অ্যাসারো উপজাতির চারজন ‘কাদা পুরুষ’ সিডনির অস্ট্রেলিয়ান জাদুঘরের একটি নতুন প্রদর্শনীতে অংশ নিয়ে নিজেদের ঐতিহ্যবাহী মুখোশ ও তা তৈরির কলা-কৌশল উপস্থাপন করেছেন।
পাপুয়া নিউ গিনির (পিএনজি) পূর্ব উচ্চভূমির বাসিন্দা এই অ্যাসারো পুরুষরা তাদের এ পৈশাচিক মুখোশের জন্যই সুপরিচিত।
চার কাদা পুরুষ এ ভূতুড়ে মুখোশ পরে নিজেদের প্রদর্শন করেন। সঙ্গে তাদের ত্বক ছিল সাদা রঙে আঁকা এবং হাতে ছিল দীর্ঘায়িত বাঁশ।
এই কাদা পুরুষরা আগে কখনোই পাপুয়া নিউ গিনির পাহাড় ত্যাগ করে অন্য কোথাও যাননি। সেই তারাই অস্ট্রেলিয়ান জাদুঘরে এসে সাতদিন বসবাস করে প্রদর্শনীতে অংশ নেন।
‘আবাসিক শিল্পীদের’ এক সপ্তাহের এ প্রর্দশনীটি স্থায়ী ‘কাদা পুরুষদের’ নতুন একটি প্রদর্শনীর সূচনা- জানিয়েছে জাদুঘর কর্তৃপক্ষ।
জাদুঘর কমিশনের ক্লিনিট বেরি পাপুয়া নিউ গিনির পূর্ব পার্বত্য অঞ্চলে গিয়ে অ্যাসারো মুখোশ শিল্পীদের খুঁজে বের করে তাদেরকে প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণে আগ্রহী করে তোলেন। পাপুয়া নিউ গিনির গোরোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই প্রশাসক এর মধ্য দিয়ে অন্য শিল্পীদেরও মুখোশ তৈরিতে উদ্বুদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। তাদেরই একজন ইয়ান লয়েড নিউ বাউর এ মুখোশ এবং এর পেছনের পুরুষদের সম্পর্কে জানতে পেরেছেন সিডনি জাদুঘরে এসে।
কাদা পুরুষদের মুখোশ তৈরি লিখিত কোনো ইতিহাস নেই। তবে, চার প্রজন্ম ধরে অ্যাসারোরা এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত বলে মনে করা হয়।
মিস বেরি মাস্ক উৎপত্তির গল্প সম্পর্কে অনুসন্ধান করে তা জানিয়েছেন অন্যদের। তিনি বলেন, ‘বিয়ের সময় অ্যাসারোরা তাদের ঐতিহ্যগত পোশাকগুলো পরতেন। কিন্তু একজন অ্যাসারো পুরুষের বিয়ের কোনো পোশাক ছিল না। তাই তিনি একটি পুরনো একটি স্ট্রিং ব্যাগ নিয়ে তার চোখের জন্য দু’টি গর্ত কাটেন। ব্যাগটি তিনি কাদায় চুবান এবং কাদা দিয়ে তার চামড়া আচ্ছাদিত করেন’।
‘এটিই তার বিয়ের পোশাক ছিল। কিন্তু যখন তিনি বিয়ের জন্য যান, অতিথিরা ভেবেছিলেন, তিনি ভূত ছিলেন। তাই বিয়ের উৎসব উদ্যাপনের পরিবর্তে তারা সবাই পালিয়ে যান’।
মিস বেরি আরও বলেন, ‘বিয়ের অতিথিদের এ প্রতিক্রিয়ায় ওই অ্যাসারো পুরুষের মধ্যে একটি নতুন ধারণা আসে যে, এ মুখোশ পরে প্রতিবেশী একটি উপজাতির সঙ্গে চলমান দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে বিজয় অর্জন করতে পারেন তারা’।
‘তিনি তার ভাই ও বন্ধুদের মুখোশ পরে ও কাদায় নিজেদের আচ্ছাদিত করে ছদ্মবেশে যুদ্ধের পরিকল্পনা জানান। তখন তারা কাদায় নিজেদের আবৃত করে ও মুখোশ পরে প্রতিবেশী উপজাতিদের আক্রমণ করলেন। শত্রুরা ভাবলেন, ভূত আসছে এবং তারা তারা কোনো তীর না ছুড়ে ও অগ্নিসংযোগ না করেই দৌঁড়ে দূরে পালিয়ে গেলেন। এভাবেই অ্যাসারোরা যুদ্ধে জিতে যান এবং সেই থেকে মুখোশ পরে ‘কাদা মানুষ’ হওয়ার ঐতিহ্যের সূচনা ঘটে’।
জাদুঘর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এ মুখোশ ও কাদা মানুষদের স্থায়ী প্রদর্শনী ভবিষ্যতে দুই দেশের জনগণের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের উন্নতি করবে।
জাদুঘরের সংগ্রহ কর্মকর্তা ইভন ক্যারিলো হাফম্যান বলেন, অস্ট্রেলিয়ার টরেস স্ট্রেইট দ্বীপ থেকে মাত্র ৪৫ মিনিটের হাঁটা পথ পাপুয়া নিউ গিনি। কিন্তু আমাদের অধিকাংশই এটা সম্পর্কে খুব কমই জানি’।
‘আর মুখোশ তৈরির এ সপ্তাহব্যাপী প্রদর্শনী আমাদের ঘনিষ্ঠ করেছে। তারা এই সম্পর্ককে ফলপ্রসু করে দেখিয়েছেন’।
মুখোশ তৈরির তরুণ শিক্ষার্থী রিলে স্মিথ ‘আজ এখানে আসার আগে পর্যন্ত আমি কাদা পুরুষদের সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। কিন্তু এখন আমি জানি যে, তারা নিউ গিনির একটি প্রত্যন্ত অংশে বাস করেন। এবং তাদের দেড় ঘণ্টা হেঁটে গিয়ে অ্যাসারো নদী থেকে মুখোশ তৈরির বিশেষ কাদামাটি শুকনো ও ফাঁটল বিহীন অবস্থায় সংগ্রহ করতে হয়’।
প্রদর্শনীতে আসা মুখোশ পুরুষরা মুখোশ তৈরির কলা-কৌশল দেখান ও শেখান, ঐতিহ্যবাহী কাদা-মাটির সজ্জায় নিজেদেরকে উপস্থাপন এবং তাদের যুদ্ধ সরঞ্জাম প্রদর্শন করেন।
চারজনের একজন ২৯ বছর বয়সী কৃষক কোরির সঙ্গে কোমুনিভ গ্রামে তাদের ইতিহাস অনুসন্ধানকারী মিস বেরির প্রথম যোগাযোগ হয়েছিল। এ দলের সবচেয়ে বয়স্ক সদস্য জিম, যদিও তিনি তার প্রকৃত বয়স জানেন না। আর সর্বকনিষ্ঠ সদস্য কালোর বয়স ১৯ বছর।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ০২, ২০১৬
এএসআর/