মানুষের প্রসব বেদনা, যন্ত্রণা ও এর মৃত্যুঝুঁকির সমস্যা নিয়ে বিজ্ঞানীরা বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে প্রথম চিন্তা শুরু করেন। তারা শিগগিরই একটি ধারণা ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হন।
তারা বলেন, এ সমস্যার শুরু আমাদের বিবর্তনীয় বংশের নিকটতম হোমিনিন সদস্যদের থেকে।
প্রাগৈতিহাসিক মানুষের প্রসব নিয়ে গবেষণা কঠিন বিষয় নয়। হোমিনিনদের জীবাশ্মে শ্রোণীচক্রের রেকর্ড কদাচিৎ সংরক্ষিত হয় এবং নবজাতকের খুলি মাটিতেও পাতলা হয়। কিন্তু সামান্য প্রমাণ থেকে মনে হয় যে, আমাদের প্রাগৈতিহাসিক জীবনযাত্রার সূচনা থেকেই হোমিনিন শিশুর জন্মনাড়ি তাদের মায়ের বার্থ ক্যানেল বা জন্মখালের মাধ্যমেই চালু ছিল। ফলে জন্ম প্রক্রিয়াও সহজ ছিল।
প্রায় সাত মিলিয়ন বছর আগের প্রাণীদের জীবাশ্মের সঙ্গে প্রাচীনতম হোমিনিনদের তুলনামূলক গবেষণার মাধ্যমে কিছু গবেষক মনে করেন যে, আমাদের সঙ্গে তাদের বৈশিষ্ট্য কয়েক ভাগে মিলে যায়, সম্ভবত একটি ছাড়া। আর সেটি হচ্ছে, ওই প্রাথমিক পর্যায়েও হোমিনিনরা দুই পায়ে ঋজু ভঙ্গিতে হাঁটতে শিখে গিয়েছিল।
আর দক্ষতার সঙ্গে দুই পায়ে হেঁটে চলাচল করতে গিয়েই হোমিনিনদের কঙ্কাল বা স্কেলেটন ধাক্কা খেয়ে সামনের দিকে এগিয়ে আসে এবং একটি নতুন আকৃতি পায়। ফলে তার শ্রোণীচক্র আক্রান্ত হয়।
বেশিরভাগ স্তন্যপায়ীদের মতোই বন্যমানুষ পর্যায়ে হোমিনিনদের শ্রোণীচক্র ও নারীদের জন্মখাল অপেক্ষাকৃত সরল ছিল। এটি হাঁটতে শেখার পরে শিগগিরই ভিন্ন চেহারা নিতে শুরু করে। নারীদের হিপ অপেক্ষাকৃত সরু ও জন্মখাল বিকৃত হয়ে ওঠে। একটি সিলিন্ডারের আকার-আকৃতি তার দৈর্ঘ্য বরাবর বৈচিত্র্যময় হয়ে উঠতে থাকে।
ফলে আমাদের প্রাগৈতিহাসিক কালের তুলনায় শিশুর জন্মনাড়ি ও নারীদের জন্মখাল খারাপ পর্যায়ে চলে যায়। ফলে জন্মদান প্রক্রিয়া আগের তুলনায় কঠিন হতে শুরু করে। তবে সেটি আজকের মতো এতো ব্যথা উৎপাদনকারী বা ঝুঁকিপূর্ণ হয়নি কখনোই।
প্রায় দুই লাখ বছর আগে আমাদের হোমিনিন পূর্বপুরুষদের শরীরে আবারও পরিবর্তন হতে শুরু করে। তারা বানর জাতীয় একটি অপেক্ষাকৃত ছোট শরীর, লম্বা হাত ও ছোট মস্তিষ্কের বৈশিষ্ট্যগুলো হারিয়ে ফেলে। পরিবর্তে তারা লম্বা দেহ, খাটো অস্ত্র এবং বড় ঘিলুর মতো মানুষের মতো বৈশিষ্ট্যগুলো আরো বেশি লাভ করতে শুরু করে।
বিশেষ করে যে নারীদের জন্য গত যেসব বৈশিষ্ট্য খারাপ খবর বয়ে আনছিল, সেগুলোর উত্তরণ ঘটতে শুরু করে।
সর্বশেষ পরিবর্তনটি আসে আমাদের প্রজাতি হোমো হোমো স্যাপিয়েন্স স্যাপিয়েন্সদের সঙ্গে আফ্রিকা থেকে অভিবাসনের পর আমাদের সরাসরি পূর্বপুরুষ হোমো ইরেক্টাস ও সমসাময়িক মানব প্রজাতি হোমো নিয়ান্ডারথ্যালেন্সিস বা নিয়ানডারথালদের সঙ্গে সাক্ষাতের পর।
বিবর্তন বা বিলুপ্ত ওই দুই প্রজাতির সঙ্গে মেলা-মেশা ও শঙ্করায়নে প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের জন্মখাল ও শ্রোণীচক্র সংকীর্ণ হতে থাকে। শিশুদের জীবন শুরুও হতে থাকে খারাপ দিয়ে। একদিকে নারী হোমিনিন দুই পায়ে দক্ষতার সঙ্গে হেঁটে যেতে যোগ্য থেকে যোগ্যতর হতে থাকে। অন্যদিকে নবজাতক শিশুর মাথা বড় হতে থাকে। ফলে ওই সংকীর্ণ জন্মখাল ও শ্রোণীচক্র দিয়ে শিশুর জন্ম কঠিন থেকে কঠিনতর হয়। পুরো প্রক্রিয়াটি মর্মভেদীভাবে বেদনাদায়ক ও সম্ভাব্য প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে।
তাই বিবর্তন যেন নিজেই নিজের সঙ্গে দ্বন্দ্বে মাতলো ওই সময় থেকে।
বাংলাদেশ সময়: ০২৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৬
এএসআর