কয়েকটি চরম ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, কোনো উল্লেখযোগ্য অসুস্থতার প্রভাব ছাড়াই মানুষের মস্তিস্কের বড় অংশ অনুপস্থিত হতে পারে। এটিকে আমাদের মগজের সত্যিকারের প্রকৃতি বলে ব্যাখ্যা করেছেন টম স্ট্যাফোর্ড।
আসলে মস্তিষ্কের কতোটুকু আমাদের প্রয়োজন? সাম্প্রতিক মাসগুলোতে অনেক মানুষ সম্পর্কে খবর প্রকাশিত হয়েছে, যাদের আংশিক ঘিলু অনুপস্থিত বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে তাদের মনের প্রাথমিক শক তাদেরকে গভীর অসুস্থতায় নিয়ে যায়। এটি আরও প্রমাণ করছে যে, আমরা শুধু মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে, সেটি বুঝতেই অক্ষম নই, আমরা এটি সম্পর্কে সম্পূর্ণ ভুল চিন্তাও করছি।
এ বছরের শুরুর দিকে লঘুমস্তিষ্কের একজন নারীর খবর প্রকাশিত হয়, যার মস্তিষ্কের পেছনের অংশের একটি স্বতন্ত্র গঠন পাওয়া গেছে। ধারণা করা হয়, মানব লঘুমস্তিষ্কে অর্ধেক মস্তিষ্কের কোষ উপস্থিত থাকে। তবে এই নারীর ক্ষেত্রে শুধু মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্তই নয়, পুরো কাঠামোই অনুপস্থিত। তবুও এই নারী স্বাভাবিক জীবন যাপন করেছেন। তিনি স্কুল থেকে স্নাতক পাস, বিয়ে, গর্ভধারণ এবং সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। তিনি ২৪ বছর ধরে একটি চমৎকার স্বাভাবিক জীবন অতিবাহিত করছেন।
তবে ওই নারী সম্পূর্ণভাবে প্রভাবমুক্ত ছিলেন না। তিনি অনিশ্চিত, কদাকার, অপূর্ণাঙ্গ চলাফেরা থেকে তার পুরো জীবন ভোগ করছেন। কিন্তু আশ্চর্যজনক এটাই যে, কিভাবে তিনি মস্তিষ্কের একটি অংশ ছাড়াই এ পর্যন্ত চলে এসেছেন, যা প্রথম মৌলিক মেরুদণ্ডী প্রাণীর সঙ্গে বিবর্তিত হয়েছে। শুধুমাত্র হাঙ্গরই লঘুমস্তিষ্ক নিয়ে সাঁতরে বেড়িয়েছে, যখন পৃথিবীতে ডাইনোসর পদচারণা ছিল।
এটি মস্তিষ্ক বিজ্ঞানের একটি দুঃখজনক অধ্যায়। আমরা এটি সম্পর্কে চিৎকার করবো না, কিন্তু মস্তিষ্ক সম্পর্কে মৌলিক জ্ঞানের ক্ষেত্রে আমাদের বড় ফাঁক রয়ে গেছে।
আরেকটি সাম্প্রতিক সংবাদে বলা হয়েছে, একজন মানুষের মস্তিষ্কে একটি ফিতাক্রিমি পাওয়া যায়, যেটি চার বছর ধরে একপাশ থেকে অন্যপাশে গর্ত করে বাস করে আসছে। এটি তার হৃদরোগ, স্মৃতিশক্তির সমস্যা এবং অদ্ভুত গন্ধসহ নানা সমস্যার কারণ। তা সত্ত্বেও তিনি বেঁচে আছেন।
তার মস্তিষ্কের কাঠামোর ওপর ভিত্তি করে নোবেল বিজয়ী স্নায়ুবিজ্ঞানী জেরাল্ড এডলেম্যান ব্যাখ্যা দেন, মস্তিষ্কের খাপ খাওয়ানোর একটি সক্ষমতা রয়েছে। এই ব্যাখ্যা স্নায়ুবিজ্ঞানীদের মস্তিষ্কের বিভিন্ন অঞ্চলে কি ধরনের সমস্যা আছে, তা বুঝতে সাহায্য করে।
এডেলম্যান ও তার সহকর্মী জোসেফ গ্যালি মস্তিষ্কের ক্ষয় একটি ‘সর্বব্যাপী জৈবিক বিষয়, একটি জটিল বৈশিষ্ট্য’ দাবি করে বলেন, এটি প্রকৃতির অনিবার্য পরিণতি ছিল। অনেকেই কেন মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক অবস্থার পরও বেঁচে আছেন, এ প্রশ্নের জবাবে তারাও বলছেন, মস্তিষ্ক নিয়তই বিবর্তনশীল বলেই তাদেরকে বাঁচিয়ে রেখেছে।
বাংলাদেশ সময়: ০০৩৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১৬
এএসআর