বিজ্ঞানীরা আফ্রিকা থেকে ৩৮ লাখ বছর আগের উটপাখির ডিমের খোসা খুঁজে পেয়েছেন, যেটিতে প্রোটিন সংরক্ষিত।
গবেষকরা ডিমের খোসার মধ্যে আবদ্ধ প্রোটিন বিশ্লেষণ করে বলেছেন, এই জৈবিক বিল্ডিং ব্লক থেকে যেকোনো ডিএনএ’র চেয়ে ৫০ বার পর্যন্ত পুরনো জিনগত তথ্য দিতে পারে।
গবেষক দলটি জানান, এই প্রোটিন সংরক্ষিত থাকার কারণ, সেগুলো ভূপৃষ্ঠের খনিজে আবদ্ধ ছিল।
গবেষণা দলের প্রধান ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ম্যাথু কলিন্স জানান, এ আবিষ্কারের মূল দিক হচ্ছে, নিরক্ষীয় আফ্রিকার একটি খুব গরম পরিবেশে ৩ দশমিক ৮ মিলিয়ন বছর ধরে এখানে প্রোটিন সংরক্ষিত।
উদাহরণ দিয়ে তিনি আরও বলেন, আর্কটিকে পাওয়া হিমায়িত বর্জ্যের ডিএনএ বিশ্লেষণ করে আমরা ৭ লাখ বছর আগে ফিরে যেতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু আফ্রিকায় মানুষের বিবর্তন তার চেয়েও অনেক বেশি এবং উচ্চ তাপমাত্রায় এর উপজাত সেখানে সংরক্ষিত হয়েছে।
গবেষকদের ধারণা, এ প্রোটিন আরও ভালোভাবে টিকে থাকতে পারতো, যদি সেগুলো কঠিন পৃষ্ঠতলে আবদ্ধ থাকতো। তাই তারা প্রাচীন ডিমের খোসা সম্পর্কে তাঞ্জানিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার বেশি চর্চিত সাইট থেকে তত্ত্ব সংগ্রহ করে তার সঙ্গে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছেন।
উটপাখির ডিমের খোসার টুকরা আফ্রিকায় প্রচুর পাওয়া যায়। এবং প্রায়ই প্রত্নতাত্ত্বিক ও প্যালাইন্টোলজিক্যাল সাইটগুলোতে সেগুলো দেখা যায়।
প্রাচীনতম আধুনিক মানুষ সেগুলো পানি বহন, এমনকি গহনা তৈরির কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহার করতেন।
খোসা থেকে সম্পূর্ণ প্রোটিন ক্রম ভালোভাবে আহরণের জন্য গবেষক দলটি শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকর্মীদের সঙ্গে একটি কম্পিউটার বেজের উন্নয়ন করেছেন। তারা গণনা করে দেখেছেন, প্রোটিন ক্রম বেশি সময় ধরে টিকে থেকেছে, যখন তারা খনিজ পৃষ্ঠের কঠিন শেলে আবদ্ধ ছিল।
অনেক পুরনো জীবাশ্মের অ্যামিনো অ্যাসিড থেকে যে প্রোটিন ক্রমের টুকরো পাওয়া গেছে তার চেয়েও এ পুরো প্রোটিন ক্রমে আরও অনেক মূল্যবান তথ্য রয়েছে।
ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্লেষণাত্মক রসায়নবিদ ড. কিরসটি পেন্কম্যান বলেন, একটি সম্পূর্ণ জৈবিক জিগস খোজার জন্য এ প্রোটিন উপকারী হবে। এটি একটি পাজেলের একটি একক টুকরোর চেয়ে বেশি।
তিনি বলেন, সংগৃহীত একটি প্রোটিন ক্রম আমাদের প্রোটিনের কার্যক্রম সম্পর্কে জানায়। এ থেকে আমরা বিবর্তনের তথ্য পেতে সক্ষম হতে পারি।
ড. পেনক্ম্যান বলেন, মানুষের হাড়ের প্রোটিন থেকে বিভিন্ন প্রাচীন প্রাইমেটদের পূর্বপুরুষদের তুলনা এখন সম্ভব হতে পারে। বরং হাড়ের আকারের সঙ্গে বিবর্তনের সম্পর্ক পাওয়া যাবে।
বিজ্ঞানীরা এ সম্পর্কে জৈবিক বারকোড খুঁজে পেতে সক্ষম হতে পারেন। এমনকি ডাইনোসরের ডিমের খোসাও এখন রাসায়নিক বিশ্লেষণের জন্য কাজে লাগবে বলে ধারণা এ গবেষকের।
বাংলাদেশ সময়: ১২০৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৩, ২০১৬
এএসআর