উত্তর মেরুর দক্ষিণের শহর আলাস্কার ব্যারোতে সাড়ে ৪ হাজার মানুষের বসবাস। মহাসাগর ও তুন্দ্রা অঞ্চল দিয়ে আবদ্ধ শহরটির বাসিন্দাদের জন্য রয়েছে মাত্র আটটি রেস্টুরেন্ট এবং তিনটি দোকান।
ফলে ৬১ শতাংশ এস্কিমো অধ্যুষিত শহরটির মানুষগুলোর জন্য নেই কোনো বিনোদন। জীবিকার জন্য বো-হেড তিমি, সিল, বল্গা হরিণ ও মেরু ভালুক শিকার ছাড়া অন্য কিছুই করারও নেই। শিকার করা ও প্রধান খাদ্য হিসেবে আর্কটিক প্রাণীগুলোর মাংস খাওয়া এতোটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, আলাস্কাবাসীর হাজার বছরের সভ্যতা-সংস্কৃতির অংশও হয়ে উঠেছে।
শত শত বছর ধরে বছরে দু’বার বো-হেড তিমি শিকার করে আসছেন ব্যারোবাসী। এটি মানুষের জীবনে অর্থ ও চর্বিহীন খাদ্য এনে দেয়। সিলের চামড়াও তাদের নৌকায় ব্যবহার করেন। খাবার স্বাদু করতে লাগে সিলের তেল। শিকার, নৌকা ও আর্কটিক খাদ্য মেনু-রেসিপি আলাস্কানদের জীবনযাত্রার প্রতীক।
বছরে প্রায় ৪৪ মিলিয়ন পাউন্ড মাংস আসে ব্যারো থেকে। জীবিকার অংশ হিসেবে ব্যক্তিপ্রতি ৩৭৫ পাউন্ড সংগ্রহ করেন। স্থানীয় সিল-তিমি শিকারিদের মাধ্যমে তাই বিপুল রাজস্বও আসে।
কিন্তু এই টেকসই জীবনধারা ও সংস্কৃতিই এখন হুমকির মুখে পড়ে গেছে। আর্কটিক অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তনে বরফ গলা এবং বিষাক্ত হয়ে ওঠা পরিবেশের কারণে সবকিছু হারিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, বরফে আটকে থাকা পলিক্লোরিনডটেড বাইফিনাইলস্ (PCBs) এর মতো রাসায়নিক দূষণে হারিয়ে যেতে বসেছে সিল ও বো-হেড তিমিরা, নষ্ট হচ্ছে তাদের খাদ্য শৃঙ্খল ও বাসস্থান। সংক্রমিত এসব প্রাণীর মাংস খেয়ে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ে আলাস্কার মানুষেরাও একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি।
গ্রিনল্যান্ডের একটি মেরু ভালুকের মস্তিষ্কে গত বছরের এক গবেষণায় উচ্চমাত্রার রাসায়নিক দূষক পেয়ে জানান, এর প্রভাব মানুষের ওপরও পড়ছে।
অন্যদিকে পৃথিবী উষ্ণ হতে থাকায় আর্কটিক সমুদ্রের বরফ গলে যাচ্ছে। স্থানীয় উদ্ভিদ ও প্রাণীদের জন্য এটিও অশুভ ফলাফল বয়ে আনেছে।
ফলে ব্যারোর সভ্যতা ভবিষ্যতে হুমকিতে পড়ে যাবে। হারিয়ে যাবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে গড়ে ওঠা সংস্কৃতিও, যা সম্পর্কে শুধুমাত্র ইতিহাস বইয়েই পড়তে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০১৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০১৬
এএসআর