ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতা, নির্বিচার শিকার ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাম্প্রতিককালে কমে যাচ্ছে স্কটল্যান্ডের সেটল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের স্তন্যপায়ী প্রাণীদের সংখ্যা। এদের পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে সেখানকার অল্প সংখ্যক বাসিন্দার জীবনযাত্রাও।
পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগর ও পূর্ব-উত্তর সাগরের মধ্যে বিভাজন আকারে থাকা ৫০ মাইলসহ সেটল্যান্ডের মোট আয়তন ৫৬৬ বর্গমাইল। ১ হাজার ৬৭৯ মাইল দীর্ঘ তটরেখা বেষ্টিত দ্বীপপুঞ্জটির সামুদ্রিক পাখি, সর্পিল উদ্ভিদ, স্থানীয় জাতের ইঁদুর, ঘোড়া, ভেড়া, কুকুর, হাঁস ও শূকর, কাঁকড়াসহ নীল অতলান্ত সমুদ্র ও সৈকতের প্রাণীবৈচিত্র্য এবং আপেল জাতীয় বৃক্ষের সুখ্যাতি রয়েছে বিশ্বজুড়ে। ৪০০ প্রজাতির দেশীয় উদ্ভিদ, আর্কটিক আলপাইন গাছপালা, বনফুল, শৈবাল ও শৈবাল জাতীয় উদ্ভিদ, পদ্মজাতীয় গাছ স্প্রিং, কলা, স্কটস লোভেজ, রোজরুট এবং সমুদ্র পথিপার্শ্বস্থ জঙ্গলা লাল এবং সাদা ফুলের গাছও প্রচুর জন্মে।
দ্বীপে পাওয়া যায় আটলান্টিকের দীর্ঘ ঠোঁটের সামুদ্রিক পাখি পেট্রেল, লাল গলার ডুবুরি পাখি, সেটল্যান্ড রেন, ফেয়ার আইল রেন ও উপ-প্রজাতির চকা, উত্তরাঞ্চলের হ্যাংলা, স্কুয়া, বৃহদাকার কালো ব্রড, তুষার হংসী ছাড়াও অনেক দুর্লভ পাখি। আছে পুষ্ট তুষারময় পেঁচাও।
তবে এর অধিকাংশই এখন বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে।
দ্বীপপুঞ্জটিতে ছিল তিন প্রজাতির বাদামি ইঁদুর, যার একটি এরই মধ্যে হারিয়ে গেছে চিরতরে। সেটল্যান্ডের হামার, ক্লিফ ও লোচ দ্বীপের কঠিন ও অনুর্বর ভূমিতে লৌহযুগ থেকেই (খ্রিস্টাব্দ থেকে ৪০০ থেকে খ্রিস্টপূর্বাব্দ ২০০) অ্যাপোডেমাস অর্কনেই প্রজাতির ওই ইঁদুরের বসবাস ছিল, যার একটিও অবশিষ্ট নেই বলে সাম্প্রতিক এক প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় প্রমাণ পাওয়া গেছে। ঘরকুণো এসব ইঁদুরের আরও একটি এবং চতুর্থ একটি উপ-প্রজাতিও শিগগিরই বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন জীববিজ্ঞানীরা। তারা জানান, দ্বীপমালার ফাওলা দ্বীপের আইলের মতো সৈকতে ব্রোঞ্জ যুগ থেকেই বসবাসকারী অ্যাপোডেমাস সাইলভ্যাটিকাস প্রজাতির ইঁদুরের আর অল্প কয়েকটি মাত্র টিকে আছে।
ঘরকুনো স্কটিশ প্রাণীদের আরও একটি সেটল্যান্ড ঘোড়াও ধীরে ধীরে চলে যাচ্ছে বিপন্ন তালিকায়। ১৬০৩ সালে লিখিত ইতিহাস থেকে জানা গেছে, তার আকারের জন্য এ প্রজাতির ঘোড়া সবচেয়ে শক্তিশালী বলে পরিচিত।
আধা ঘরকুনো শূকরের প্রজাতি গ্রিস বিলুপ্ত হয়ে গেছে ১৯৩০ সালেই।
এছাড়া বিপন্ন হয়ে যাচ্ছে স্থানীয় প্রজাতির সৈকত কুকুর সেলটি, গরু ও হাঁস-হংসীরাও। ১০০০ বছর ধরে দ্বীপে বসবাস করা সেটল্যান্ড ভেড়াও রয়েছে ঝুঁকিতে। ইউনসট দ্বীপের দুই সর্পিল পাহাড়ের উদ্ভিদ মাউসকানও এখন দুর্লভ।
প্রাণীরা ছাড়াও দুর্গম সেটল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের বাসিন্দারাও রুক্ষ প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করছেন। পরিণামে তারাও রয়েছেন ঝুঁকিতে।
স্কটল্যান্ডের প্রাগৈতিহাসিক এবং তৃতীয় বৃহত্তম স্কটিশ ও পঞ্চম বৃহত্তম ব্রিটিশ এ দ্বীপপুঞ্জে মেসোলিথিক যুগ থেকেই মানুষেরা বাস করে আসছে। শতাধিক ছোট-বড় দ্বীপের ১৬টিই জনঅধ্যুষিত। মোট জনসংখ্যা মাত্র ২৩ হাজার ২১০ জন।
সবচেয়ে ছোট, বিচ্ছিন্ন ও প্রত্যন্ত ফাওলা দ্বীপের বাসিন্দা মাত্র ৩০ জন, অথচ সেখানেও পাঁচ হাজারের বেশি বছর ধরে মানুষের বসবাস।
প্রকৃতি ও জীববিজ্ঞানীরাও এখন এদের রক্ষায় নানা উদ্যোগ নিচ্ছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০০৫৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৬
এএসআর/এটি