আমাদের বিলুপ্ত পূর্বপুরুষ ও সমসাময়িক মানব প্রজাতির মধ্যে হোমো নিয়ান্ডারথ্যালেন্সিস্ বা নিয়ান্ডারথাল ও ডেনিসোভানস্রা কথা বলতে সক্ষম ছিল বলে প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় জানা গেছে।
ওই দুই প্রজাতির চেয়ে আমাদের প্রজাতি হোমো স্যাপিয়েন্সদের মস্তিষ্ক ভিন্ন আকৃতির।
আমাদের মুখের ছোট খণ্ড শব্দের বিরতি করতে সক্ষম, যা মস্তিষ্কের অধীনে সরাসরি সংযুক্ত। তাই আমাদের শব্দ তৈরির ক্ষমতা আরও ভালো। বিপরীতভাবে, নিয়ান্ডারথাল ও অন্যান্য প্রাচীন হোমিনিন প্রজাতির খুলির আরও সামনে তাদের মুখ ছিল। এটি স্বরবর্ণের মতো কঠিন নির্দিষ্ট শব্দ বাছাই করে তোলে। ফলে নিয়ান্ডারথালদের ভাষা গানের মতো শোনাতো।
আধুনিক মানুষেরা যে সময়ে আফ্রিকা ত্যাগ করে, সে সময়কার অলঙ্কার, জহরত, পৌরাণিক প্রাণীর রূপক চিত্রায়ন এবং বাদ্যযন্ত্র খুঁজে পেয়েছেন প্রত্নতত্ত্ববিদরা। এটি প্রমাণ করে যে, নিয়ান্ডারথাল ও ডেনিসোভানরা শিল্পও তৈরি করতে পারতো।
ইউরোপের ৪০ হাজার বছর আগের ওইসব মানুষের তৈরি কোনো কোনো শিল্প তাদেরকে চিনতেও আমাদের জন্য সহায়ক হয়েছে। সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল একটি কাঠের সিংহমানব মূর্তি, যা জার্মানির লোওয়েনমেনস্ক গুহায় খুঁজে পাওয়া যায়। একই সময়ের একই ধরনের ভাস্কর্য ইউরোপের অন্যত্রও আবিষ্কৃত হয়েছে।
২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকার গুহায় আবিষ্কৃত হোমো নালেদি প্রজাতির প্রাগৈতিহাসিক মানবেরা আমাদের সরাসরি পূর্বপুরুষ আধুনিক, এমনকি আদি আধুনিক কোনো গোত্রেরও সদস্য নয়। অথচ, তাদের সঙ্গে আমাদের আধুনিক ও বর্তমান প্রজাতির অদ্ভুত মিল রয়েছে। তার একটি হচ্ছে, কেউ মারা গেলে একটি নির্দিষ্ট গুহায় কবর দেওয়া হতো, অর্থাৎ, সেটি ছিল তাদের কবরস্থান। আবার এমন অন্ধকার ও দুর্গম গুহায় আলো নিয়ে ঢুকেছিল হোমো নালেদিরা। তাইতো মনে করা হচ্ছে, আগুন আবিষ্কার ও নিয়ন্ত্রণেও আনতে পেরেছিল তারা। প্রায় ২৮ লাখ থেকে ২৫ লাখ বছর আগের ওই প্রজাতির আবিষ্কৃত কয়েকশ’ হাড় পর্যালোচনায় জানা গেছে, বিলুপ্ত অনেক হোমিনিন প্রজাতির চেয়ে তাদের শিল্পশৈলী অনেক ভালো ছিল।
বিভিন্ন প্রজাতির যেসব প্রতীকী শিল্পকর্ম পাওয়া গেছে, সেগুলো অবশ্য একটি পুরো অস্ত্রাগারের কাজ করাতে প্রয়োজনীয় ছিল না। এর মানে দাঁড়ায় যে, বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন প্রজাতির সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য বিনিময় হয়েছে।
এক্ষেত্রে সামাজিক জীবন ব্যবহার ও শিল্প গড়তে আমাদের অদ্বিতীয় ক্ষমতা নেতৃত্বে বসাতে সহায়ক হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০১৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৬
এএসআর