ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ মে ২০২৪, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

রাজশাহী বিমানবন্দর সড়ক

উন্নয়নের গতি মন্থর, দুর্ভোগের মাত্রা বিস্তর!  

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০২২
উন্নয়নের গতি মন্থর, দুর্ভোগের মাত্রা বিস্তর!   ধীরগতিতে চলছে রাজশাহী বিমানবন্দর সড়ক মেরামত। ছবি: বাংলানিউজ

রাজশাহী: রাজশাহীর বিমানবন্দর সড়ক এখন দুর্ভোগ ও যন্ত্রণার অপর নাম! মন্থর গতিতে চলছে সড়ক উন্নয়ন কাজ। ফলে দীর্ঘায়িত হয়েছে মানুষের দুর্ভোগ।

একে তো ভাঙাচোরা সড়ক, তার ওপর সড়কজুড়ে পড়ে আছে নির্মাণ সামগ্রী। এর মধ্যে চলছে উন্নয়ন কাজ। সব মিলিয়ে ভোগান্তির যেন অন্ত নেই!

ডাবল থেকে ফোরলেন করা হচ্ছে- শহরের অতি গুরুত্বপূর্ণ এই আট কিলোমিটার প্রধান সড়ক। এই সড়ক দিয়ে গেলে ধূলোর আস্তরণে ধূসর হয়ে যায় যাত্রী ও যানবহন। আর বৃষ্টি হলে কাদা-পানিতে একাকার। গেল দুই বছর থেকে এই সড়কটির উন্নয়ন কাজ শুরু হয়েছে। সেই থেকে এখন পর্যন্ত ভোগান্তির চিত্র প্রায় একই।  সড়কের যেসব স্থানে সংস্কার কাজ শেষে কার্পেটিং হয়েছে সেখান কিছুটা স্বস্তি। আর বাকিটা পথই দুর্ভোগ ও অসহ্য যন্ত্রণার। প্রকল্পের মেয়াদে এখন হাতে কিছুটা সময় থাকায় কাজে গা ভাসিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠন। এই পুরো সড়কজুড়ে উন্নয়ন কাজ চলছে ঠিকই, শুধু নেই গতি!অথচ এই সড়ক দিয়ে প্রতি দিনই পুলিশ প্রটোকল নিয়ে যাতায়াত করছেন ভিআইপিরা। ব্যবহার করছেন আকাশপথের যাত্রীরা। এছাড়া চলছেন সাধারণ মানুষজনও। রাজশাহীর হযরত শাহ মখদুম (রহ.) বিমানবন্দর এই সড়ক ব্যবহার করছে রাজশাহী-নওগাঁ এবং জয়পুরহাট রুটের যাত্রীবাহী বাস, ট্রাক এবং অন্যান্য ভারি যানবাহন। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলাচল করছে সব। তাই এই সড়কে আসতেই বুক কাঁপছে সবার, গলা যায় শুকিয়ে। অসুস্থ রোগী, প্রসূতি নারী ও হাড় ও মাজার সমস্যায় ভুগছেন এমন মানুষের জন্য জমদূত হয়ে দাঁড়িয়েছে- রাজশাহীর সবচেয়ে জরুরি ও ভিআইপি এই মহাসড়ক।  

অবর্ণনীয় দুর্ভোগ ও কষ্ট সহ্য করে রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের এই আট কিলোমিটার সড়ক যাতায়াত করছেন ভুক্তভোগী মানুষ। রাজশাহী মহানগরীর রেলগেট থেকে উত্তরে থাকা শহরের প্রবেশ মুখ নওদাপাড়া আমচত্বর, বিমানবন্দর হয়ে পবার নওহাটা ব্রিজ পর্যন্ত বিস্তৃত মহাসড়কজুড়েই চলছে উন্নয়ন কাজ।

সড়কটির এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত ঘুরে পাওয়া গেছে ওই ভোগান্তির চিত্র। দেখা গেছে, মহানগরীর রেলগেট থেকে আমচত্বর পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার সড়কটির একপাশ সচল অন্যপাশ এখনও অচল। এর মধ্যে শালবাগানে বন বিভাগের সামনে থেকে দক্ষিণের বাজার পর্যন্ত এবং উত্তরে বিজিবি ক্যাম্প পর্যন্ত ফোরলেন সড়কটি সম্প্রসারণের পর গত দুইদিন থেকে কার্পেটিংয়ের কাজ চলছে। তবে এই অংশে এখনও কাজ সম্পন্ন হয়নি। ইট-পাথর আর বালু পড়ে থাকা সড়কের ওপর দিয়ে যানবাহন গেলেই ধুলায় ঢেকে যাচ্ছে পুরো এলাকা। এরপর শাহ মখুদম থানার মোড় থেকে পোস্টাল অ্যাকাডেমি, আমচত্বর থেকে বায়া বাজার, পবা উপজেলা চত্বর থেকে বিমানবন্দরের আগ পর্যন্ত সড়কে কেবল ইট-পাথর আার বালু ফেলে রাখা হয়েছে। তবে নওহাটা কলেজ মোড়ের চৌরাস্তাটির কার্পেটিং মাত্র তিন দিন আগে শেষ করা হয়েছে।

এদিকে নওদাপাড়া আমচত্বর মোড়ের আগের ডাবললেন সড়কটি কেটে ফোরলেনে প্রশস্ত করায় দুই প্রাান্তে উঁচু-নিচু সড়ক তৈরি হয়েছে। সেখানে গর্ত হয়ে শহরের এই প্রবেশমুখটি আরও সংকুচিত হয়ে পড়েছে। এই সংকুচিত সড়ক দিয়ে চার দিক থেকে যানবাহন শহরে ঢুকছে এবং বের হচ্ছে। এভাবে চলতে গিয়ে দিনের শুরুতে এবং শেষে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। নওদাপাড়া আমচত্বর থেকে নওহাটা পর্যন্ত অল্প কিছু স্থানই কার্পেটিং করা হয়েছে। বাকি সড়ক এখনও কার্পেটিং হয়নি। কিছু দিন আগে বিমানবন্দরের প্রধান ফটক বন্ধ করে সড়কের পাশের ড্রেন নির্মাণের কাজ করা হয়েছে। তাই এই গোটা সড়কজুড়েই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে নির্মাণ সামগ্রী। সড়কে চলাচলকারী মানুষ ছাড়াও স্থানীয়রা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।

মহানগরীর শাহ মখদুম এলাকার আসলাম উদ্দিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলানিউজকে বলেন, গেল দুই বছর থেকে এই সামান্য আট কিলোমিটার সড়কের কাজ চলছে। কাজ ভালোভাবে চললে এত দিন লাগে? আর কত দিন লাগবে কে জানে। তবে এভাবেই দিনের পর দিন কাজ চললে আশপাশের এলাকার মানুষের দুর্ভোগের আর শেষ থাকবে না। তাই বিষয়টি দ্রুত নজর দেওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন ওই ভুক্তভোগী। বায়া বাজারের রায়হান আহমেদ নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, রিকশা ও মোটরসাইকেল নিয়ে এই সড়ক দিয়ে যাওয়ার উপায় নেই। খরা মৌসুমে এই সড়ক দিয়ে গেলে ধুলো দিয়ে গোসল করার মতো অবস্থা দাঁড়ায়। আর বৃষ্টি হলে কাদা-পানিতে একাকার হতে হয়। এভাবে আর কত দিন? এই সড়ক ব্যবহার করে মানুষের ফুসফুস নষ্ট হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। স্থানীয়দের অনেকেই শ্বাসকষ্টে ভুগছে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) বলছে, ফোরলেন সড়ক উন্নয়নের কাজ চলছেই। করোনার কারণে কিছু দিন কাজ বন্ধ ছিল। এপরপর আর বন্ধ হয়নি। ডাবল মহাসড়কটিকে ফোরলেনে উন্নীতের কাজ শুরু হয়েছিল ২০২০ সালের জুনে। চারটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন প্যাকেজে কাজ করছে।  তবে আগামী জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ আছে। এখন নির্মাণ সামগ্রীর দামও বেশি। তাই হাতে সময় থাকায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো একটু ধীরেসুস্থে কাজ করছে। এজন্য কিছুটা ধীরগতি তারাও লক্ষ্য করেছেন।

কিন্তু উন্নয়ন কাজ শুরু হলে একটু দুর্ভোগ হবেই বলে মন্তব্য করেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) রাজশাহীর সড়ক উপবিভাগ-১-এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোহা. নাহিনুর রহমান।  

তিনি বলেন, কেবল রাজশাহী নয়, সবখানেই উন্নয়ন কাজে দুর্ভোগ বাড়ে। আর ডাবল থেকে ফোরলেন সড়ক করা হচ্ছে। সময় তো লাগবেই। আর প্রকল্পের মেয়াদ আছে। তবে এরপরও তারা সজাগ রয়েছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ হবে। হয়তো নির্ধারিত সময়ের আগেই কাজ সম্পন্ন হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০২২
এসএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।