চার্লস ডারউইনই প্রথম জানিয়েছিলেন যে, মানুষ বানর জাতীয় পূর্বপুরুষ থেকে বিবর্তিত হয়। কেন আমাদের এতো অল্প চুল তারও ব্যাখ্যা দেন তিনি।
মানুষের নিকটতম পূর্বপুরুষ বিভিন্ন প্রজাতির হোমিনিনদের উল্লুকের মতো অনেক পশম ছিল। দিনের বেশিরভাগ সময় সূর্যের জ্বলজ্বলে গরমের বাইরে থাকায় তাদের বেশি পশম শীতের রাতে উষ্ণতার জন্য দরকারি ছিল। কিন্তু একটি বিবর্তনীয় চাপে তারা পশম হারায়।
১৯৭৪ সালে ইথিওপিয়ার গবেষকদের আবিষ্কৃত ৩২ লাখ বছর বয়সী হোমো অস্ট্রালোপিথেকাস অ্যাফারেনসিস্ (ডাকনাম লুসি) নারীর জীবাশ্ম পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা জানান, তাদের চামড়া সংরক্ষিত না হলেও তারা চুলে আবৃত ছিল। লুসি অনেকটা শিম্পাঞ্জির মতো হলেও সে সোজা হয়ে হাঁটতে পারতো এবং সামান্য বড় মস্তিষ্ক ছিল।
পরে মানব প্রজাতি অভিবাসিত এবং আরো বেশি কাজ ও মাংস খেতে শুরু করায় চুল কমতে শুরু করে।
যুক্তরাজ্যে লিভারপুল জন মুরস বিশ্ববিদ্যালয়ের পিটার হুইলার জানান, বাড়তি তাপে গিয়ে কাজ করতে গিয়ে তাদের খোলা আবাসস্থলের প্রয়োজন হয়। তাদের ঘাম ঝরার হার বাড়ে এবং মস্তিস্কের ঘিলু উত্তপ্ত হতে থাকে। ফলে আদি মানবদের মাঝে ঘামের মাধ্যমে তাপ শোষণের ক্ষমতা বিবর্তিত হতে থাকে। এ কারণেও চুলের হার কমতে থাকে।
যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যামাস ডেবিড ব্যারেট বলেন, শীতল থাকতে ঘাম একটি দরকারী জিনিস। মহাজাতি হোমোর প্রথম বিবর্তনের সময়কালেই আমাদের চুলের ঘনত্ব হারিয়ে বেশি ঘামগ্রন্থি অর্জন আরো খোলা জীবনধারায় সম্পৃক্ত হতে সহায়তা করে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির নৃ-বিজ্ঞানী নিনা জাবলোনস্কি জানান, আবার দুই পায়ে সামনে এগোনো, শিকার ধরা ও শিকারি এড়ানো, জলবায়ু পরিবর্তন, বন কমা ও প্রতিকূল পরিবেশের ধাক্কায় চুলের হার কমাতে বাধ্য হয় মানুষ।
নৃ-বিজ্ঞানী দায়ূদ-ব্যারেট বলেন, ‘আমাদের অনেক বেশি সময় ধরে চলার ক্ষমতাও আমাদের সাফল্যের চাবিকাঠি বলে ধারণা করা হয়। চুল এক্ষেত্রে ক্ষতির কারণ হয়ে বিপরীত দিকে চালাতে পারে’।
এরপরের ধাপে আমাদের সরাসরি পূর্বপুরুষ হোমো ইরেক্টাস ১৭ লাখ বছর আগে থেকে প্রথম প্রাগৈতিহাসিক মানব হিসেবে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। তাদের আগের প্রজাতির চেয়ে বড় ঘিলু ও বুদ্ধি বেশি ছিল। হোমো ইরেক্টাসরাই নিজেদেরকে উষ্ণ রাখতে আগুনের ব্যবহারও শিখে ফেলে। কারণ, পশম ছাড়া তারা ঠাণ্ডা থেকে সামান্য সুরক্ষা পেতো।
ডেভিড ব্যারেট যুক্তি দেন যে, দুই মিলিয়ন বছর আগের এ পর্যায়ে আগুনের আবিষ্কার হলেও নিয়মিতভাবে রান্না করা খাবার খাওয়া শুরু হয় ৫ লাখ বছর আগে। তখন আরও বেশি ঘাম ঝরানোর প্রয়োজনীয়তায় চুলের ঘনত্বও কমতে থাকে।
১২ লাখ বছর আগে MC1R জিন, যা গাঢ় ত্বকের রঙের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, যুক্ত হয়
হয় আমাদের শরীরে। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় সূর্য ও দ্রুত অন্ধকার ত্বকের বিবর্তনেও প্রচণ্ড ধাক্কা দেয়। MC1R এর বিকল্প উপস্থিতিতে আমাদের পূর্বপুরুষ গায়ের রঙ পরিবর্তনের পাশাপাশি চুল শূন্যতার দিকে এগোয়।
আরেকটি ধারণা যে, উকুন আমাদের ত্বকের ক্ষতি করতে থাকায় নিজেদেরকে রক্ষা করতেও আমরা চুল হারাতে থাকি।
লিভারপুল জন মুরস বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভ উইলকিনসন বলেন, আধুনিক হোমো ও প্রাচীন মানুষের মধ্যে সরাসরি শারীরিক যোগাযোগের মাধ্যম ছিল আমাদের চুল। পশম হারানোই আজকের আধুনিক মানুষ হয়ে উঠতে আমাদের সহায়তা করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ০০৫৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০১৬
এএসআর