আমাদের প্রচলিত ধারণা, আমাদের বুদ্ধিমত্তা শুধু প্রাকৃতিক ও শিক্ষা লাভে বাড়ে। কিন্তু বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী নিউজিল্যান্ডের ওটাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেমস ফ্লিন বলছেন, বুদ্ধিমত্তার বিকাশ হওয়া না হওয়ার পেছনে আরও অনেক কারণ রয়েছে।
গবেষণা করে অধ্যাপক ফ্লিন দেখিয়েছেন, বুদ্ধিমত্তার বিকাশ একটি রহস্যময় বিষয়। মানুষের চিন্তাধারা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয়। আমাদের জীবনের বিভিন্ন ধরনের নিয়ামকের ওপর আমাদের বুদ্ধির আকৃতি নির্ভর করে।
জেমস ফ্লিন নিয়মিত বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা সম্ভাবনাময় স্মার্ট ছাত্র ও তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলেন। দীর্ঘ গবেষণায় তিনি জেনেছেন, আমাদের জিন আমাদের বুদ্ধিমত্তার ওপর কিছুটা ভূমিকা পালন করে বটে, কিন্তু চারপাশের জটিল পরিস্থিতি,অতীত ও আকর্ষণকারী বিভিন্ন বিষয় এক্ষেত্রে বেশি নিয়ামক। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বুদ্ধিমত্তার ওপর প্রভাব বাড়ায়।
বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে জিনের প্রভাব ২০ শতাংশ থাকলেও অনুশীলন ও পরবর্তী জীবনের প্রভাব ৮০ শতাংশ বলে যৌথ গবেষণায় প্রমাণ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
তারা বলছেন, জিনের প্রভাবে ছোট বয়সে আপনার মস্তিষ্কের অতিরিক্ত উদ্দীপনা সঙ্গতিপূর্ণ বিকশিত হবে। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনার মন উদ্দীপিত হওয়ার নতুন নতুন উপায় খুঁজে বের করার ধাক্কা খাবে।
ফ্লিন ও তার সহকর্মী উইলিয়াম ডিকেন্স বলছেন, তবে আইকিউ পরিমাপ বা বুদ্ধিমত্তানির্ণয়ের সঙ্গে স্মার্টনেসের কোনো সম্পর্ক নেই। অর্থাৎ, বুদ্ধিমান হলেই আমরা স্মার্ট বলে প্রমাণিত হই না। কম বুদ্ধির অনেক মানুষও স্মার্টনেস অর্জন করতে পারেন।
‘শিশুদের উদ্ভাবন ক্ষমতা ও প্রযুক্তির ওপর নির্ভরতা বৃদ্ধি স্মার্টনেস বাড়ায় বটে, কিন্তু তার প্রকৃত বুদ্ধিমত্তার বিকাশ তার চারপাশের প্রকৃতি ও পরিবেশ এবং অতীত ঐতিহ্যে নির্ভরশীল। ’
জর্জ অরওয়েল বলেছেন, আমাদের আইকিউ বিকশিত হতে পারে। কিন্তু এটি আমাদের কোনো স্মার্ট করেনি। দৈনন্দিন অজ্ঞতার পথও আমাদের জীবনের অনেক সিদ্ধান্তে প্রভাবিত করে।
ফ্লিন একটি বইয়ে তরুণদের প্রতি বলেছেন, বুদ্ধিমত্তা চিরতরে আমাদের মতামত পরিবর্তনও করেছে। পরিশেষে আমরা ট্র্যাক, উপায় ও মন পরিবর্তন করে আমাদের সময়ের পরিবেশ প্রতিক্রিয়া ব্যাখ্যা করতে পারি। কিন্তু তা সময়ের সঙ্গে মানিয়ে চলার জন্য যথেষ্ট স্মার্টনেস অর্জনের প্রভাবক হয় না।
ফ্লিন বলেন, সমাজের অগ্রগতির পাশাপাশি নতুন নতুন শ্রেণীবিন্যাস ও চিন্তার উদ্ভব ঘটছে। বুদ্ধিমত্তা বিকশিত না হলেও যুগের নিয়ম অনুসরণ প্রয়োজন। আমরা আধুনিক বিশ্বের জন্য আমাদের প্রাচীন মানসিক যন্ত্রপাতির সূক্ষ্মভাবে সম্পূর্ণরূপে আপগ্রেড করতে পারলে বাস্তব পরিবর্তনে প্রতিফলিত চিন্তাধারাই আমাদের যুগের সঙ্গে চলতে শেখাবে।
লিসা সিম্পসন মনে করেন, পারিবারিক পটভূমি, বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নয়নের ক্ষমতা ও একটি জেনেটিক সুবিধা দিয়ে মানুষ নিজেদের চারপাশকে খুঁজে পেতে পারেন।
কিন্তু ফ্লিনের বিশ্লেষণ দেখায়, আইকিউ পয়েন্ট আপনার পথ নির্ধারণ করতে পারে বটে, কিন্তু জীবনের টেকসই অবস্থান পরিমাপে তা নির্ণায়ক নয়। বুদ্ধিমত্তার পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া মানেই আপনি জীবনের পরীক্ষায় অকৃতকার্য নন।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১৬
এএসআর/এএ