হ্যাগফিস একটি অদ্ভুত মাছ, যারা মেরুদণ্ডী হয়েও আক্ষরিক অর্থে মেরুদণ্ডহীন এবং নিচের চোয়াল নেই। তবে এরা সংখ্যায় অত্যন্ত কম।
প্রশান্ত মহাসাগরের শীতল পানিতে বিচরণকারী হ্যাগফিসের আকৃতি আশ্চর্য ধরনের লম্বাটে। দড়ির মতো নিজেদের শরীরকে গিট পাকিয়ে এবং একটির সঙ্গে অন্যটি লেপ্টে থাকে এরা। হ্যাগফিসের গিট পাকানো তার লেজ দিয়ে শুরু হয়ে মাথার দিকে এসে শেষ হয়। অর্ধেক মাথা বের হয়ে থাকে। অর্ধ চোয়াল থাকলেও শক্ত মাংসের কারণে বিচ্ছিন্ন করা যায় তাদেরকে।
এই মাছকে বলা হয় জীবন্ত জীবাশ্ম। কারণ, ৩০ কোটি বছর আগেও আজকের মতোই দেখতে ছিল।
চোয়ালবিহীন হ্যাগফিসের পিঠের মধ্যে অস্থিসার কশেরুকা না থাকায় মেরুদণ্ডী প্রাণী হয়েও তারা আক্ষরিক মেরুদণ্ডহীন। কিন্তু স্কাল বা মাথার খুলি রয়েছে।
হ্যাগফিসের দুই থেকে চারটি পর্যন্ত হৃদপিণ্ড থাকে। ফলে অন্য মাছের চেয়ে এদের শরীরে অনেক বেশি রক্ত পাওয়া যায়।
এই প্রাণীটি জন্মান্ধ। এদের কোনো চোখ নেই। হ্যাগফিস ও তাদের সমগোত্রীয় ল্যাম্প্রে (বাম) মাছের জিহ্বা অত্যাধিক নড়াচড়ায় সক্ষম এবং এদের জিহ্বায় দাঁতের মতো গঠন দেখতে পাওয়া যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়ার ভালদোস্তা স্টেট ইউনিভার্সিটির থিওডোর উইয়েনো বলেন, ‘সাম্প্রতিক গবেষণায় আমি দেখেছি, হ্যাগফিস প্রকৃত মেরুদণ্ডী প্রাণী, যে পরে মেরুদণ্ডের বৈশিষ্ট্য হারিয়েছে।
সে আদিম যুগে মেরুদণ্ডের মতো গঠন করেছিল, কিন্তু খুব দীর্ঘ সময় আগে হারিয়েছে’।
১৯৯১ সালে ৩০ কোটি বছর আগের একটি প্যালান্টোলজিস্ট গোত্রের ইলিনয়ের জীবাশ্ম পাওয়া যায়, যা একটি জীবন্ত হ্যাগফিসের মতো দেখতে। এর ভিত্তিতে উইয়েনো বলেন, ‘সম্ভবত বিবর্তনের প্রয়োজনে হ্যাগফিসের মেরুদণ্ড পরিবর্তিত হয়েছে। শরীর পাকানোর অস্বাভাবিক বৈশিষ্ট্যও টিকে থাকার প্রয়োজনে তাদের বিবর্তনীয় কৌশল’।
না খেয়ে এরা অনেকদিন বেঁচে থাকতে পারে। নিচের চোয়াল বা কোনো দাঁত না থাকলেও অতুলনীয় আলগা চামড়ার তরল অংশের মাধ্যমে খাদ্য শুষে খেতে পারে। তার এই ত্বক এবং শরীরের গিট পাকানোও তাই কোনো নিছক কৌতুক নয়, খাওয়ার প্রয়োজনেই করে। আবার গিট পাকানোর এ ক্ষমতাও অভিযোজনের মাধ্যমে অর্জন করেছে হ্যাগফিস।
‘প্রমাণ আছে যে, হ্যাগফিস কখনো কখনো সক্রিয়ভাবে অন্যান্য মাছ শিকার করে। এবং এ ক্ষেত্রে মাছটি তাদের শিকারের ফুলকায় আক্রমণ করে এবং তাদের গিট পাকানো হত্যা করতে সাহায্য করে’।
হ্যাগফিসের কেন অতিরিক্ত হৃদপিণ্ড থাকে- এর ব্যাখ্যায় উইয়েনো বলেন, ‘এর শরীরের মধ্যেকার অসংখ্য গহ্বর রক্তে ভরাট হয়ে থাকে। এতো রক্ত সঞ্চালনের প্রয়োজনে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োজন, যা অতিরিক্ত হৃদপিণ্ডে আছে’।
‘হ্যাগফিস আক্ষরিক অর্থেই পৃথিবীর একটি রক্তাক্ত মেরুদণ্ডী প্রাণী। তাদের অবিশ্বাস্যভাবে উচ্চহারে রক্ত ও দ্বিগুন অনুপাতে আছে’।
কিছু মানুষ হ্যাগফিসকে ‘সমুদ্রের শকুন’ বলে ডাকেন। কারণ, তারা প্রায়ই মৃত তিমি খায়। তারা এইসব প্রাণীদের পাশ দিয়ে চর্বণ করে এবং খাদ্যের বড় অংশ বিচ্ছিন্ন করে খায়।
‘এখন এটি অনুমানভিত্তিক। কিন্তু একদিন তার এতোসব ক্ষমতা দিয়ে একটি হ্যাগফিস আপনার জীবন বাঁচাতে পারে’- বলেন উইয়েনো।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০১৬
এএসআর