ঢাকা: দূর থেকেই আন্দাজ করা যায় পুরনো মন্দির ভবনের জীর্ণদশা। চুন-পলেস্তর খসে পড়েছে অনেক আগেই।
শরীয়তপুরের ধানুকা গ্রামের ‘মনসা মন্দির’ ঘিরে রয়েছে এমন লোককথা। এই লোককথা শোনা যায় স্থানীয়দের মুখে। স্থানীয়দের মতে, ৬শ’ বছর আগে ধানুকা গ্রামের ধনাঢ্য ব্যক্তি ছিলেন ময়ূর ভট্ট। অর্থকড়ির অভাব ছিলো না তার। বাড়িতে ছিলো নানা ফুলের বাগানও। একদিন ময়ূর ভট্টের বাড়ির এক কিশোর সকালে ফুল কুড়োতে যায় বাগানে। বাগানে গিয়ে দেখা পায় একটি সাপের। দ্বিতীয় দিন একই ঘটনা ঘটে কিশোরের সঙ্গে। তৃতীয় দিন শুধু সাপটিরই যে দেখা মেলে তাই নয়, সেটি কিশোরের পিছু পিছু চলে আসে ময়ূর ভট্টের উঠোনে। সবাই অবাক। সাপটিকে ঘিরে শুরু হয় নানা জল্পনা-কল্পনা। সেদিন রাতেই ময়ূর ভট্টের স্বপ্নে আসেন স্বয়ং মনসা দেবী। নির্দেশ দেন মন্দির তৈরি করার। দেবীর নির্দেশে তৈরি হয় মনসা মন্দির। শুরু হতে থাকে পূজো, যা চলছে এখনও। আর সেই সময়ের মতোই এখনও পূজোয় দেখা মেলে নানা প্রজাতির সাপের।
মন্দিরে থাকা পিতলের মূর্তি নিয়েও রয়েছে নানা লোককথা। স্থানীয়দের মুখে শোনা যায়, একবার হঠাৎ মন্দির থেকে চুরি হয় মা মনসার পিতলের মূর্তিটি। পুরো গ্রামবাসী মনসার মূর্তি খুঁজে যখন ক্লান্ত, তখন তা জেলেরা খুঁজে পান নদীতে। পরে তারা তা ফিরিয়ে দেন মন্দিরে।
বিভিন্ন সময়ে বাড়িটি থেকে অনেক প্রাচীন পুঁথি উদ্ধার করা হয়। বর্তমানে মনসা মন্দিরটি অন্যতম সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে বিবেচিত হয়। এককালে মনসা পূজোর সময় ভারতীয় দর্শনার্থীর ঢল নামতো বাড়িটিকে কেন্দ্র করে। এ বাড়িতে মনসা মন্দিরের পাশাপাশি আরও বেশ কিছু মন্দির তৈরি করেছিলেন ময়ূর ভট্ট। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধকালীন অনেক নিদর্শন রয়েছে মনসা মন্দিরে, যা আজও দৃশ্যমান। বর্তমানে মনসা মন্দিরটির তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে রয়েছেন শ্যামাপ্রদ চক্রবর্তী।
স্থানীয়রা মনে করেন, সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা হলে এ মন্দির হতে পারে দেশের দর্শনীয় স্থানগুলোর একটি।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১৬
ইউএম/এইচএ/