সাদা চিনামাটির পাত্র, মাঝে গোল করে একটি-দুটি-তিনটি নীল রঙা বৃত্ত। খুবই সাদামাটা।
ততদিনে প্রয়াত সেই মৃৎশিল্পীর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বময়। তার হাতের যাদুতে তৈরি হয় আরও অনেক বাসন-কোসন। যা এখন বিশ্বের জাদুঘরগুলোতেই মূলত স্থান করে নিয়েছে। কারিগরের খ্যাতি মানেই তার সৃষ্টির সুনাম, সঙ্গে সঙ্গে তার দাম বেড়ে চলা। আর বাড়তে বাড়তে এক সময় তার মূল্য আর বস্তুর দরে সীমাবদ্ধ থাকে না, সুনামটাই তখন বড় হয়ে দেখা দেয়।
তেমনটাই হয়েছে লুসি রি’র এই সাদা চিনামাটির পাত্রের ক্ষেত্রে। ৮ ইঞ্চি ঘেরের, তিন ইঞ্চি উচ্চতার এই পাত্র যখন নিলামে তোলা হলো প্রাথমিক ধারনা ছিলো দাম ভালোই উঠবে তবে তা কোনও ভাবেই ৩০ হাজার পাউন্ড ছাড়াবে ন। নিলামের হাতুড়ি গিয়ে যখন থামলো ততক্ষণে এটির জন্য দাম হাঁকা হয়ে গেছে ১ লাখ ৩৮ হাজার পাউন্ড। এর সঙ্গে এটা সেটা ফি মিলিয়ে মোট দর ১ লাখ ৭৩ হাজার পাউন্ড।
মজার ব্যাপার হচ্ছে এই সময়ে ব্রিটেনে চিনা-মাটির পাত্রের সবচেয়ে নামি প্রতিষ্ঠান আইকি’র যে কোনও স্টোরে ঠিক এমন একটি পাত্রের দর চার পাউন্ডের বেশি পড়বে না।
আরও মজার ব্যাপার যিনি এই পাত্রটি এত্ত দরে কিনেছেন তিনি তার নাম পরিচয় গোপন রেখেছেন। আর তার হাঁকা দরে এমন একটি পাত্র বিশ্ব রেকর্ড করলো। আর লুসি রি’র কোনও সামগ্রী দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ দরে বিক্রি হলো।
১৯৭৬ সালে লুসির একটি কোনিকাল ধরনের বাটি বিক্রি হয় ৮৫ হাজার পাউন্ডে।
নিউইয়র্কের ফিলিপস নামের নিলামি প্রতিষ্ঠানটি এই নিলাম ডাকে। ফিলিফসের মুখপাত্র বলেছেন, তারা জানেন লুসি রি’র তৈরি পাত্রগুলোর নিলাম মূল্য এভাবে বাড়তেই থাকবে।
স্টুডিও পোটারিতে লুসি রিকে বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারিগর বলে জ্ঞান করা হয়। এই নারী কুমোরের প্রতিটি কাজেরই থাকে আলাদা বৈশিষ্ট্য যা এই সালাদপাত্রেও বর্তমান। চল্লিশ বছর পরেও এই পাত্র সবদিক থেকে অক্ষত রয়েছে, এতটুকু ক্ষয় কোথাও হয়নি।
লুসি রির জন্ম ১৯০২ সালে অস্ট্রিয়ার এক ইহুদি বাবা-মায়ের ঘরে। ১৯২০ সালে ভিয়েনায় তিনি আর্ট স্টুডিও গড়ে তোলেন। তখন থেকেই পারিস ইন্টারন্যাশনাল আর্ট এক্সিবিশনে স্থান পেতে থাকে তার তৈরি পাত্র-সামগ্রী।
১৯৩৮ সালে নাৎসিদের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে ইংল্যান্ডে পারি জমান। সেখানে হাইড পার্কের কাছে নিজের স্টুডিও প্রতিষ্ঠা করেন।
ভিক্টোরিয়া ও আলবার্ট জাদুঘরে তার মৃৎশিল্পকর্ম স্থান পায়। ১৯৯০ সালে পাত্র-সামগ্রী বানানো ছেড়ে দেন। আর ১৯৯৫ সালে ৯৩ বছর বয়সে তিনি মারা যান।
বাংলাদেশ সময়: ২২৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৬
এমএমকে