পৃথিবী বিখ্যাত মেসো-আমেরিকান প্রবালপ্রাচীর জলজ প্রাণীদের বিশাল আশ্রয়স্থল। কিন্তু অতিরিক্ত মৎস্য শিকারের কারণে হুমকির মুখে রয়েছে এর অসাধারণ সৌন্দর্যময় জীববৈচিত্র্য।
গ্রেট বেরিয়ার রিফের পরে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রবাল প্রাচীর ক্যারিবিয়ান সমুদ্রের মেসো-আমেরিকান রিফ। ৯৬৫ কিলোমিটার বিস্তৃত এ প্রবাল প্রাচীরের শুরুটা উত্তর মেক্সিকোর কানকুন থেকে। সেখান থেকে মেক্সিকো, বেলিজ, গুয়াতেমালা ও হন্ডুরাসের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূল পর্যন্ত প্রসারিত।
লাখ লাখ পর্যটক উষ্ণ সমুদ্রস্নান ও স্কুবা ডাইভিং করতে বেলে-সাদা ক্যারিবিয়ান সৈকতে ভিড় জমান। মেসো-আমেরিকান রিফসহ প্রতিবেশী উপকূল রক্ষায় তাদেরও সমর্থন রয়েছে।
কিন্তু এখানকার পর্যটনশিল্পও অতিরিক্ত মৎস্য শিকার ও দূষণের মতো পরিবেশগত চাপে আছে। স্থানীয় মৎস্যশিকারি সম্প্রদায়ের কাছ থেকে বেশি রাজস্ব আদায় করেও পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটছে না।
এখন প্রবালপ্রাচীরটিকে রক্ষায় মাছের এ আশ্রয়স্থল থেকে মাছ না ধরার আহ্বান জানানো হচ্ছে। এবারের গ্রীষ্ম থেকে আলোকচিত্রীদের আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ লিগ সিওবিআই’র সঙ্গে যৌথভাবে মাছের অনেক প্রজাতি ও তাদের আশ্রয়স্থল পুনরুদ্ধারে জেলেদেরকে টেকসই শিকার চর্চায় উৎসাহিত করার কাজ করছে। তারা প্রবালপ্রাচীরের ২০ শতাংশ এলাকাকে ‘নো টেক জোন’ হিসেবে সংরক্ষিত অঞ্চল ঘোষণার প্রস্তাব দিয়েছেন।
দক্ষিণ কানকুনের সিয়ান কান সংরক্ষিত প্রাণীবৈচিত্র্য অঞ্চলের কিছু জেলেও এখন আরও টেকসই হতে চেষ্টা করছেন। পান্তা হেরেরো বাণিজ্যিক মাছধরা সমবায় সমিতি পুরোপুরি গঠিত হওয়ার পর ক্যারিবিয়ান কাঁটাযুক্ত গলদা চিংড়ি শিকারে জেলেদের উৎসাহিত করছে।
জেলেদের গলদা চিংড়ি শিকারের জন্য মুক্ত ডুব দেওয়া, ছোট কংক্রিটের বাক্স (হাচেস) ব্যবহার এবং আশ্রয়স্থল থেকে হাত দিয়ে মাছ সংগ্রহ করতে বলা হচ্ছে। এ পদ্ধতিতে মাছ ধরা হলে নির্বিচার শিকার ও প্রবাল প্রাচীরের ওপর এর প্রভাব হ্রাস করবে।
ইতালির ভূমধ্যসাগরীয় তটভূমি অঞ্চল রিভিরিয়া মায়া পরিদর্শনকারী পর্যটকদের মধ্যে অভিনব এ গলদা চিংড়ির প্রচুর চাহিদা রয়েছে। অথচ মৌসুমের বাইরে এসব গলদা চিংড়ি ধরার পদ্ধতি টেকসই নয়। এখন প্রচারকর্মীরা পর্যটকদেরও উৎসাহিত করছেন, তারা যেন জেলেদের পরিবেশবান্ধব গলদা চিংড়ি ধরায় চাপ দেন।
সামুদ্রিক ঘাস মাছের জন্য একটি নার্সারি হিসেবে কাজ করে, যা কিছু সামুদ্রিক পাখিও খেয়ে থাকে। অ্যাকুমালের পর্যটন শিল্প এ সামুদ্রিক ঘাসের সুস্বাস্থ্যের ওপর নির্ভরশীল। সেজন্য সেখানে মাস্ক পরে সমুদ্রতলে সাঁতারের বিষয়ে কঠোর নিয়ম-কানুন করা হয়েছে, যেন এতে সামুদ্রিক ঘাসেরা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
মেক্সিকোর পুরেতো মোরেলস্ প্রবালপ্রাচীর জাতীয় পার্কের লাইমনস্ অঞ্চলটি এখন পর্যটক ও জেলেসহ সবার জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে রোগাক্রান্ত এলখরন প্রবালেরা সুস্থ সবল এবং ফের সামুদ্রিক মাছ স্ন্যাপারস্, গ্রান্টস্ ও গলদা চিংড়ির মতো প্রাণীদের আশ্রয়স্থলে পরিণত হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ০২২৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৬
এএসআর/জেএম