ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অফবিট

যেমন ছিল আমাদের সরাসরি পূর্বপুরুষেরা

অফবিট ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৬
যেমন ছিল আমাদের সরাসরি পূর্বপুরুষেরা

প্রায় সাড়ে চার মিলিয়ন বছর আগে বিবর্তিত  প্রজাতি হিসেবে শুরুর কিছুকাল পরেই পৃথিবী নিয়ন্ত্রণে চলে আসে মানুষের। বিবর্তনের ধারায় আমাদের অর্থাৎ সর্বাধুনিক মানুষ ‘হোমো স্যাপিয়েন্স স্যাপিয়েন্স’ প্রজাতির আবির্ভাব মাত্র ৪৫ থেকে ৮০ হাজার বছরের মধ্যে।

প্রায় সাড়ে চার মিলিয়ন বছর আগে বিবর্তিত  প্রজাতি হিসেবে শুরুর কিছুকাল পরেই পৃথিবী নিয়ন্ত্রণে চলে আসে মানুষের। বিবর্তনের ধারায় আমাদের অর্থাৎ সর্বাধুনিক মানুষ ‘হোমো স্যাপিয়েন্স স্যাপিয়েন্স’ প্রজাতির আবির্ভাব মাত্র ৪৫ থেকে ৮০ হাজার বছরের মধ্যে।

আমাদের পূর্বপুরুষেরা কালে কালে নানা প্রজাতিতে বিবর্তিত হলেও আগের সবগুলোই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তাদের মধ্যে আমাদের সরাসরি পূর্বপুরুষ হোমো ইরেক্টাস ও হোমো ইরগ্যাস্টারদের স্থায়িত্বকাল ছিল ২৩-২৪ লাখ বছর আগে থেকে শুরু করে আমাদের প্রজাতির উদ্ভবকাল পর্যন্ত।   হোমো ইরেক্টাসই হচ্ছে প্রথম হোমিনিনি, যারা ১৭ থেকে ১৫ লাখ বছর আগে অভিবাসন শুরু করে।    

১৯৮৪ সালে হোমো ইরেকটাস্‌ প্রজাতির পূর্ণাঙ্গ কঙ্কালের অববয়ব বা জীবাশ্ম আবিষ্কারের পর প্রাথমিক প্লেইস্টোসিন সময়ের এ প্রজাতির মানুষ ‘উন্নত মানব’ বা প্রথম পর্যায়ের ‘আধুনিক মানুষ’ হিসেবেও স্বীকৃতি পেয়েছে।

উত্তর কেনিয়ার মরুভূমি হ্রদ তুরকানায় পাওয়া যায় এ প্রজাতির প্রাগৈতিহাসিক মানবশিশুর জীবাশ্মটি আবিষ্কার করেন বেসিন ইনস্টিটিউটের রিচার্ড লিকির নেতৃত্বে গবেষক দলের সদস্য কামোইয়া কিমিও।

গবেষণা করে লিকি বলেন, আট বছর বয়সে মারা যাওয়া ‘তুরকানা বয়’ বা ‘নারিওকোটমি বয়’ এর জীবাশ্মটি আবিষ্কারের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানব প্রজাতি হোমো ইরেক্টাস বিষয়ে জানতে শুরু করেছি আমরা’।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের স্টোনি ব্রুক বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবাশ্মবিদ জন শিয়াও বলেন, এটি মানুষের বিবর্তন সম্পর্কে নতুন প্রশ্ন উত্থাপন ও নতুন আলোকপাত করার পাশাপাশি আমাদের পূর্বপুরুষ ও স্তন্যপায়ীদের চারপাশে ছড়িয়ে পড়ার প্রথম পদক্ষেপ সম্পর্কেও জানায়।


হোমো ইরেক্টাস বা ইরেক্টরা ছিল মাঝারি উচ্চতার মানুষ এবং দুই পায়ে সোজা হয়ে হাঁটতে পারতো। তাদের মস্তিষ্কের খুলিটি অবনত, কপাল একটু পেছনের দিকে হেলানো এবং নাক, চোয়াল ও তালু প্রশস্ত। আধুনিক মানুষের তুলনায় তাদের মস্তিষ্কের আয়তন কম, কিন্তু দাঁতের দৈর্ঘ্য বেশি। তবে আগের প্রজাতি হোমো হ্যাবিলিসের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বড় মস্তিস্ক ও অনেক লম্বা ছিল।


বিজ্ঞানীরা শিশুটির জীবাশ্ম পরীক্ষা করে জানান, প্রাপ্তবয়স্ক ইরেক্টাস ১৬৩ থেকে ১৮৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হতো। শিশুটির শ্রোণীচক্র ওজনকেন্দ্রিক, অর্থাৎ কিছু বহন করার সময় হাঁটতে পারতো।

২০১৩ সালে গবেষণা করে জীবাশ্মবিদ স্পেয়ার্স জানান, তার হাতের শারীরিক গড়ন থেকে বোঝা যায়, তার পরিবার হয়তো বর্শার মতো শিকারের সরঞ্জাম বহন করতো। হোমো ইরেক্টাসের মাধ্যমে নিক্ষেপের ক্ষমতা বিবর্তিত হয়েছে। অন্যদিকে আমাদের নিকটতম আত্মীয় উল্লুকদের খুব সামান্য নিক্ষেপের ক্ষমতা আছে। আমাদের বানর জাতীয় পূর্বপুরুষ, যারা গাছই বেশি থাকে, তাদেরও নিক্ষেপের ক্ষমতা সম্ভবত একইভাবে খারাপ ছিল’।

‘এর মানে দাঁড়ায় যে, ইরেক্টাস পুরনো প্রজাতিদের চেয়ে আরো নিবিড়ভাবে অনুসরণ করতে পারে। এ ক্ষমতা দিয়ে তারা সীমানার বাইরে প্রসারিত হয়’।

‘তুরকানা বালকদের সময়ে জলবায়ু অত্যন্ত পরিবর্তনশীল ছিল। অরণ্য তার পূর্বপুরুষদের সময়ে আরো উন্মুক্ত হতে থাকে। তৃণভূমি পরিবর্তন ও প্রসারিত হতে থাকে। বড় শিকারিদের থেকে লুকানোর জন্য জায়গা কমে যাওয়ায় প্রথমবারের মতো এই হোমিনিনি মানুষেরা পশ্চাদপসরণ করতে থাকায় তারা আধুনিক হয়েছে বলে মনে হচ্ছে’।

‘এর মানে দাঁড়ায় যে, গোড়ার দিকে এক প্রজাতির মানুষ অন্যদের সঙ্গে ক্ষমতা ও তথ্য ভাগ করে নেয়। বেশি নিরাপত্তা পেতে তারা গ্রুপ ধরে বাস, কাজ ও শিকার শুরু করায় আরো সামাজিক জীবেও পরিণত হয় ইরেক্টাসরা’- বলেন শিয়া।
    
এই সময় থেকে হাতিয়ারের ব্যবহার শুরু হয়। অ্যাকুওলিয়ান নামক হাত কুড়াল আফ্রিকাজুড়ে ও বিশ্বের অন্য অংশে অন্তর্ভুক্ত হয়। ২০১১ সালে তুরকানা হ্রদে যে অ্যাকুওলিয়ান আবিষ্কৃত হয়েছিল, যা ১৭ লাখ ৬০ বছরের বছরের পুরনো এবং হোমো ইরেক্টাসরা তৈরি করেছিল। হয়েছে। এ অস্ত্র দিয়ে শিকারের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও মাংস কেটে ভাগ করা হতো।


যুক্তরাজ্যের লন্ডন ইউনিভার্সিটি কলেজের দে লা টোরি বলেন, ‘অ্যাকুওলিয়ান প্রযুক্তিই অনেক আকার ও আয়তনে আসে। আবির্ভাবের পর এটি মিলিয়ন বছরেরও বেশি সময় ধরে চলতে থাকে। সঙ্গত কারণেই হাতের সাহায্যে বহুমুখী কাজে সক্ষম এ অস্ত্র প্রস্তরযুগগের ছুরির সমতুল্য ছিল’।


জন শিয়া বলেন, ‘এটি অন্যদের শিকার শিক্ষা দিতেও তাদের জন্য সহজ হয়েছে। তার মানে এই নয়, হোমো ইরেক্টাসদের ভাষা ছিল বা তারা কথা বলতে পারতো। প্রায় ৫০০ জনকে পাথরের হাতিয়ার ব্যবহার করতে শেখানো হয়েছে এবং তারা সহজেই কথা বলা ছাড়া অন্যদের শেখাতে পারতো বলেও প্রমাণ পাওয়া গেছে’।

বাংলাদেশ সময়: ২৩৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৬
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।