির্দেশনায় সুবিধাবঞ্চিত মানুষ, অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগী এবং সরকারের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যে কাজ চলছে, ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে।
আয়োজনে আরও উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বিক্রম কুমার দোরাইস্বামীসহ বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বিদেশি কূটনৈতিক, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দ, বিদেশি অতিথিসহ বিশিষ্টজনরা।
সন্ধ্যার আয়োজনে ছিল আলোচনা, বিভিন্ন কার্যক্রমের ভিডিও প্রদর্শন, উদ্যোক্তাদের গল্প, বিদেশিদের অনুভূতি আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। আগামী দিনের স্বপ্ন আর সম্ভাবনা নিয়েও কথা হয় অনুষ্ঠানে। রাজধানী ছাড়াও দেশে ব্র্যাকের বিভাগীয় অফিসগুলোতে সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপিত হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৪ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০২২
এইচএমএস/এমজেএফ