মানুষের জন্ম দেওয়ার প্রক্রিয়া একটি দীর্ঘ ও যন্ত্রণাদায়ক। এমনকি এটি মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
এ পরিসংখ্যানকে ভয়াবহ বলে মনে করেন যুক্তরাজ্যের লন্ডনে ইউনিভার্সিটি কলেজের শৈশব পুষ্টি চর্চা বিশেষজ্ঞ জোনাথন ওয়েলস। তবে তিনি জানান, ‘স্তন্যপায়ী মায়েদের জন্য এটি অত্যন্ত বিরল যে, সন্তান উৎপাদনে একটি উচ্চমূল্য পরিশোধ করতে হয় না’।
পাশাপাশি মানুষের জন্য প্রসব ঝুঁকিপূর্ণ হওয়া ও মাতৃমৃত্যুর হার বাড়ার সঙ্গে বিবর্তনের সম্পর্ক রয়েছে বলেই গবেষণা শেষে জানিয়েছেন ওয়েলস এবং তার সহকর্মীরা।
তবে ওয়েলস বলেন, এ সমস্যা দীর্ঘ সময় আগে থেকে খারাপ পর্যায়ে যায়নি।
২০১২ সালে বিভিন্ন সময়ে প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে শুরু করে একেবারে আধুনিক মানুষের বিভিন্ন প্রজাতির জীবাশ্ম নিয়ে ওই গবেষণা করেন ওয়েলস ও তার দল। প্রসবের ওপর আলোকপাত করে একটি বিস্ময়কর সিদ্ধান্তে পৌঁছান তারা।
আর সেটি হচ্ছে, বিবর্তনের ইতিহাসে মানুষের বেশিরভাগ প্রজাতির প্রসব অনেক সহজ ছিল। তবে আমাদের প্রজাতি আধুনিক মানুষ হোমো স্যাপিয়েন্স স্যাপিয়েন্সদের প্রসব বেদনা ও মাতৃমৃত্যুর হার বেশি হয়েছে বিবর্তিত হওয়ার পর থেকেই।
হোমো অস্ট্রালোপিথেকাস অ্যাফারেনসিস্ থেকে স্যাপিয়েন্সরা বিবর্তিত হয়েছে হোমো ইরেক্টাস হয়ে। সে হিসেবে হোমো ইরেক্টাস আমাদের সরাসরি পূর্বপুরুষ। এদিকে মানব হোমো নিয়ান্ডারথ্যালেন্সিস বা নিয়ানডারথালরা আমাদের অনেক আগে পৃথিবীতে এলেও সমসাময়িক ছিল। কারণ, আফ্রিকা থেকে ইউরোপ-এশিয়ায় অভিবাসনের পর থেকে একসঙ্গে বসবাস ছিল স্যাপিয়েন্সদের।
হোমো ইরেক্টাস ও নিয়ান্ডারথালদের জন্য জন্মদান অপেক্ষাকৃত সহজ ছিল বলেও জানান ওয়েলস।
আমরা ছাড়া সব মানব প্রজাতিই আজ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তবে নিয়ান্ডারথাল বা সমসাময়িক প্রজাতিগুলোর সঙ্গে আমাদের মিলনে-মিশ্রণে নতুন শঙ্কর প্রজাতির সৃষ্টি হয়েছে কিংবা আমরাই শঙ্করায়িত হয়ে হাইব্রিড বৈশিষ্ট্য ধারণ করেছি- এ ধরনের অসংখ্য ঘটনার প্রমাণও বের হয়ে আসছে। আমাদের আদি বা প্রথম পূর্বপুরুষ থেকে বিবর্তনের বিভিন্ন পর্যায়ে অভিযোজনের ফলে বৈশিষ্ট্য অর্জন-পরিবর্তনের চিহ্ন তো আছেই।
‘কাজেই আজকের পরিসংখ্যান এটিই প্রমাণ করছে, বিবর্তন বা শঙ্করায়নই আধুনিক নারীদের প্রসবকালে প্রাণঘাতী জটিলতা, সমস্যা, ব্যথা ও ঝুঁকি বাড়িয়েছে। আধুনিক জীবন পেতে নারীদের প্রসবের জন্য অসাধারণ উচ্চমূল্য দিতে হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে’- বলেন ওয়েলস।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৬
এএসআর