অস্ট্রেলিয়ান আদিবাসীদের পৌরাণিক গল্পে বুনইপ নামের একটি বৃহৎ প্রাণীর কথা পাওয়া যায়, যার একটি লোমশ ঘোড়ার মতো মাথা ছিল। বুনইপকে একটি ‘হ্রদ দৈত্য’ বলে মনে করতো তারা।
আদিবাসীদের কাছে আতঙ্কজনক এই প্রাণীরা বাস করতো তাদের পানির উৎসস্থল খাঁড়ি ও জলাভূমি বিল্লাবংসে। ভূতে বিশ্বাসী আদিবাসীরা লোকাচারবিদ্যা চর্চা করে বুনইপদের আক্রমণ এড়ানোর চেষ্টা করতো।
এখন প্রমাণিত হয়েছে যে, অস্ট্রেলিয়ার মূল আদিবাসীদের কথিত বুনইপ আসলে ছিল প্রাগৈতিহাসিক প্রাণী ডিপরোটোডন, যা ২০ হাজার বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
দুই টন ওজনের ডিপরোটোডন ছিল অস্ট্রেলিয়ার পেটের নিচে শাবকবাহী সর্ববৃহৎ প্রাণী। আকার ও চেহারা আধুনিক গণ্ডারের মতো হলেও এরা আসলে একটি সামাজিক জীবনধারার হাতি। আবার ওমবাট নামক তৃণভোজী গর্তজীবী এক ধরনের ছোট ভালুকের মতোও দেখতে ছিল এটি। চিরদিনের মতো হারিয়ে যাওয়া অন্য স্তন্যপায়ী প্রাণীদের সঙ্গেও শারীরিক মিল ছিল ডিপরোটোডনের।
অস্ট্রেলিয়ার প্রথম পর্যায়ের ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকরা অদ্ভুত প্রাণী ডিপরোটোডনের কথা উল্লেখ করেন, যা তারা প্রাচীন অস্ট্রেলিয়ান ওই পৌরাণিক কাহিনীতে পেয়েছিলেন। পরে এর একটি জীবন্ত নমুনা সংগ্রহে ব্যাপক অনুসন্ধান চালানো হয়েছে। তবে তা সফল না হওয়া প্রমাণিত হয়ে গেছে যে, কয়েক ধরনের শাবকবাহী প্রাণী লাখ লাখ বছর ধরে টিকে থাকলেও বিলুপ্ত হয়ে গেছে ডিপরোটোডন।
অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন স্থানে পাওয়া গেছে ডিপরোটোডনের অসংখ্য জীবাশ্ম। এর মধ্যে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার সুপ্রসিদ্ধ শুষ্ক লবণ হ্রদ ক্যালাবন্যায় পাওয়া গেছে বেশি।
ক্যালাবন্যায় পাওয়া জীবাশ্ম ইঙ্গিত দেয় যে, ২০ হাজার বছর আগে পর্যন্ত ক্রমবর্ধমান অনুর্বর পরিবেশে টিকে ছিল ডিপরোটোডনরা। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, প্রাণীটির একাধিক পরিবার দলবদ্ধভাবে শুষ্ক মৌসুমে খাদ্যের সন্ধানে ঘুরে বেড়াতো। শুধুমাত্র ভঙ্গুর পৃষ্ঠ দিয়ে পড়ে গিয়েই কাদায় আটকে পড়ে মারা যায় তারা। পরে দেহাবশেষ ধীরে ধীরে জমে জীবাশ্মে পরিণত হয়।
তবে অনেক সাদা ঔপনিবেশিকরা মনে করেন যে, কল্পিত হলেও বুনইপরা ছিল এবং তাদের সঙ্গে সংঘর্ষে চিরতরে হারিয়ে গেছে ডিপরোটোডন।
ডিপরোটোডনদের সামনের দু’টি সামনের দাঁত বা জোড়া কর্তক দন্ত এবং মুষ্টি আকারের পেষক দাঁত মোটা গাছপালা নিষ্পেষণ ও চেরাইয়ের জন্য ডিজাইন করা ছিল। লেক ক্যালাবন্যায় পাওয়া জীবাশ্মে পানি সংগ্রহের থলি পাওয়া গেছে। পানি সংগ্রহ করে রেখে সংকটকালে আপেক্ষিক ঘনত্বের আড়াআড়ি শোষক দিয়ে ওই পানি খেয়ে তৃষ্ণা মেটাতো তারা।
তাদের আধুনিক সহযোগী ওমবাট ভালুক বা গণ্ডারের মতোই ডিপরোটোডনরাও শক্তিশালী পায়ের থাবা ও নখ দিয়ে সম্ভবত গাছপালা বিচ্ছিন্ন করা ও শিকড় খননে ব্যবহার করতো। তবে আধুনিক ওমবাটরা তার এ খনক বলিষ্ঠ শিকারীদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া ও আশ্রয়ের জন্য আরও ভূগর্ভস্থ গর্ত খোঁড়ার প্রয়োজনেও কাজে লাগাতো।
বাংলাদেশ সময়: ০১১৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৬
এএসআর