পৃথিবীতে এ পর্যন্ত পাওয়া ৩৭ হাজার ২৯৬ প্রজাতির মাকড়সা ৩ হাজার ৪৫০ গণ ও ১০৬ গোত্রে শ্রেণীবদ্ধ। এর মধ্যে আছে ছোট ও বড় বিভিন্ন প্রজাতি।
সব প্রজাতির স্ত্রী ও পুরুষ মাকড়সা আলাদা আলাদা প্রকৃতির। তবে এদের সবারই সঙ্গম পূর্বরাগ যথেষ্ট ব্যাপক। প্রজাতিভেদে এটি নানা প্রকার। সাদামাটা সঙ্গম থেকে আছে জটিল রাসায়নিক, চাক্ষুষ বা স্পন্দনযুক্ত সংকেত পর্যন্ত।
স্ত্রী মাকড়সা সাধারণত রেশম থলেতে ডিম পাড়ে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ডিম না ফোটা পর্যন্ত স্ত্রী মাকড়সা সেটি বয়ে বেড়ায়। বড় আকারের মাকড়সা, বাগানের মাকড়সা ইত্যাদি ডিম পাড়ার মাত্র ১-২ মাস আগে বয়োঃপ্রাপ্ত হয়। স্ত্রী মাকড়সা সাধারণত ১-২টি বড় আকারের থলে উৎপাদন করে তাতে কয়েক হাজার ডিম পাড়ে।
ছোট জাতের মাকড়সারা বড়দের আগেই বয়োঃপ্রাপ্ত হয় এবং জীবনকালের সিংহভাগই প্রজননকর্মে কাটায়। এরা কয়েকটি থলে উৎপাদন করে ও তাতে থাকে অপেক্ষাকৃত কম সংখ্যক ডিম।
ব্রাজিলের উবারল্যান্ডিয়া ফেডারেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণী গবেষক রাফায়েল রিওস মোওরা এবং তার সহকর্মীরা পুরুষ-নারী মাকড়সার সঙ্গম ও পূর্বরাগ এবং ডিমের থলি নিয়ে তাদের জালে থেকে কি ভাবে ডিম রক্ষা করে তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে জানিয়েছেন বিচিত্র সব তথ্য।
মোওরা জানান, স্বজাতিভুক বনবিড়াল মাকড়সা (লিন্স্ক স্পাইডার) প্রজাতির নারী মাকড়সারা পূর্বরাগ ও যৌন মিলন শেষে তার পুরুষ সঙ্গীকে খেয়ে ফেলে। আর অক্ষিগোলক (ম্যানেগিয়া পোরাসিয়া) পুরুষ মাকড়সারা সন্তান জন্মদানের সময় স্ত্রীর মৃত্যু বা জীবন সংকটের কারণে সন্তান জন্মের পর থেকেই বড় করার দায়িত্ব পালন করে, যা বিষ্ময়কর ও অভিনব।
‘জন্মের পর বাচ্চা মাকড়সারা জালের হালকা সুতা দিয়ে বিশেষত ওপরে ওঠে এবং বাতাসে ভেসে থাকে। অন্য প্রজাতির মায়েরা তাদের বড় হওয়া পর্যন্ত দেখ-ভাল করলেও ম্যানেগিয়া পোরাসিয়া বাবারা সে দায়িত্ব পালন করে’- বলেন মোওরা।
আকার ছাড়া বৃদ্ধির সময় মাকড়সার আর বিশেষ কোনো পরিবর্তন ঘটে না। বয়ঃপ্রাপ্ত হওয়ার আগে অন্তত ২-১৪ বার তারা কৃত্তিকা ছেড়ে বাড়তে থাকে।
মাকড়সাদের জীবনকাল বিভিন্ন, সম্ভবত বেশিরভাগের ক্ষেত্রেই ১ মাস থেকে ১ বছর। ট্যারেন্টুলা মাকড়সা স্বাভাবিক অবস্থায় কতো বছর বাঁচে জানা না গেলেও বন্দি অবস্থায় ২০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। স্ত্রীরা অপেক্ষাকৃত দীর্ঘজীবী।
মোওরার ভাষ্যমতে, ‘উভয় লিঙ্গের অপ্রাপ্তবয়স্ক মাকড়সাই জালে থাকে। কিন্তু যখন যৌন পরিপক্কতা আসে, পুরুষরা তাদের জালে চড়ে বেড়াতে থাকে নারী মাকড়সার খোঁজে। সঙ্গম ও প্রজননের সুযোগ অনুসন্ধানে জন্য পুরুষরা এমনকিও জালে লটকে বা সরাতেও থাকে। মাইনাস জেরাইস প্রজাতির পুরুষ সঙ্গম ও পূর্বরাগে সেরা। তারা সাধারণত ধারণক্ষম নারীদের নিজের জালে আকৃষ্ট বা তাদের জালে আক্রমণ করে। এ সময় তাদের মাঝে প্রচণ্ড পূর্বরাগ দেখা দেয়, যা ঝাঁকি দিয়ে সঞ্চালন করে নারীদের মাঝে’।
‘পরে একটি পুরুষকে খুঁজে পাই, যেটি একটি মহিলার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মিলিত হয়েছে’।
মোওরা বলেন, ‘লিন্স্ক স্পাইডার পুরুষ সঙ্গমের পর অন্য সঙ্গিনীর খোঁজে জালের ওপরে চলে আসে। অভিমানী মহিলা তখন পূর্বরাগ আইনের ধারায় পুরুষদের খেয়ে ফেলে’।
‘অবশেষে এ প্রজাতির পুরুষরা ক্ষয়প্রাপ্ত হতে পারে। কিছু পুরুষ এমনকি ইচ্ছাকৃতভাবে নিজেদের বলিদানের আগে ডিম রক্ষা করে যায়। কিন্তু পুরুষ ম্যানেগিয়া পোরাসিয়া এ নিয়ম অনুসারে চলে না। তাদের জালে ডিমের থলি এবং সন্তান রক্ষা ও লালন-পালন করে’- বলেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১২১৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০১৬
এএসআর