ময়মনসিংহ: পৃথিবীর প্রতিটি শিশুর জন্ম হয় প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে। কিন্তু ব্যতিক্রম ঘটেছে ময়মনসিংহের ত্রিশালে ট্রাকচাপায় মায়ের গর্ভ ফেটে জন্ম নেওয়া সেই নবজাতকের ক্ষেত্রে।
আজ সোমবার (১৮ জুলাই) এই নবজাতকের বয়স মাত্র তিন দিন। জন্মের পর থেকেই সে ময়মনসিংহ নগরীর লাবিব প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। কিন্তু সে জানে না তার জন্মের আগেই পরপারে চলে গেছেন তার বাবা-মা ও এক বোন।
তবে পৃথিবীর নির্মম নিষ্ঠুর বাস্তবতায় জন্ম নেওয়া এই নবজাতকের করুণ ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে এখনো বেঁচে আছে দাদা-দাদিসহ তার ১০ বছর বয়সী বোন জান্নাত ও সাত বছর বয়সী ভাই এবাদত।
বর্তমানে তারা ত্রিশালের রায়মণি গ্রামে দাদা-দাদির কাছে থাকলেও সব হারানোর শোকে নির্বাক সেই অবুঝ শিশু দুটিও। তাদের চোখে-মুখে অকূল শূন্যতা আর নিরব নিস্তব্ধতার ছাপ যেন দৃশ্যমান।
লাবিব প্রাইভেট হাসপাতালের পরিচালক মো. শাহজাহান জানান, বর্তমানে ওই নবজাতকের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানে রয়েছেন কমিউনিটি বেজড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. কামরুজ্জামান ও ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হাড় ও জোড়া রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সোহেল রানা।
তাঁরা নিয়মিত চেকআপ ও পর্যবেক্ষণ করছে শিশুটির। ফলে বর্তমানে তিন দিন বয়সী এই শিশুটি ভালো আছে। মাঝে মাঝে কান্নাকাটি করছে সুস্থ সবল শিশুর মতই।
কমিউনিটি বেজড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নার্স নিঝুম জাম্বির জানান, হাসপাতালের প্রসূতি মায়েদের বুকের দুধ পান করছে এই নবজাতক। বর্তমানে ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পাঁচ জন প্রসূতি মা তাকে পর্যায়ক্রমে দুধ খাওয়াচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
ডা. কামরুজ্জামান জানান, পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল ঘটনার মধ্য দিয়ে জন্ম নেওয়া ওই নবজাতকের বয়স আজ তিন দিন। আল্লহর রহমতে এখন সে ভালো আছে। নিয়মিত সে প্রসূতি মায়েদের বুকের দুধ খাচ্ছে, তার প্রস্রাব-পায়খানাও হচ্ছে স্বাভাবিকভাবে।
জানা যায়, গত শনিবার (১৬ জুলাই) বিকেল পৌনে ৩টার দিকে ত্রিশালের কোর্টভবন এলাকায় রাস্তা পার হওয়ার সময় ট্রাকচাপায় প্রাণ হারান অন্তঃসত্ত্বা রত্না বেগম (৩২), তার স্বামী জাহাঙ্গীর আলম (৪০) এবং তাদের ছয় বছরের মেয়ে সানজিদা।
এ সময় মালবাহী ট্রাকের একটি চাকা ওই অন্তঃসত্ত্বা নারীর বুকের ওপর দিয়ে চলে গেলে পেট ফেটে অলৌকিকভাবে জন্ম নেয় এক কন্যা সন্তান।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০২২
আরএ