ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অফবিট

দুই পায়ে হাঁটার সুবিধাগুলো..

অফবিট ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৬
দুই পায়ে হাঁটার সুবিধাগুলো.. ছবি: সংগৃহীত

আমাদের প্রাগৈতিহাসিক পূর্বপুরুষদের মধ্যে প্রথম দুই পায়ে হাঁটা মানুষের জীবাশ্ম নিয়ে গবেষণায় দেখা গেছে, পূর্ব আফ্রিকার বনভূমির আশেপাশে এসব প্রজাতির প্রাণীর হাড়গুলো পাওয়া যায়।

আমাদের প্রাগৈতিহাসিক পূর্বপুরুষদের মধ্যে প্রথম দুই পায়ে হাঁটা মানুষের জীবাশ্ম নিয়ে গবেষণায় দেখা গেছে, পূর্ব আফ্রিকার বনভূমির আশেপাশে এসব প্রজাতির প্রাণীর হাড়গুলো পাওয়া যায়।

বনভূমি কমে যাওয়া এবং ভূ-তাত্ত্বিকভাবে সক্রিয় হওয়া বিশেষত আগ্নেয়গিরি বা জলভাগ আন্দোলিত হলে মানুষের পূর্বপুরুষদের আগের বাসস্থান থেকে সরে যেতে হচ্ছিল বার বার।

জীবাশ্ম রেকর্ড আরও বলছে, দুই পায়ে হেঁটে এই স্থানান্তরও তুলনামূলকভাবে আমাদের বিবর্তনের শুরুর দিকে ঘটেছে। আমাদের নিজের প্রজাতি আধুনিক মানুষ হোমো স্যাপিয়েন্সরা বিবর্তিত হয়েছে হোমো অস্ট্রালোপিথেকাস অ্যাফারেনসিস্ প্রজাতি থেকে (সরাসরি পূর্বপুরুষ হোমো ইরেক্টাস হয়ে)। ৩৬ লাখ ৬০ হাজার বছর আগের এ প্রজাতির পদচিহ্নের জীবাশ্ম পাওয়া গেছে উত্তর তাঞ্জানিয়ার শুকিয়ে যাওয়া নদীগর্ভ লাইটোলিতে থেকে।

ছবি: সংগৃহীতলাইটোলি পদচিহ্নের মালিক হোমিনিডিন অস্ট্রালোপিথেকাসদের থেকেই আমাদের দুই পায়ে হাঁটার শুরু বলেও জানান বিজ্ঞানীরা।

চারপদ থেকে দ্বিপদ প্রাণীতে বিবর্তিত হওয়ার পর আমাদের দেহের কেন্দ্রের অধীনতা পায়ে চলে আসে। সরাসরি চিন্তার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিবর্তন ঘটে। স্থায়ীভাবে উঠে দাঁড়িয়ে স্পর্শ, অন্বেষণ, কুড়ানো, নিক্ষেপ এবং শিখতে পারার নতুন সুযোগ খুলে যায় আমাদের প্রাগৈতিহাসিক পূর্বপুরুষদের জন্য।  

আমাদের কাটা-বাঁকা শরীর থেকে একটি স্বতন্ত্র ঋজু আকৃতিতে গঠিত হয় এবং কোমর ওপরে আমাদের শরীরের ওজন আনতে সহায়তা করে। এবং যখন হাঁটা হয়, তখন মস্তিষ্ক সাহায্য করে। এছাড়াও আমাদের নিম্নবাহু আর বড় হয়েছে, যার মাধ্যমে আমরা আরও বড় ও দক্ষ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সক্ষম হই।

আমাদের পূর্বপুরুষদের পায়েরও পরিবর্তন ঘটে। পায়ে নমনীয়তা আসা ও আঙ্গুল খাটো হওয়ায় তারা দুই পায়ে ঘন বন ছেড়ে প্রায়ই আসা-যাওয়ার সুবিধা পায়। তাদের শিকার কৌশলও উন্নত হয়। দ্বিপদী মানুষেরা অস্ত্র নিক্ষেপ করে বড় ও দ্রুত চলন্ত শিকার ধরার সুবিধা পায়।

খোলা প্রান্তরে দক্ষভাবে চলাচল, পর্বতমালায় ওঠা-নামার জন্যও মানুষের পা আরো অনেক সূক্ষ্ম ও নমনীয় হয়। পাশাপাশি পেশি সংকুচিত-প্রসারিত করার ক্ষমতা জন্মে। দুই পায়ে হাঁটার ক্ষেত্রে বাটি আকৃতির নিতম্ব ভালো সুবিধা দেয়।

প্রয়োজনে পাথুরে ঢালে আশ্রয় নেওয়া, গাছে ওঠা-নামা বা পিচ্ছিল মাটিতে ও পানির উৎস থেকে চলন্ত পদক্ষেপের ক্ষেত্রেও সমানভাবে উন্নতি করতে পারে তারা।

ছবি: সংগৃহীত গবেষকরা বলেন, এ বিবর্তন আমাদের পূর্বপুরুষদের গরম আফ্রিকান সূর্যের অধীনেও শীতল থাকার সুবিধা দিয়েছে বলে মনে করেন। কেননা, আমাদের পূর্বপুরুষেরা তাদের শরীরের চুল হারিয়ে ত্বকের মাধ্যমেই কার্যকরভাবে ঠাণ্ডা করার ক্ষমতা পায়।

লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের নেতৃস্থানীয় নৃ-বিজ্ঞানী ক্রিস স্ট্রিংগার বলেন, শিকারের অস্ত্র বহন ও চালানোর জন্য হাতকে মুক্ত করার প্রয়োজন থেকেই ঋজু হয়ে দুই পায়ে হাঁটার বৈশিষ্ট্যে বিবর্তিত হয় প্রাচীন মানুষ। হাঁটার দূরত্বে বিভিন্ন কাজ করতে সহনশীলতা অর্জন এবং পরিশেষে এ গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপটি আমাদের পূর্বপুরুষদের বড় মস্তিষ্ক অর্জন ও সারা পৃথিবীর নেতৃত্ব দখলেও সহায়ক হয়েছে’।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৬
এএসআর/টিআই

 

 

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।