ঢাকা, বুধবার, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২৯ মে ২০২৪, ২০ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

ব্যাংক কর্মকর্তার জমিতে স্থাপনা নির্মাণে বাধা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০২২
ব্যাংক কর্মকর্তার জমিতে স্থাপনা নির্মাণে বাধা

লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুর পৌরসভার সমসেরাবাদ এলাকায় মো. জহির নামে এক ব্যাংক কর্মকর্তাকে তার কেনা জমিতে স্থাপনা নির্মাণে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তার অভিযোগ, দাবিকৃত পাঁচ লাখ টাকা না দেওয়ায় পরিতোষ চন্দ্র দাসসহ কয়েকজন তাকে নানাভাবে হয়রানি করে আসছেন।

 

এ ঘটনায় জহির উদ্দিন সম্প্রতি সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি অঞ্চল সদর আদালতে চাঁদাবাজির মামলা করেন। এতে পরিতোষ চন্দ্র দাস ও তার স্ত্রী স্বপ্না রানী দাস এবং প্রশান্ত চন্দ্র দে নামে একজনকে আসামি করা হয়।  

মামলাটি সদর থানাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন আদালত। থানা পুলিশের তদন্তে চাঁদাবাজির ঘটনার সত্যতা উঠে আসে। গত ২৫ এপ্রিল সদর থানা পুলিশ আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। এছাড়া প্রধান আসামি পরিতোষ চন্দ্র দাসকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে জামিনে মুক্তি পেয়ে আবার ব্যাংক কর্মকর্তা জহির উদ্দিনকে হয়রানি করে চলেছেন তিনি।  

ভূক্তভোগী জহির উদ্দিন জেলার কমলনগর উপজেলার চরফলকন কৃষি ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি সাবেক স্কুল শিক্ষক।  

তিনি বলেন, ২০১৯ সালে আমি লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ৭৫ নম্বর সমসেরাবাদ মৌজায় ৪ শতাংশ জমি ফেরদৌসী বেগমের কাছ থেকে কিনেছি। যার জমাখারিজ খতিয়ান নম্বর ৪০৬২, দাগ নম্বর ১২২৩/১২৮৭। সম্প্রতি জমিটির সীমনা প্রাচীর নির্মাণ কাজ শুরু করলে একই এলাকার মৃত মনমোহন চন্দ্র দাসের ছেলে পরিতোষ চন্দ্র দাস আমার সঙ্গে ঝামেলা শুরু করেন। আমার জমিটি তাদের পূর্ব পুরুষের মালিকানাধীন বলে দাবি করেন তারা। আমি কাজ শুরু করলে তিনি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে কাজ বন্ধের নিষেধাজ্ঞা চেয়ে পর পর তিনটি মামলা করেন। মামলাগুলো সব খারিজ হয়ে যায়। আমার জমিতে কাজ চলাকালে গত ১১ ফেব্রুয়ারি পরিতোষ, তার স্ত্রী স্বপ্না রানী দাস ও তাদের আত্মীয় প্রশান্ত চন্দ্র দে জমিতে প্রবেশ করে সেখানে থাকা সাইনবোর্ড ভাঙচুর করেন এবং নির্মাণ সামগ্রী নষ্ট করে দেন। এতে আমার বেশ ক্ষতি হয়। পরে তিনি আমার কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। টাকা দিলে তারা আর কোনো ঝামেলা বা হয়রানি করবেন না বলে জানান।  

জহির উদ্দিনের অভিযোগ, ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে নিজেদের মালিকানা প্রতিষ্ঠা করতে না পেরে হয়রানি এবং চাঁদা দাবি করছেন। চাঁদা না দেওয়ার আমাকে বিভিন্ন হুমকি দিচ্ছেন।  

স্থানীয়রা জানান, উমাহরী নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ১৯৮৫ ফেরদৌসী বেগম নামে এক নারী ১৫ শতাংশ জমি কেনেন। তিনি আবার সে জমি থেকে চার শতাংশ জমি ব্যাংক কর্মকর্তা জহির উদ্দিনের কাছে বিক্রি করেন। সে জমিতে স্থাপনা নির্মাণ করতে গেলে বার বার হয়রানির শিকান হন জহির। জমি নিয়ে তারা আরও অনেককে হয়রানি করে আসছেন।

অভিযুক্ত পরিতোষ চন্দ্র দাসের স্ত্রী ও চাঁদা দাবির মামলার তিন নম্বর আসামি স্বপ্না রানী দাস বলেন, ১৯৮৫ সালে সমসেরাবাদ মৌজার ১২৬ শতাংশ জমি তার শাশুড়ি পারুল বালার সঙ্গে রামগতির চর সেকান্তর এলাকার ৩২ শতাংশ জমি এওয়াজ বন্টন করেন উমাহরী নামে তাদের এক আত্মীয়। তবে উমাহরীর দেওয়া দলিলটি ভুয়া ছিল, তাই আমার স্বামী ওই দলিল বাতিলের জন্য ২০১৪ সালে আদালতে মামলা দায়ের করেন। ২০১৮ সালে আদালতে মামলাটি খারিজ হয়ে গেলে আমরা আবার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করি। আপিলে আমাদের পক্ষে রায় দেন আদালত।

তবে আপিলে তাদের পক্ষে রায় হওয়ার কথা জানালেও রায়ের কাগজপত্র দেখাতে পরেননি তিনি।  

চাঁদা দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, জমিটি যেহেতু আমাদের, তাই জমির দাম বাবদ জহির উদ্দিন আমাদের পাঁচ লাখ টাকা দিতে বলেছি। কিন্তু আমরা চাঁদা দাবি করিনি।  

এদিকে গত বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) ব্যাংক কর্মকর্তা জহির উদ্দিন থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। এতে জমিতে কাজ করতে গেলে পরিতোষ চন্দ্র দাস ও তার লোকজন কর্তৃক জহিরের ওপর হামলার আশঙ্কা করেন। অন্যদিকে গত শুক্রবার (২২ জুলাই) সকালে জহির জমিতে কাজ করতে গেলে পুলিশের কাছে কাজ বন্ধের আবেদন দেন পরিতোষ। পরে পুলিশ গিয়ে সাময়িক কাজ বন্ধ করে দেন।  

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সদর থানা পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) ইসমাইল হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি যাতে না হয়, তাই আদালত কর্তৃক আপিলের রায়ের কপি হাতে না পাওয়া পর্যন্ত নির্মাণ কাজ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে বলেছি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪০২ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০২২
এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।