সৌন্দর্যে বিশ্বখ্যাত স্পেনের গালিশিয়া অঞ্চলের ক্যাথেড্রাল সমুদ্র সৈকত। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে তৈরি ক্যান্টাব্রিয় সমুদ্রের এ সৈকতটিতে লুকিয়ে আছে প্রাচীন বিশাল ও শক্তিশালী রোমান সাম্রাজ্যের হাজার হাজার বছরের ইতিহাসও।
গালিশিয়া উত্তর-পশ্চিম স্পেনের একটি স্বায়ত্ত্বশাসিত অঞ্চল। এটি ইউরোপের সবচেয়ে প্রাচীন রাজ্যগুলোর একটি এবং আ কোরুনিয়া, লুগো, ওউরেন্সে ও পোন্তেভেদ্রা প্রদেশ নিয়ে গঠিত।
ক্যাথেড্রাল ৩৫০ মিলিয়ন বছর আগে গঠিত প্রাগৈতিহাসিক সমুদ্র সৈকত। সৈকতের উপরিভাগে হাজার হাজার বছর ধরে শিলা জমেছে, তৈরি হয়েছে প্রাকৃতিক গুহা ও পাথুরে স্থাপনা। বছরের পর বছর পানির আঘাতে এসব অন্ধকার গুহা ও স্থাপনাগুলোর দেওয়ালে গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে, যা আর্কিটেকচার ভাষায় ক্যাথেড্রাল নামে পরিচিত।
গালাশীয় ক্যাথেড্রাল সৈকতের পানি প্রেইয়ার মতোই পবিত্র হিসেবে পরিচিত।
প্রায় ২ হাজার বছর আগে গালিশিয়া জয় করে নেয় রোমানরা। রোমান সাম্রাজ্যে যোগদানের পর গালিশীয় সরকার নতুন স্বর্ণমুদ্রা তৈরি করে। মুদ্রা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় প্রচুর স্বর্ণ মজুদ করে রাখা হয় ক্যাথেড্রাল সমুদ্র সৈকতে।
সরকার এজন্য প্রাকৃতিক স্থাপনা ছাড়াও নতুন নতুন অবকাঠামো তৈরি করে তার ভেতরে স্বর্ণ রাখে। ফলে এখানে তৈরি হয় কৃত্রিম স্বর্ণখনি। সমুদ্রের পানিতে ভেজা সোনাগুলো বিচের গুহার মধ্যে থাকার ফলে পোক্ত হয়ে গেছে। এজন্য সেগুলো ‘শোষিত স্বর্ণখনি’ হিসেবে স্বীকৃত।
একইসঙ্গে সমুদ্র সৈকতসহ গালিশিয়া অঞ্চলজুড়ে নতুন নতুন স্থাপনাসহ সভ্যতার নানা অবকাঠামোও গড়ে তোলা হয়। সেসব অবকাঠামো আজও দাঁড়িয়ে আছে। বেশ কয়েকটি স্থানীয় স্বর্ণখনিও আবিষ্কৃত হয়েছে।
খননকারীরা সৈকতের কাছাকাছি একটি রোমান সিরামিক, পণ্য পরিবহনের জন্য প্রাচীন রোমানদের ব্যবহৃত একটি বড় মাটির কলস বা ডলিয়ামের টুকরা এবং তা তৈরিতে ব্যবহৃত চুল্লি পেয়েছেন।
এসব আবিষ্কার থেকে রহস্যময় ক্যাথেড্রাল সমুদ্র সৈকতে রোমান সাম্রাজ্যের গুপ্তধন স্বর্ণের বিশাল ভাণ্ডার লুকিয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন প্রত্নতত্ত্ব গবেষকরা, এমনকি গালিশীয় সরকারও। খুঁজে পাওয়া যেতে পারে রোমানদের হাজার হাজার বছর আগের প্রত্নতত্ত্বের নিদর্শনও। বিশেষ করে মাটির পাত্রটি সৈকতে ও বাইরে আরও অনেক বস্তু এমনকি ইতিহাস-ঐতিহ্যের উৎসস্থল হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
গ্যালিশিয় সরকার সৌন্দর্য ও শিলাখচিত বীথির অসাধারণত্বের কারণে সৈকতটিকে একটি প্রাকৃতিক মনুমেন্ট হিসেবে ঘোষণা করেছে। ক্যাথেড্রাল বিচ রক্ষায় এর অতীত নিয়ে একটি সমীক্ষা কমিশনও গঠন করেছে।
তবে স্বর্ণখনি আবিষ্কারে তেমন কোনো বড় ধরনের গবেষণা বা অনুসন্ধান এখন পর্যন্ত হয়নি।
সাংস্কৃতিক সংরক্ষণ গ্রুপ মেরিনা প্যাট্রিমোনিও মনে করে, সৈকতের জোয়ারে একটি সোনার খনির প্রমাণ ভেসে থাকতে পারে। গ্যালিশীয় সরকারকে সমুদ্র সৈকতটিতে রোমান সোনার খনি অনুসন্ধানে চাপ দিচ্ছে সংগঠনটি। গ্রুপটির সভাপতি ম্যানুয়েল মিরান্ডা বলেন, গ্যালিশিয়ার স্বর্ণ এলাকাটি খুবই সমৃদ্ধ এবং ক্যাথেড্রাল বিচটি স্বর্ণখনি দ্বারা বেষ্টিত।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০১৬
এএসআর/এএ