মহাকাশে সুরক্ষা ছাড়া গেলে যে কেউ বাতাসের অভাবে মুহূর্তের মধ্যে মারা যাবে। কিন্তু একটি প্রজাতির ক্ষুদ্র প্রাণী মহাশূন্যের সেই চরম প্রতিকূল পরিবেশেও বেঁচে থাকতে পারে।
মাত্র ১ থেকে দেড় মিলিমিটার লম্বা টারডিগ্রেডস্ প্রজাতির প্রাগৈতিহাসিক মূলত জলজ প্রাণীটি ‘জলভালুক’ নামে পরিচিত।
২০০৭ সালে হাজার হাজার টারডিগ্রেডকে উপগ্রহে সংযুক্ত করে মহাকাশে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। স্যাটেলাইটটি পৃথিবীতে ফিরে আসার পর বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখতে পান যে, তাদের অনেকগুলো বেঁচে আছে। কিছু নারী টারডিগ্রেড এমনকি মহাকাশে ডিম পাড়ে এবং সদ্য জন্মানো প্রাণীগুলো সুস্থ ছিল।
এটি শুধু মহাশূন্যের রূঢ় অবস্থায়ই বেঁচে থাকতে পারে তা নয়, পৃথিবীর কঠোরতম অঞ্চলেও বাস করতে দেখা গেছে এদেরকে। তারা আবিষ্কৃত হয়েছে জাপানের উষ্ণ ঝরনায়, হিমালয়ের ৫ হাজার ৫৪৬ মিটার উচ্চতার একটি পর্বতে, সমুদ্রের নিচে এবং অ্যান্টার্কটিকার বরফের মাঝেও। ১৫০ সেন্টিগ্রেড গরম ও উত্তপ্ত আবহাওয়া থেকে শুরু প্রায় পরম শূন্য তাপমাত্রাকেও প্রতিরোধ করতে পারে এই ক্ষুদ্র প্রাণীরা।
শুধু তাই নয়, ৫০০ মিলিয়ন বছরেরও বেশি আগে ক্যামব্রিয়ান যুগ থেকেই টিকে আছে টারডিগ্রেডরা। যখন থেকে প্রথম জটিল প্রাণী বিবর্তিত হয়েছে, তখন থেকেই তারা আবিষ্কৃত হয়েছে তারা। এটা স্পষ্ট যে, বিবর্তনের ধারায় তারা বিশেষ সর্বংসহা ধরনের প্রজাতিতে পরিণত হয়েছে।
এখন টারডিগ্রেডদেরকে গভীর বরফে পরিণত করে, পেষণ করে বা শুকিয়ে মহাকাশে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আবার ফিরিয়ে আনার পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হচ্ছে। তারা জানতে চেষ্টা করছেন, কিভাবে এই আপাতদৃষ্টিতে তুচ্ছ প্রাণীটি সব ধরনের চরম অবস্থার মধ্যে বেঁচে থাকে এবং কেন তারা এভাবে পরাশক্তির মতো বিবর্তিত হয়েছে?
৫০০ মিলিয়ন বছরেরও বেশি আগের ক্যামব্রিয়ান যুগের টারডিগ্রেডের ফসিল আবিষ্কারের পর তার শারীরিক গঠন ও ভেতরের বিন্যাস পর্যবেক্ষণ করে বিজ্ঞানীরা জানান, টারডিগ্রেড না খেয়ে প্রায় এক যুগের মতো থাকতে পারে। মাইক্রোস্কোপিক এ প্রাণী ক্রিপটোবায়োসিস নামের একটি সুপ্ত অবস্থার মধ্য দিয়ে যায়। তখন তাদের শরীরের বিপাক ক্রিয়া পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। তারা শূন্যের নিচে ৪৫৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট থেকে ২০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় পর্যন্ত বাঁচতে পারে। এমনকি ছয় হাজার অ্যাটমোস্ফিয়ার চাপেও এগুলো টিকে থাকতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭২৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০১৬
এএসআর