ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ মে ২০২৪, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সরকারি খালে কংক্রিটের বাঁধ, অপসারণের নির্দেশ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০২২
সরকারি খালে কংক্রিটের বাঁধ, অপসারণের নির্দেশ

যশোর: যশোরের চৌগাছা উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের হাজারাখানা গ্রামের সরকারি খালে কংক্রিটের ঢালাই দিয়ে অবৈধভাবে দখল করে মাছ চাষ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বুধবার (২৪ আগস্ট) বিকেলে ভ্রাম্যমাণ আদালতে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় তিন দিনের মধ্যে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইরুফা সুলতানা।

একই সঙ্গে ওই জলাধারের মাছ ধরে বিক্রিলব্ধ টাকা সরকারি কোষাগারে জমার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জানা যায়, চৌগাছা উপজেলার স্বরুপদাহ ও নারায়নপুর ইউনিয়নের সীমানা নির্ধারণকারী বর্ষাগাড়ি খালটি দিয়ে স্বরুপদাহ ইউনিয়নের খড়িঞ্চা, আন্দারকোটা, চান্দারপোল, খড়িঞ্চা নওদাপাড়া, বাজে খড়িঞ্চা, বৃহৎ গ্রাম টেঙ্গুরপুর, নারায়নপুর ইউনিয়নের বৃহৎ গ্রাম হাজরাখানা ও বুন্দেলীতলা, পাশের মহেশপুর উপজেলার পাঁচবাড়িয়া, যদুনাথপুর, শ্যামনগর, মান্দারবাড়িয়াসহ ১৫/২০টি গ্রামের মাঠের অতিরিক্ত পানি চৌগাছার টেঙ্গুরপুর হয়ে কপোতাক্ষ নিষ্কাশন হয়। গত ২০২০-২১ অর্থ বছরে সরকারি একটি প্রকল্প দিয়ে প্রায় ১০ লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে খালের টেঙ্গুরপুর পাশের প্রায় ৫০০ মিটার খনন করা হয়। এরপরই সেটি চৌগাছা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের ভাগ্নে পরিচয়ে দখলে নেন জনৈক মাসুদ আহম্মেদ। তিনি আরও কয়েকজনকে নিয়ে খালের ওই অংশকে অবৈধভাবে দখল করে মাছ চাষ করে আসছিলেন। খালে স্থানীয়দের গোসল করতেও নামতে দেননা তিনি। খালের ওই অংশে তার মাছ চাষের সুবিধার্থে টেঙ্গুরপুর অংশের হাজরাখানা ব্রিজের নিচে কংক্রিটের ঢালাই করে বাঁধ দিয়েছেন। যেন পানি কোনভাবেই কপোতাক্ষ নদে না পড়তে পারে। এতে গত কয়েক বছর ধরে উজানের গ্রামের মাঠের বর্ষা মৌসুমের অতিরিক্ত পানি এসে অপেক্ষাকৃত ভাটির হাজরাখানা গ্রামের মাঠে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। গত বছর আমনের মৌসুমে এই জলাবদ্ধতায় ওই মাঠের প্রায় একশ একর জমির ধান নষ্ট হয়ে যায়। একই অবস্থার সৃষ্টি হয় চলতি বছর বোরো মৌসুমের শুরুতে অতিবৃষ্টিতে। তখনও হাজরাখানা ও আন্দারকোটা গ্রামের কয়েকশ একর জমিতে চাষের জন্য করা বীজতলা অতিরিক্ত জলাবদ্ধ হয়ে সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে সেসময় স্থানীয়রা তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত এবং মৌখিকভাবে অভিযোগও দেন। তবে সেসময় মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে তিনজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পরিবর্তন হওয়ায় আর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ওই খালে প্রতি মৌসুমেই সরকারিভাবে মাছ অবমুক্ত করা হয়। সেসময় উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকেন। অথচ তারা দখলমুক্ত করার কোনো ব্যবস্থা নেন না।

তবে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হরিদাস দেবনাথ টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, তারা অবৈধভাবে দখল করে মাছ চাষ করছেন। খাল খননের পর ওই স্থান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে হস্তান্তর করা হয়েছে। ইজারা দিলে শুধুমাত্র তারাই ইজারা দিতে পারেন।

চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইরুফা সুলতানা বলেন, সেখানে সেতুর নিচে অবৈধভাবে কংক্রিটের বাঁধ দেওয়া ছাড়াও কপোতাক্ষ নদের আরও কাছে অস্থায়ী পাটা বাঁধও দিয়েছেন তারা। তিন দিনের মধ্যে ওই অবৈধ কংক্রিটের বাঁধ ও পাটা-বাধ উঠিয়ে পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক করে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ইউনিয়নের নায়েবকে (ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা) ওই অবৈধ জলকরের মাছ ধরে বিক্রিলব্ধ টাকা সরকারি কোষাগারে জমার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, সরকারি খাল স্থানীয় জনসাধারণের জন্য। কোনোভাবেই সেখানে অবৈধ দখলদারদের মাছ চাষ করতে দেওয়া হবে না। প্রয়োজনে দখলদারদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০১০২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০২২
এমআরপি/কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।