ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অফবিট

বন্দিত্ব মানুষকে অনুকরণে বাধ্য করে প্রাণীদের!

অফবিট ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩২১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০১৬
বন্দিত্ব মানুষকে অনুকরণে বাধ্য করে প্রাণীদের! ছবি: সংগৃহীত

মানুষের মতোই অগণিত বিভিন্ন শব্দ উৎপাদন করতে পারে সামুদ্রিক প্রাণী বেলুগা তিমি, ডলফিন ও শুশুক জাতীয় পরপয়স। এরা স্বাভাবিকভাবেই তাদের সারা জীবন নতুন নতুন শত শত শব্দ শিখতে সক্ষম। 

মানুষের মতোই অগণিত বিভিন্ন শব্দ উৎপাদন করতে পারে সামুদ্রিক প্রাণী বেলুগা তিমি, ডলফিন ও শুশুক জাতীয় পরপয়স। এরা স্বাভাবিকভাবেই তাদের সারা জীবন নতুন নতুন শত শত শব্দ শিখতে সক্ষম।

 

কিন্তু তোতাসহ কিছু গায়ক পাখি মানুষের অনুকরণে সামুদ্রিক প্রাণীদের চেয়ে ভালো হয়। এমনকি কখনো কখনো অন্য প্রজাতি এবং তাদের চারপাশের বস্তু থেকেও শব্দগুলো নিজেদের মতো করে শিখে নিয়ে বলতে পারে। অস্ট্রেলিয়ান ছোট্ট বিখ্যাত গায়ক পাখি লাইরিবার্ডস্‌ ক্যামেরার শার্টার টেপা ও চেইনসসের মতো মানুষের মেশিনের ধ্বনি অনুকরণ করতে শিখেছে।


তবে গবেষকরা বলছেন, সর্বাধিক ‘কথা বলা’ বন্য ও জলজ প্রাণীরা সামাজিক প্রজাতির অন্তর্গত। কিন্তু যখন তারা মানুষের হাতে বন্দি হয়, এই বন্দিদশা তাদের নিজস্ব ধরন থেকে আলাদা করে ফেলে। শুধুমাত্র যোগাযোগ করতেই তারা মানুষের অনুকরণ বা নকল ও মানুষের কথা বলার মতো শব্দ উৎপাদন করে।

নিউইয়র্কে হান্টার কলেজের ডায়ানা রেইস বলেন, সুতরাং মানুষের অনুকরণ তাদের জন্য মডেল হয়ে দাঁড়ায়।

মানুষের ধ্বনির অনুকরণ মানুষের সঙ্গে বন্ধনে আবদ্ধ করার একটি উপায় হতে পারে বলে মনে করেন  অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাঞ্জেলা স্টগার হারওয়াথও।

আফ্রিকান ধূসর তোতা ও জেব্রা ফিঞ্চও হাজার হাজার শব্দ তৈরি করতে পারে। গাছে বাস করা পাখিরা তাদের সমগ্র জীবোদ্দশায়ই গান শিখতে ও নিজের প্রজাতির ধ্বনি অনুকরণ করতে পারে। কিন্তু মানুষ তাদেরকে আবদ্ধ করে ফেললেই মানুষকে অনুকরণে বেশি মনোযোগী হয় তারা।

স্টগার হারওয়াথ বলেন, ওরাং ওটাং, বনমানুষ, শিম্পাঞ্জি ও বানর জাতীয় পূর্বপুরুষরা আমাদের নিকটতম আত্মীয় ও তাদের মস্তিষ্ক আমাদের মতোই। তারপরও তোতা, হামিংবার্ড এবং স্তন্যপায়ীদের পাঁচটি প্রজাতি বাদুড়, হাতি, ডলফিন ও তিমির মতো প্রাণীরা অলৌকিকভাবে এদের চেয়েও মানুষকে অনুকরণে বেশি সক্ষম। এক্ষেত্রে মস্তিষ্কের একটি ভূমিকা উল্লেখ করেও গবেষকরা বলছেন, প্রাণীদের বিভিন্ন প্রজাতি স্বতন্ত্রভাবে বিবর্তিত হওয়ায় এটি ঘটছে।

যেমন, আমরা এখনো জানি না যে আমাদের বক্তৃতা এবং ভাষা বিবর্তিত কি-না? আমাদের বানর জাতীয় পূর্বপুরুষ অস্ট্রালোপিথেকাস এবং নিয়ান্ডারথালদের মতো আরো সাম্প্রতিক মানব প্রজাতি কথা বলতে পারে কি-না? 

নেদারল্যান্ডের আমস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণী বিশেষজ্ঞ আদ্রেইনা ল্যামেইরা বলেন, ‘ওরাংওটাংদের জন্য মানুষের অনুকরণ ব্যাপক কঠিন নয়। কিন্তু মানুষের চেয়ে তাদের বংশ বিভক্ত ও বিবর্তিত হয়েছে আগেই। বিবর্তনের এই টাইমলাইন আমাদেরকেও বাকশক্তি দিয়েছে। কিন্তু শব্দের অনুকরণমূলক ক্ষমতা প্রাচীন নয়। যেমন তাদের পরে বিবর্তিত অনেক প্রাণী এতে বেশি দক্ষ হয়েছে’।

‘কিছু প্রাণী মানুষের বাকশব্দ অনুকরণ করতে পারে। কিন্তু শুধুমাত্র অল্প সংখ্যক প্রাণীই মানুষের শব্দ ও ভাষার অর্থপূর্ণ অনুকরণে দক্ষতা বিকাশে সক্ষম হয়েছে’।

দীর্ঘদিন ধরে গবেষকদের বিশ্বাস ছিল যে, তাদের কণ্ঠনালী আমাদের অনুরূপ। কিন্তু বিশ শতকের মধ্যভাগের গবেষণায় জানা গেছে, এটি ঠিক নয়, তাদের কণ্ঠস্বর আমাদের চেয়ে অনেকে নিচে নামে।  

আবার কিছু প্রাণী জন্মগতভাবেই অন্যকে অনুকরণ করতে অক্ষম। যেমন গৃহপালিত ও বন্দি হলেও কুকুর, বেড়াল, গরুর মতো প্রাণীরা মানুষের মতো শব্দ উচ্চারণ করতে পারে না। সব সময় মানুষের সঙ্গে থেকে বা মানুষের হুকুম তামিল করেও তারা এটি শেখে না।


বাংলাদেশ সময়: ০৯১৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০১৬
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।