ঢাকা, শনিবার, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২৯ জুন ২০২৪, ২১ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

মাদারীপুরে গ্যাং কালচারে জড়িয়ে পড়ছে কিশোররা

ইমতিয়াজ আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০২২
মাদারীপুরে গ্যাং কালচারে জড়িয়ে পড়ছে কিশোররা ফেসবুক থেকে নেওয়া।

মাদারীপুর: মাদারীপুরে জেলার সর্বত্র কিশোরদের মধ্যে গ্যাং কালচার বাড়ছে। মোটরবাইক নিয়ে মহড়া, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশপাশে দলবেঁধে আড্ডা দেওয়া দিন দিন বাড়েছে।

নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে পরস্পরের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে। তুচ্ছ কারণে মারধরের ঘটনাও ঘটছে বেশ। কিশোর বয়সীদের এরূপ উগ্রতায় শংকিত সাধারণ মানুষ, স্কুলগামী মেয়ে শিক্ষার্থীরা!

জানা গেছে, জেলার প্রায় সব জায়গাতেই দিন দিন তৈরি হচ্ছে কিশোর গ্যাং। স্কুলের নবম-দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক শ্রেণির কিশোরদের মধ্যে বখাটেপনা বাড়ছে। দুই/একজনের মোটরসাইকেল থাকলে তাদের ঘিরে তৈরি হচ্ছে দল। আড্ডা দেওয়া, ধুমপান, দ্রুতগতি ও উচ্চ শব্দের হর্ণ বাঁজিয়ে মোটরসাইকেল চালানো এদের প্রথায় পরিণত হচ্ছে। এদের ঘিরে বাড়ছে সংঘাত, অপরাধ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ অক্টোবর মাদারীপুর জেলার শিবচরে জোড়ে হর্ণ বাজিয়ে মোটরসাইকেল চালানোর প্রতিবাদ করায় সরকারি বরহামগঞ্জ কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী হাসিব মাহমুদ দিপুকে রাস্তা থেকে তুলে নেয় কিশোর গ্যাং-এর সদস্যরা। পরে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে আহত করে উপশহর এলাকায় ফেলে রেখে যায়। রাহুল, ফাহাদ, হামজা ও আব্দুলাসহ বেশ কয়েকজনের নামে অভিযোগ দেওয়ার সাতদিন পরে মামলা হলেও এখনো গ্রেফতার হয়নি কোনো আসামি। ওই মারধরের ঘটনা ভিডিও করে টিকটক বানিয়ে নিজেদের আইডিতে প্রচারও করে কিশোর গ্যাং এর সদস্যরা। নিজেদের আধিপত্যকে জাহির করতেই মারধরের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়ায় বলে জানা গেছে।

এদিকে গত ৫ নভেম্বর জেলা শহর থেকে বাড়ি ফেরার পথে হামলার শিকার হন সদর উপজেলার দক্ষিণ দুধখালীর দিনমজুর শামীম আকন। আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে কথা কাটাকাটির জেরে পূর্ব রাস্তি এলাকার শাকিব হাওলাদার, রমিজ ও তুষারসহ গ্যাং-এর সদস্যরা তাকে হাতুড়িপেটা করে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

জানা গেছে, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে এই কিশোর গ্যাং-এর সদস্যরা নিজেদের পরিচিতি বাড়াতে মারামারি ও সংঘর্ষের ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমন বেশকিছু ভিডিও ভাইরালও হয়েছে ফেসবুকে। এই ভিডিও দেখে অনেকের মধ্যে কিশোর-তরুণদের গ্যাং কালচার নিয়ে বিরাজ করছে ভয় আর আতঙ্ক।

শিবচরের আহত শিক্ষার্থী হাসিব মাহমুদ দিপু বলেন, কোনো শত্রুতা ছিল না ওদের সঙ্গে। শুধুমাত্র মোটরসাইকেলে জোড়ে হর্ন বাজানোর প্রতিবাদ করায় আমার ওপর হামলা চালানো হয়। ৭-৮ জন মিলে লোহার রড দিয়ে মাথায় আঘাত করে।

দিনমজুর শামীম আকন বলেন, দুধখালী এলাকায় ঘুরতে গিয়ে প্রথমে কিশোর গ্যাং-এর সদস্য শাকিব হাওলাদার, রমিজ, তুষার ও তাদের বন্ধুদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। এরই জেরে শহরের কাঠপট্টি এলাকায় আমার ওপর ওরা হামলা চালায়। সবাই মিলে আমাকে হাতুড়িপেটা করে। পরে চিৎকার চেচামেচির একপর্যায়ে রাস্তার ওপর ফেলে রেখে পালিয়ে যায় ওরা।

এদিকে জেলার প্রত্যন্ত এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে ও আশপাশে বাড়ছে এদের আড্ডা। স্থানীয় বখাটেদের ছত্রছায়ায় বিভিন্ন এলাকার বখাটে কিশোর-তরুণ এসে দলবদ্ধ হয়ে আড্ডা দেয় এবং স্কুলগামী ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করে বলে অভিযোগ রয়েছে।  

অল্প বয়সে স্মার্টফোন ও মোটরসাইকেল পেয়ে এসব কিশোরদের মধ্যে বাড়ছে উগ্রতা। কিশোর-তরুণদের এসব উগ্রতা বা গ্যাং কালচার দেখে ছোটরা কিশোর বয়সে এসে তাদের সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে বলে স্থানীয় সূধীজনেরা জানান। আইনের মাধ্যমে এসব কিশোর গ্যাংদের প্রতিহত করার দাবি তোলেন তারা।

মাদারীপুর পুলিশ সুপার মাসুদ আলম জানান, এসব অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। অভিভাবকদের পাশাপাশি স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে সামাজিক আন্দোলন ও কাউন্সিলের মাধ্যমে কিশোর গ্যাং-এর দৌরাত্ম্য কমিয়ে আনা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১২০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।