ঢাকা, শনিবার, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২৫ মে ২০২৪, ১৬ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

ফেনী নদীর পাড়ে দর্শনার্থীদের উচ্ছ্বাস 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৬ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০২২
ফেনী নদীর পাড়ে দর্শনার্থীদের উচ্ছ্বাস 

ফেনী: ঈদুল আজহার আমেজে ফেনী নদীর পাড়ে জমেছে প্রাণের মেলা। ভ্রমণপিপাসুদের উচ্ছ্বাসে প্রাণ ফিরে পেয়েছে সোনাগাজীর পর্যটন স্পটগুলো।

ঈদের দিন বিকাল থেকে নৈসর্গিক সৈন্দর্য্যের লীলাভূমি খ্যাত সোনাগাজীর কয়েকটি পর্যটন স্পটে হাজার হাজার ভ্রমণপিপাসুর পদচরাণায় হয়ে উঠেছে মুখরিত। দক্ষিণা বাতাসে গা এলিয়ে মনের সুখে প্রকৃতির কাছে নিজেকে বিলিয়ে দিচ্ছেন কেউ কেউ।  

আনন্দ-উল্লাসে প্রকৃতির ভালোবাসায় সিক্ত যেন ভ্রমণপিপাসুদের দল। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত প্রিয়জনদের নিয়ে ঘুরতে আসা পর্যটকদের মাঝে দেখা দিয়েছে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা।  

ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ছুটে আসছেন সব বয়সী নারী-পুরুষ ও শিশু-কিশোরেরা। বেশ জমে উঠেছে পর্যটন স্পটগুলো। দুপুরের প্রচণ্ড তাপদাহ আর বিকালের নির্মল বাতাসে পর্যটকদের যেন প্রাণ জুড়িয়ে নিচ্ছেন তারা। প্রচণ্ড গরমে কেউ কেউ লেবুর শরবত পান করে তৃষ্ণা মেটাচ্ছেন। কেউ কেউ নদীর পানিতে সাঁতার কাটছেন। আবার কেউ কেউ নৌকা ভাড়া করে নদীর এপার-ওপার পাড়ি দিচ্ছেন।

কিশোর, তরুণ ও যুবকরা ফুটবল খেলছেন দলে দলে। কেউবা আবার মনের সুখে গান ধরছেন একা একা। ক্ষণে ক্ষণে আবার কিশোরদের হৈ হুল্লোড় পর্যটকদের মনে ভীতির সঞ্চার করলেও পর্যটকদের নিরাপত্তায় পালা করে নিয়োজিত রয়েছেন পুলিশ সদস্যরা।  

সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ খালেদ হোসেন দাইয়্যান বলেন, শহর ছেড়ে পবিত্র ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে মানুষগুলো নাড়ির টানে নিজ গ্রামে ছুটে আসে। আবার প্রকৃতির মা খ্যাত উপকূলীয় উপজেলা সোনাগাজীতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসে হাজারো পর্যটক। তাই পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটি উপলক্ষ্যে সোনাগাজীর কয়েকটি পর্যটন স্পটে পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে পুলিশের বিশেষ টিম মোতায়েন করা হয়েছে।

আদর্শগ্রাম পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র, মুহুরী প্রজেক্ট পুলিশ ফাঁড়ি ও সোনাগাজী মডেল থানা পুলিশের সমন্বয়ে একাধিক টিম পর্যটন স্পটগুলোতে জননিরাপত্তায় কাজ করছেন। যার ফলে পর্যটন স্পটগুলোতে কোন প্রকার হয়রানি ছাড়া পর্যটকরা নির্বিঘ্নে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করছে। আর পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়ায় ঈদের ছুটিতে সোনাগাজীর পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যটকদের তিল ধারণের ঠাঁই নেই।

ঈদের দিন বিকাল থেকেই ভিড় বাড়তে থাকে পর্যটন স্পটগুলোতে। মঙ্গলবার ঈদের তৃতীয় দিনেও সে ভিড় অব্যাহত ছিল। পর্যটন স্পটগুলোর মধ্যে সোনাগাজীর মুহুরী প্রজেক্ট একটি অন্যতম দর্শনীয় স্থান। বর্তমানে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে প্রতিদিনই হাজার হাজার পর্যটক ভিড় জমাচ্ছেন।

এখানে মুহুরী সেচ প্রকল্পের ৪০ জলকপাট, বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মৎস্য ঘের, জোয়ার-ভাটার পানি এবং ফেনী নদীর দু'কূল বেয়ে নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতেই ছুটে আসছেন পর্যটকরা। দেশের সর্ববৃহৎ নির্মাণাধীন অর্থনৈতিক অঞ্চল 'বঙ্গবন্ধু শিল্প নগর'। এখানে গড়ে উঠছে অসংখ্য শিল্প কারখানা।

নয়নাভিরাম এই শিল্পাঞ্চল দেখতে ছুটে আসছেন দেশী-বিদেশী পর্যটকদের দল। ছোট ফেনী নদীর উপকণ্ঠে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় নির্মাণ করা হয়েছে মুছাপুর ক্লোজার। অর্থাৎ বন্যা ও জোয়ারের পানি নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। গড়ে তোলা হয়েছে কৃত্রিম লেক। রয়েছে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা ঝাউবাগান। জেগে ওঠেছে সবুজ ঘাসের চর। সবুজ ঘাসে বসে গল্পে মাতোয়ারা বন্ধুরা। নদীতে জোয়ার-ভাটার দৃশ্য, লেকে নৌকা-ট্রলার ও স্পিডবোট নিয়ে পর্যটকদের আনন্দ উল্লাস চোখে পড়ার মতো।  

ছোট নদীর ওপরে সাহেবের ঘাট নির্মাণের ফলে ফেনীর সোনাগাজী ও নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জবাসীর মাঝে রচিত হয়েছে সেতুবন্ধন। একসময়ের এ খরস্রোতা নদী পাড়ি দিতে গিয়ে ভেসে যাওয়া বহু প্রাণ আজও ফিরে আসেনি। মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এই নদীতে ২.৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণের ফলে নদীর দুই পাড়ে গড়ে উঠেছে প্রকৃতির এক লীলা ভূমি। নদীতে চলছে সারি সারি নৌকা।  

সেতুতে ও তার আশাপাশের কাশবনে কেউবা ছবি তুলছে গ্রুপ করে আবার কেউ তুলছে (সেলফি)। কেউ আবার নানা অঙ্গভঙ্গির আনন্দে মাতোয়ারা। নির্মল বাতাসে প্রশান্তির সিঁড়িতে বসে প্রিয়জনদের সঙ্গে কেউ কেউ গল্পে মেতেছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। সবাইকে যেন প্রকৃতির এই সৌন্দর্য হাতছানি দিয়ে ডাকছে। প্রকৃতির ডাকে যে সকল পর্যটকরা ছুটে যাচ্ছেন তারা যেন আনন্দে প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাচ্ছেন। বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যায়ও যেন তারা ঘরে ফিরতে নারাজ। রাত ১০টা অবদি চলছে পর্যটকদের প্রাণের উচ্ছ্বাস।

উপজেলার মতিগঞ্জ ইউনিয়নের দৌলত কান্দি গ্রামের প্রবাসী কবির খান বন্ধুদের নিয়ে গত তিন দিন ধরেই ছুটে গেছেন উপজেলার তিনটি পর্যটন স্পটে। পর্যটকদের ভিড়ে যেমনি তিনি বিমোহিত, তেমনি প্রকৃতির টানে তিনি যেন প্রকৃতির সাথেই মিলিয়ে যান। নির্মল বাতাস আর প্রকৃতির ভালোবাসা তাকে বাসায় থাকতেই যেন দিচ্ছে না। রাত পোহালেই ছুটে যান এসব পর্যটন স্পটে। তিনি বলেন, বিনোদন প্রেমীদের জন্য উপকূলীয় উপজেলা সোনাগাজীতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় কোন বিনোদন কেন্দ্র গড়ে ওঠেনি। অথচ অপার সম্ভাবনাময় সোনাগাজীতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় পর্যটন কেন্দ্র বা বিনোদন কেন্দ্র গড়ে উঠলে একদিকে সরকারের যেমন রাজস্ব আয় বাড়বে, অন্যদিকে পর্যটক বা বিনোদন প্রেমীদের নজর কাড়বে।  

শিক্ষা, ব্যবসা ও রেমিট্যান্সে অগ্রসর জেলা ফেনীর সর্ববৃৎ উপজেলা সোনাগাজী। এ উপজেলায় নজর কাড়া কয়েকটি পর্যটন স্পট থাকলেও সরকারি সরকারি বা বেসরকারি অর্থায়নে বাণিজ্যিক কোনো বিনোদন কেন্দ্র গড়ে ওঠেনি। ফলে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। পর্যটকদের অবকাশ যাপনে গড়ে ওঠেনি কোনো আবাসিক হোটেল।

উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক, পৌর মেয়র অ্যাড. রফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, সোনাগাজীর পর্যটন স্পটগুলো ঈদের ছুটিতে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের পদভারে মুখরিত। যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়নের ফলে সমগ্র দেশের মানুষদের সঙ্গে উপকূলীয় উপজেলা সোনাগাজীর মানুষদের সঙ্গে একটি সেতুবন্ধন তৈরি হয়েছে। সোনাগাজীতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণের জন্য সরকারের উচ্চ পর্যায়ে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। তাই তিনিও সরকারি অথবা বেসরকারি উদ্যোগে দ্রুত একটি পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণের জোর দাবি জানান।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম মঞ্জুরুল হক বলেন, এবারের ঈদের ছুটিতে মনোমুগ্ধকর আবহাওয়া ছিলো। হাজার হাজার মানুষ ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ছুটে আসেন সোনাগাজীর পর্যটন স্পটগুলোতে। পর্যটন স্পটগুলো ঢেলে সাজাতে এবং বিনোদন প্রেমীদের জন্য আরামদায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করতে বেশ কয়েকটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। নতুন নতুন পর্যটন স্পট তৈরির জন্যও চেষ্টা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০২২
এসএইচডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।