ঢাকা, সোমবার, ২১ পৌষ ১৪৩১, ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৫ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

লাল শাপলার বিল ভ্রমণে বাধ সেধেছে ভাঙাচোরা সড়ক

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২২
লাল শাপলার বিল ভ্রমণে বাধ সেধেছে ভাঙাচোরা সড়ক

বরিশাল: অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছড়ানো লাল শাপলার বিলে পর্যটকদের ভিড় বাড়ছে প্রতিনিয়ত। সরকারি ছুটির দিনসহ সপ্তাহের সাত দিনেই পাখিডাকা  ভোর থেকে পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ও উজিরপুর উপজেলার সাতলার বিস্তৃর্ণ লাল শাপলার বিল এলাকা।

তবে শাপলার বিলে পৌঁছাতে উজিরপুর অংশের সড়কের বেহাল দশা পর্যটকদের হতাশ করছে প্রতিনিয়ত। ভাঙাচোরা সড়ক দিয়ে কষ্ট করে শাপলার বিলে যেতে অনীহা সৃষ্টি হচ্ছে সৌন্দর্যপিপাসু পর্যটকদের মাঝে।

ঝালকাঠি সদরের বাসিন্দা ও কলেজছাত্র জসিম উদ্দিনের মতে, শাপলার বিলে পৌঁছানোর সড়কটি সংস্কার করা না হলে ভবিষ্যতে পর্যটকরা বিমুখ হবে। ফলে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠা ব্যবসায়িক কার্যক্রমগুলো মুখ থুবেড়ে পড়বে।



জসিমের বন্ধু জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা ঝালকাঠির নবগ্রাম থেকে উজিরপুর সদর হয়ে সাতলার শাপলার বিলে এসেছি। কিন্তু উজিরপুরের ডাক বাংলোর মোড় থেকে সাতলা পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন স্থান ভাঙাচোর, খানাখন্দে ভরা। এর মধ্যে চেরাগআলী স্ট্যান্ডের পর থেকে হারতা পর্যন্ত নির্মাণাধীন সড়কটিতে মাসের পর মাস ধরে ভাঙা ইট ফেলে রাখা হয়েছে। এতে করে কোনো যানবাহন নিয়েই স্বস্তিতে সাতলার বিলে আসা যাচ্ছে না। আবার আগৈলঝাড়া হয়ে সাতলার বিলে আসতে হলে উজিরপুরের থেকে দ্বিগুণ পথ পাড়ি দিতে হয়। ফলে ভোগান্তি হলেও মানুষ উজিরপুরের সড়কগুলো বেছে নেয় সাতলার শাপলা বিলে আসার জন্য।

মুড়িবাড়ি বাজার সংলগ্ন শাপলার বিল ভ্রমণে আসা সাবিহা বলেন, শাপলা বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এখানে খুব সকালে আসতে হয়। তাই অন্ধকার থাকতে বরিশাল থেকে থ্রি-হুইলারে চেপে রওয়ানা দিয়েছে। উজিরপুর অংশের সড়কের এতই বেহাল অবস্থা, মনে হয়েছে নেমে পায়ে হেঁটে যাই। তারপরও খুব কষ্ট করে এখানে পৌঁছেছি। তবে পাখিডাকা ভোরে লাল শাপলার এই বিলে ঘুরে বেড়িয়ে কতটা যে মুগ্ধ হয়েছি বলে বোঝাতে পারবো না। আমরা যারা এখানে ঘুরতে এসেছি তারা সবাই পথের কষ্ট ভুলে গেছি!



মুড়িবাড়ি পর্যটক পয়েন্টের নৌকার মাঝি সাজ্জাদ জানান, এ পয়েন্টে বর্তমানে ২৯টি ছোট-বড় কাঠের নৌকা রয়েছে। যেগুলো প্রতিদিন পর্যটকদের নিয়ে লাল শাপলার বিলে ঘুরে বেড়ায়। স্বাভাবিক দিনে পর্যটক কিছুটা কম থাকলেও ছুটির দিনে প্রচুর ভিড় থাকে। তখন তাদের মতো আশপাশের ১০-১২টি পয়েন্টেও পর্যটক নৌকার মাঝিরা ব্যস্ত সময় পার করে। তবে শাপলার এ বিলে আসার সড়কের বেহাল দশা নিয়ে সব পর্যটকদেরই অভিযোগ রয়েছে। অনেকেই সড়কের জন্য ভবিষ্যতে না আসার কথা বলে যান। বেহাল সড়কের কারণে বিগত বছরগুলো তুলনায় পর্যটকের সংখ্যা কমেছে বলে জানান এই মাঝি।

স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী সুজন হাওলাদার বলেন, ভাঙা সড়কের কারণে বাসসহ বড় ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে থ্রি-হুইলারসহ প্রাইভেট যানবাহন নিয়ে এখানে আসতে খরচ বেড়ে যাচ্ছে পর্যটকদের। এর ওপর পথজুড়ে শারীরিক কষ্ট তো হচ্ছেই। এ কারণে এ বছর পর্যটকদের চাপ কম। অনেক দিনই লক্ষ্য করেছি, শাপলার বিলের বিভিন্ন পয়েন্টে নৌকা নিয়ে মাঝি বসে আছেন কিন্তু পর্যটক নেই। আবার পর্যটক বাগাতে গত বছর যেখানে ৩০০ টাকা নৌকা প্রতি ভাড়া আদায় করা হতো, এবার সেখানে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে।

ভ্যানচালক কিরণ বলেন, হারতা বাজার থেকে চেরাগআলী স্ট্যান্ড হয়ে ধামুরা সড়কটির সংস্কারের কাজ শুরু হয় চলতি বছরের শুরুর দিকে। কিন্তু ছয় মাস ধরে ইটভাঙা ফেলে রাখা হলেও সড়কটিতে পিচ ঢালাই দেওয়া হচ্ছে না। এছাড়া সাতলা থেকে হারতা, চেরাগআলী স্ট্যান্ড থেকে ডাকবাংলো মোড় অথবা ধামুরা পর্যন্ত সড়কের বিভিন্ন স্থান ভাঙাচোরা থাকায় মানুষ এ পথে যানবাহনের থেকে হাঁটতে বেশি পছন্দ করে। তারপরও দূরত্বের কারণে মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত ভ্যান, অটোরিক্সা, টমটম, সিএনজি বা মাহিন্দ্রায় উঠছেন তাদের শারীরিক কষ্ট ভোগ করতে হয়, পরবর্তী কয়েকদিন শরীরে ব্যথা থাকে।  ভাঙা সড়কে যানবাহন মেরামত করতে করতে আমাদের নিজেদের রোজগারও কমে যাচ্ছে।



তবে শিগগিরই সড়ক সংস্কারের কাজ শেষ হবে এবং সংস্কার হয়ে গেলে ভোগান্তি থেকে স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকরা রক্ষা পাবে বলে জানিয়েছেন হারতা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অমল মল্লিক ও সাতলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার।

এ বছর বিলে শাপলা তুলনামূলক কম দেখা গেলেও কিছু কিছু জায়গায় বিস্তৃর্ণ এলাকাজুড়ে লাল শাপলার দেখা মিলেছে। সেসব জায়গার পাশের সড়কে দাঁড়িয়েও যতদূর চোখ যাবে, সবুজের মাঝে রক্তিম আভা হাতছানি দিচ্ছে। বিলের কালচে পানিতে সবুজ পাতার ওপর মাথা উঁচু করে সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে লাল শাপলা। এর মাঝেই দেখা মিলতে পারে সাদা আর বেগুনি শাপলা ফুলের। আবার তার মাঝেই সাদা বক, পানকৌড়ি, মাছরাঙ্গা, ফিঙে, শালিক, দোয়েল, চড়ই, কাঠঠোকরাসহ বিভিন্ন ধরনের দেশীয় প্রজাতির পাখির কলকাকলিও শোনা যায়। ফেরার পথে এই বিলের দেশীয় প্রজাতির মাছও কিনছেন পর্যটকরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২২
এমএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।