আজকের নিরীহ টিকটিকি সামান্য আওয়াজ হলেও ভয়ে দৌঁড়ে পালায়। কেউ তাকে ধরতে চাইলে নিজের লেজটিই খসিয়ে চম্পট দেয়।
ঘরের কোণায় কোণায় নিজেকে লুকিয়ে রাখা এই ক্ষুদ্রতম প্রাণীদের দেখলে মনেই হবে না যে, এককালে তাদেরও বিষ ছিল! এমনকি টিকটিকি প্রজাতির হলেও তারাই ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রাণীদের একটি, যা সর্বোচ্চ ৭ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতো!
প্রাগৈতিহাসিক প্লেইস্টোসিন যুগে অস্ট্রেলিয়ায় বাস করা শাবকবাহী (পেটের তলায় থলিতে শাবক বহন করে এমন স্তন্যপায়ী) এই বিষধর টিকটিকিদের নাম ছিল মেগালানিয়া। যা সাধারণভাবে অপ্রচলিত ভেরানাস প্রিসকাস্ মহাজাতির অন্তর্ভূক্ত। গোয়ান্না প্রজাতির টিকটিকি মেগালানিয়া পৃথিবীর বৃহত্তম স্থলজ টিকটিকি, এমনকি বৃহত্তম বিষধর মেরুদণ্ডী প্রাণী বলেও পরিচিত ছিল।
সে যুগে উচ্চতায় রেকর্ড ভঙ্গকারী অস্ট্রেলিয়ার প্রাগৈতিহাসিক এ সরীসৃপেরা শিকারে-আতঙ্ক সৃষ্টিতে যেন ছিল বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন।
দৈত্যাকার বিষধর টিকটিকি মেগালানিয়া বিলুপ্ত হয়ে গেছে ৩০ হাজার বছর আগে। তবে এখনকার ভয়ঙ্কর কমোডো ড্রাগনরা তাদের উত্তরসুরী। কমোডো ড্রাগনদের সঙ্গে তুলনায় আগে অনুমান করা হতো যে, এটি অন্তত সাড়ে ৫ মিটার দীর্ঘ ছিল।
তবে বিখ্যাত জীবাশ্ম বিজ্ঞানী স্যার রিচার্ড ওয়েন মেগালানিয়ার জীবাশ্ম নিয়ে গবেষণায় জানিয়েছেন, এরা ৭ মিটার পর্যন্ত দৈর্ঘ্যের হতো, যা খাদ্য শৃঙ্খলের ওপরে বিপদ ডেকে আনতো।
মেগালানিয়াকে একটি সত্যিকারের বিকট জীব বলেও বর্ণনা করেছেন রিচার্ড ওয়েন।
তিনি বলেন, আরও ভালোভাবে প্রাচীন অস্ট্রেলিয়ার বাস্তুতন্ত্র বোঝা গেছে মেগালানিয়ার জীবাশ্ম পাওয়ার মাধ্যমে। বিলুপ্ত শাবকবাহী সিংহসহ স্তন্যপায়ী শিকারি প্রাণীদের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ছিল এরা।
কমোডো ড্রাগনদের মতোই মেগালানিয়ার বাঁকা দাঁতগুলোও ছিল একটি প্রাণঘাতী অস্ত্রাগার। ফলে এই ড্রাগনেরা যে রাক্ষুসে এই টিকটিকির বিবর্তিত রূপ, সেটা সহজেই অনুমেয়। আর মেগালানিয়ারা বিবর্তিত হয়েছিল ৪০ লাখ বছর আগে থেকে শুরু করে মধ্যবর্তী সময়কার ভলকসওয়াগন ও ওমবাটস্ প্রজাতির মাধ্যমে।
বাংলাদেশ সময়: ০১৪৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৬
এএসআর