ঢাকা, রবিবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ঢাকা যাচ্ছেন মেহেরপুরের শতাধিক মৌসুমি কসাই

জুলফিকার আলী কানন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৯ ঘণ্টা, জুলাই ৮, ২০২২
ঢাকা যাচ্ছেন মেহেরপুরের শতাধিক মৌসুমি কসাই

মেহেরপুর: প্রতি বছরের মত এবারও কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে যেতে প্রস্তুত হচ্ছেন মেহেরপুরের শতাধিক পেশাদার ও অপেশাদার মৌসুমি কসাই।

কোরবানি করা পশুর গোশত কাটাসহ তা টুকরা করার কাজে ব্যবহৃত, দা, বটি, ছুরি, চাপাতি, কুড়াল বা অন্যান্য ক্ষুদ্র অস্ত্রগুলি ধার করার পাশাপাশি ও কাঠের গোলাকার কাঠ (স্থানীয় ভাষা খেইটি) প্রস্তুত করছেন কসাইরা।

তবে পেশাদার কসাইরা তাদের হেলপার হিসেবে একজন বা দুজন অপেশদার কসাইকেও সঙ্গে নিয়ে থাকেন। আগামীকাল ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবেন বলে জানিয়েছেন কসাইরা। একদিনের কসাই হিসেবে ঢাকায় যাবেন এলাকার পেশাদার ও অপেশাদার কসাইরা, বললেন গাংনীর গোপালনগর গ্রামের কসাই খোকন।

তিনি বলেন, এরা সবাই ঢাকার বুকের একদিনের কসাই। এলাকাতে সারাবছর বিভিন্ন ক্ষুদ্র পেশার সঙ্গে জড়িত থাকলেও তারা ঢাকায় গোশত তৈরির কাজ করেন কোরবানির দিনে। এরা একদিনের কসাই হলেও তাদের আয় কিন্তু কম নয়, দুই থেকে তিনজনের দল এক দিনে আয় করেন ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। কখনো কখনো তার চেয়ে বেশিও হয়, বাড়তি হিসেবে।  

গাংনীর উত্তরপাড়া এলাকার কসাই সোহাগ হোসেন, মারুফ আহম্মেদ বলেন, ঢাকার মানুষ তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী কোরবানি দেওয়ার জন্য গরু, ছাগল, উট দুম্বা, প্রস্তুত রাখেন। কোরবানির পশুকে কষ্ট না দিয়ে এবং পশুর চামড়া ভুলেও না কেটে সঠিক সাইজের গোশত প্রস্তুত করতে তাদের প্রয়োজন হয় প্রশিক্ষিত কসাইয়ের। এসময় চাহিদা বেড়ে যায় এসব কসাইদের। ফলে বাড়ে পারিশ্রমিক।  

চৌগাছা গ্রামের কসাই সাহেব আলী ও কালাম শাহ বলেন, প্রতিবছরই কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে এই এলাকা থেকে আমরা শতাধিক কসাই ঢাকাই যাই। এসময় কিছু অপেশাদার বা মৌসুমি কসাইদেরও সঙ্গে নিয়ে থাকি আমরা। ঢাকাতে ঈদের দিন কোরবানির পশু জবাইয়ের সংখ্যার তুলনায় পেশাদার কসাইয়ের সংখ্যা কম হওয়ায় এসব মৌসুমি কসাইদেরও চাহিদাও থাকে আকাশচুম্বি। এবার আমরা পশুর দাম অনুযায়ী পারিশ্রমিকও নির্ধারণ করে রেখেছি। পশুর দামের পাঁচ ভাগের এক ভাগ হবে কসাইয়ের মজুরি। এ দাম সকাল থেকে দুপুরের আগ পর্যন্ত। এর পর বেলা যত বাড়বে ততই কমবে তাদের মজুরি। পশুর দাম অনুযায়ী হাজারে ২০০ টাকা পারিশ্রমিক নেব।  

শিশিরপাড়া গ্রামের কসাই মহির উদ্দীন বলেন, ঢাকার বেশিরভাগ মানুষ ঈদের আগেই যার যার পছন্দ অনুযায়ী কসাই ঠিক করে রাখেন। সে ক্ষেত্রে সবাই চান ঈদের নামাজের পরপরই কোরবানি সেরে ফেলার। তাই কসাইয়ের চাহিদা সকালের সময়ে বেশি থাকে। কসাইয়ের দর বা পারিশ্রমিক নির্ভর করে কখন পশু জবাই হবে তার ওপর।  

অনেকদিন ধরে কসাইয়ের কাজ করেন গাংনী শহরের প্রশিক্ষিত কসাই আরিফ হোসেন। ঈদের সময় তাদের কদর ও মজুরি অনেক বেড়ে যায় জানিয়ে তিনি বলেন, কোরবানির দিন সকাল থেকেই আমাদের ব্যস্ততা শুরু হয়। সকালে কেউ গরু কোরবানি ও কাটাকাটি করতে চাইলে তাদের মোট পশুর দামের ওপর প্রতি হাজারে ২০০ টাকা দিতে হবে। এ টাকায় একজন কসাই গরু কোরবানি থেকে শুরু করে চামড়া ছাড়ানো, হাড় থেকে মাংস ছাড়িয়ে তা ছোট করে কাটা, হাড়গুলো ছোট ছোট করে কেটে দেওয়া, নাড়িভুড়ি পরিষ্কারসহ একেবারে সব কাজ করে দেবে। তিন থেকে চার মণ মাংস হবে, এমন একটা গরুর জবাইয়ের কাজ দুই জন কসাই এক ঘণ্টায় শেষ করতে পারেন বলেও জানালেন তিনি।  

কসাই ইনতাজুল ইসলাম জানান, মেহেরপুর সদর উপজেলার বারাদী, আমঝুপি, কইরাডাঙ্গা, শ্যামপুর উত্তরশালিকা, গাংনীর চেংগাড়া, সাহারবাটি বামন্দীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে শতাধিক কসাই এই ঈদ মৌসুমে যান ঢাকায়। তারা একদিন ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা ইনকাম করেই বাড়ি ফেরেন। কোরবানির আগের দিন পর্যন্ত হাট থেকে গরু কিনে গৃহস্তের বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া এবং তাদের খাওয়া দাওয়া পর্যন্ত করান। তাতে ১ থেকে দেড় হাজার টাকা পারিশ্রমকও পান।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৭ ঘণ্টা, জুলাই ০৮, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।