ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

দেশের সামষ্টিক পরিস্থিতি বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৩ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০২২
দেশের সামষ্টিক পরিস্থিতি বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন

ঢাকা: সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেছেন, দেশের সামষ্টিক পরিস্থিতি বর্তমানে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। এই চ্যালেঞ্জ সাহসিকতার সঙ্গে আমাদের মোকাবিলা করতে হবে এবং বেশ কিছু ক্ষেত্রে জনসাধারণকে ত্যাগ স্বীকার হয়তো করতে হতে পারে।

রোববার (২৪ জুলাই) সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ: কতটা ঝুঁকিপুর্ণ? শীর্ষক একটি মিডিয়া ব্রিফিং ও বিষয় ভিত্তিক আলোচনায় তিনি একথা বলেন। আলোচনার আয়োজন করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। অনুষ্ঠানে প্রারম্ভিক বক্তব্য উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।

মির্জ্জা আজিজ বলেন, ডায়াগনোসিস করাটা অপেক্ষাকৃত সহজ কিন্তু প্রেসক্রিপশন দেওয়াটা সহজ নয়। প্রেসক্রিপশন দেওয়ার ক্ষেত্রে একটা সমস্যা হচ্ছে একটা সূচকের ওপরে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে এমন ধরনের পদক্ষেপ নিলে আবার অন্য সূচকের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কাজেই যারা নীতি নির্ধারণ তাদের এই ট্রেড অফের ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে এবং তাদের এই ট্রেড অফগুলো কীভাবে ম্যানেজ করা যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।  

তিনি বলেন, কিছু কিছু বিষয় আছে যেটা এখানে উল্লেখ করা হয়নি সেটা আমি মনে করি এটা সামগ্রিক অর্থনীতির অপরিহার্য বিষয়বস্তু। বিশেষ করে ফাইনান্সিয়াল সেক্টরের কথা বলছি ব্যাংকিং খাতের পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক এটা আপনারা সবাই জানেন। ব্যাংকের যে সুদের হারের সীমা বেঁধে দেওয়ার ফলে বেসরকারি খাতে ঋণের ক্ষেত্রে যে প্রবৃদ্ধি প্রবাহ সেটা কিন্তু সংকুচিত হচ্ছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি জুলাই থেকে মে ২০২২ সালে বেসরকারি ক্ষেত্রে ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক ০৪ শতাংশ কিন্তু সরকার এখান থেকে অনেক বেশি মাত্রায় ঋণ নিয়েছে। সরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৭ শতাংশ। আমাদের দেশে ইনভেস্টমেন্ট জিডিপি রেশিও এখনো কম আছে এবং বেসরকারি খাতে যে বিনিয়োগ এটা মূলত ব্যাংকিং ফাইন্যান্সিং এর ওপর নির্ভরশীল। কেননা ক্যাপিটাল মার্কেট বা স্টক মার্কেট এখানে যথার্থ ভূমিকা পালন করতে পারছে না। সুতরাং এই যে বেসরকারি খাতে ঋণের যে প্রবৃদ্ধি ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের লাস্ট যে মনিটরি পলিসি সেখানে যে টার্গেট ছিল তার চাইতে কম। কাজেই এখন প্রশ্ন হচ্ছে সুদের যে সীমারেখা বেঁধে দেওয়া আছে এটা কতটুকু যৌক্তিক।

তিনি আরও বলেন, ইমপোর্ট গ্রোথ অত্যন্ত বেড়ে যাওয়ার ফলে রিজার্ভ অনেক কমে গেছে যদিও এক্সপোর্টগুলো ভালো আছে। ইমপোর্ট গ্রোথ বেড়ে যাওয়া এবং রেমিটেন্সের নেতিবাচক প্রবৃত্তি ২০২২ সালের জুলাই থেকে জুনে রেমিটেন্স রেট মাইনাস ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ। কাজেই এখানে আমাদের চেষ্টা করতে হবে রেমিটেন্সটা বাড়ানোর। আমরা জানি শুধু আড়াই শতাংশ ইনসেন্টিভ দেওয়া কার্যকরী হয়েছে তাতেও এই পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায়, এটা তেমন কার্যকর হয়নি। এখন রেমিটেন্স বাড়ানোর জন্য বিশেষ করে মধ্যমেয়াদি আমাদের চেষ্টা করতে হবে মার্কেট ডাইভার ভিকেশন বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য এবং মালয়েশিয়ার সঙ্গে যে সমস্যা সেটা এখনো সমাধান করা হয়নি সুতরাং মার্কেট ডাইভার ভিকেশন এবং স্কিন ইমপ্রুভমেন্ট করতে হবে। শুধু ইনসেন্টিভ দিয়ে এটা সম্ভব হবে না।

মির্জ্জা আজিজ আরও বলেন, ইমপোর্ট গ্রোথের ক্ষেত্রে আমার কয়েকটি প্রশ্ন রয়েছে এই যে ইমপোর্ট গ্রোথ তো আমরা দেখতে পাচ্ছি টাকার অংকে ও ডলারের অংকে অনেক বেড়েছে এখন এটার মধ্যে কতটুকু বৃদ্ধি প্রাইস ফ্যাক্টর নাকি কোয়ান্টিটি ফ্যাক্টর। আমার ধারণা কোয়ান্টিটি খুব একটা বাড়েনি কমেছে। মূল্যবৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক বাজারের কারণে ইমপোর্ট গ্রোথ বেড়ে গেছে ইমপোর্টের ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় হচ্ছে কতগুলো জেনুইন ইমপোর্ট কতটা ওভার ইনভয়েজের মাধ্যমে ইমপোর্ট হচ্ছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে যে অর্থ পাচার হয় এর সিংহভাগ ফরেন ট্রেডের মাধ্যমে ইনভয়েসের মাধ্যমে হয় সেটিও দেখার বিষয় রয়েছে। তবে এ ব্যাপারে সরকার বা এনবিআর এর পক্ষ থেকে খুব বড় ধরনের উদ্যোগ আমি দেখতে পাইনি। কাজেই ইমপোর্ট গ্রোথ আমাদের দেখতে হবে।

তিনি আরও বলেন, দারিদ্র্যসীমা এখনো অফিসিয়ালি স্টার্টিস ২০১৯ সালে রয়ে গেছে। তারপর দারিদ্র্যসীমার নিচে কত লোক গেছে সেটি বলা হয়নি। অনেক মন্ত্রীরা বলে থাকেন দারিদ্র্যসীমা আমাদের কমেছে ইত্যাদি কিন্তু এখানে অনেকেরই ধারণা দারিদ্র্যসীমা নিচে মানুষের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। যেটা ২০১৯ সালে ছিল ২০ শতাংশের মতো এটা এখন ৩০ শতাংশে চলে গেছে। প্রথম কথা হচ্ছে এই সময় সমস্যাটা সবার স্বীকৃতি দেওয়া দরকার এবং এটা সমাধানের দুটি রাস্তা একটা হচ্ছে কর্মসংস্থান সৃষ্টি দ্বিতীয়টা সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর বরাদ্দ বাড়ানো। যাতে সুষ্ঠুভাবে এটা বিতরণ হয় সেটাও নিশ্চিত করা।

অনুষ্ঠানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি, বহিঃখাত, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ, আর্থিক খাত এবং বাজেট ব্যবস্থাপনা বিষয়ে আলোচনায় আরও অংশ নেন পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ম তামিম, সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান এবং এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সিপিডি গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৩ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০২২
এসএমএকে/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।