আমাদের পাঁচ লাখ বছর আগের পূর্বপুরুষের একটি দেহাবশেষের জীবাশ্মে একটি হায়নাকে চিবিয়ে খাওয়ার চিহ্ন ছিল। হায়নার হাড় ভেঙে চিবানোর কারণে মানুষটির দাঁত ক্ষতিগ্রস্ত ছিল।
আমাদের প্রজাতি আধুনিক মানুষ হোমো স্যাপিয়েন্স ও সমসাময়িক নিয়ান্ডারথালদের সাধারণ পূর্বপুরুষ একটি পৃথক প্রাগৈতিহাসিক প্রজাতি হোমো রোডেসিয়েননিস্ এর জীবাশ্ম ছিল সেটি।
প্লেইস্টোসিন যুগের ওই জীবাশ্মে দাঁতের মধ্যে হাড়ের টুকরাটিও পাওয়ার পর বিজ্ঞানীরা বলছেন, সে সময়কার প্রাগৈতিহাসিক মানুষেরা বড় মাংসাশী প্রাণীদের শিকার করে খেতো।
১৯৯৪ সালে মরক্কোর জীবাশ্ম সমৃদ্ধ ক্যাসাব্লাংকা শহরতলির একটি গুহার মধ্যে মানুষটির দেহাবশেষ আবিষ্কৃত হয়।
তার একটি ঊর্বস্থিত হাড় পলল স্তর থেকে উদ্ধারের পর দেখা যায়, একটি মাংসাশী হায়নার বিভিন্ন হাড় ভাঙা ও কামড়ের দাগ ছিল। প্রাণীটির পায়ের ফিমার হাড় চাবানোর চিহ্নও পাওয়া গেছে তার দাঁতে। গবেষকরা বলেন, ‘এটি বিস্ময়কর যে, হোমিনিন জীবাশ্মে বৃহৎ মাংসাশী প্রাণীকে গোগ্রাসে খাওয়ার প্রমাণ মিলেছে’।
জার্মানির বিবর্তনমূলক ম্যাক্স প্লাংক নৃ-বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের জাঁ জ্যাক লিপজিগ হাবলিন বলেন, এটি একটি প্রাগৈতিহাসিক মানব জীবাশ্ম হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছিল। হাড় ভাঙ্গা ও চিবানোর ফলে মানুষটির দাঁত ক্ষতিগ্রস্ত ছিল। বেশ কিছু খোঁচা ক্ষতও তার হাড়ে পরিষ্কারভাবে দৃশ্যমান ছিল। হাড়ের উভয় প্রান্তে সঞ্চালিত এ ধরনের ক্ষতি ও দাঁতে হাড়ের চিহ্ন থেকে বোঝা যায় যে, একটি বৃহৎ মাংসাশীর দ্বারা তৈরি হয়েছে সেগুলো।
গুহা থেকে পাওয়া জীবাশ্ম আরও প্রমাণ করে, আধুনিক হায়েনাদের বিলুপ্ত পূর্বপুরুষদের ডেরা ছিল গুহাটি। এর পর সেটি দখল করে নেয় মানুষেরা।
‘দেখে মনে হচ্ছে, গুহাটি মানুষের ও অন্য মাংসাশী প্রাণীদের দ্বারা ব্যবহার করা হয়েছে। তাই সেখানে দুইপক্ষের মধ্যে শারীরিক লড়াই হয়’- বলেন হাবলিন।
প্যারিসের ফ্রান্স জাতীয় জাদুঘরের প্রাকৃতিক ইতিহাস গবেষক ক্যামেলিয়া ডাউজিয়ার্ড বলেন, ‘এই আদি মানুষেরা ভয়ঙ্কর শিকারি ছিল। তারা হাড় ভাঙার সঠিক পদ্ধতিও জানতো। আর মানুষটির দাঁতের ক্ষতি একটি হায়েনাকে খাওয়ার সঙ্গে সবচেয়ে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল’। ‘আমরা জানি যে, হোমো রোডেসিয়েননিস্ মানুষেরা জটিল অস্ত্র ব্যবহারে পারদর্শী ছিল। তারা মধ্য প্লেইস্টোসিন পশুদের আক্রমণ ও হত্যা করতে ভারি বর্শা ও হাত কুড়াল ব্যবহার করতো। তাদের শিকারে অবশ্যই হায়েনাদের মত মাংসাশী প্রাণী অন্তর্ভুক্ত ছিল’।
হাবলিন বলেন, ‘মানুষ ছিল প্লেইস্টোসিন সময়ে বিরল প্রাণী। একটি হায়েনা বা বড় বেড়াল বা অন্য কিছু খাওয়ার আরও সুযোগ ছিল, এটি সত্য। পাশাপাশি এটিও সত্য যে, হোমিনিনদেরও প্রাণনাশ করতে সক্ষম ছিল মাংসাশী প্রাণীরা। কারণ, গোড়ার দিকে মানুষের মতোই তারাও ভয়ঙ্কর শিকারি ছিল’।
ডাউজিয়ার্ড বলেন, নতুন এ আবিষ্কার এটিই প্রমাণ করে যে, বিপজ্জনক প্রাণীগুলোকে সফলভাবে খাদ্যের একটি উৎসে পরিণত করা মানুষের বেঁচে থাকার ভালো কৌশল হয়েছিল। এমনটি করায় মানুষকে একযোগে একটি খাবার দেওয়ার পাশাপাশি একটি হুমকিকেও সরিয়ে নিচ্ছিল।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৬
এএসআর