২০০৩ সালে প্রাগৈতিহাসিক মানব হোমিনিনের একটি ক্ষুদ্র প্রজাতি ইন্দোনেশিয়ার ফ্লোরেস দ্বীপপুঞ্জের লিয়াং বুয়া দ্বীপে আবিষ্কৃত হয়। এটির বৈজ্ঞানিক নাম হোমো ফ্লোরেসিয়েনসিস্ দেওয়া হলেও বেশ কিছু গবেষক এখন জানাচ্ছেন, সেটি আধুনিক মানুষ হোমো স্যাপিয়েন্সের কোনো পূর্বপুরুষ বা হোমো গণের ছিল না।
‘হবিট’ নামে পরিচিত রহস্যময় এ প্রজাতিটিকে অবশ্য কেউ কেউ অসমর্থিতভাবে আমাদের আদিম পূর্বপুরুষ কোনো কোনো মানব প্রজাতির সঙ্গে আত্মীয়তা করাতে চান। কিন্তু এর সমর্থনে কোনো প্রমাণ মেলেনি।
১ লাখ বছর আগে থেকে ফ্লোরেসে বসবাস করতো হবিটরা, তবে ১৫ থেকে ১৮ হাজার বছর আগে চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে যায়।
হবিটরা দুই মিলিয়ন বছরের মানব ইতিহাসের ধারায়ই বিবর্তিত হয়েছে। কিন্তু তাদের মস্তিষ্ক ছোট ছিল, যা আধুনিক শিম্পাঞ্জিদের চেয়ে সামান্য বড়। এমনকি সাম্প্রতিককালের অন্যান্য মানব প্রজাতির সঙ্গে একই সময়ে পৃথিবীতে পদচারণা করলেও হবিটদের শরীর ও মস্তিষ্ক আধুনিক মানুষের তুলনায় ছোট ছিল। তারা মাত্র সাড়ে তিন ফুট লম্বা ও ২৫ কেজি পর্যন্ত ওজনের হতো।
বিশ্বের বাকি স্থান থেকে বিচ্ছিন্ন ফ্লোরেসে বসবাসও তাদের ছোট আকারের আরেকটি ফ্যাক্টর। কারণ, দ্বীপটি একটি বামন হাতির পূর্বপুরুষদেরও আবাসস্থল ছিল।
এ প্রাণীটি প্যালিওঅ্যানথ্রপোলোজিস্টস্ নামক অনন্য প্রজাতিরও প্রতিনিধিত্ব করে না। এটিতে কেবলমাত্র ডুয়ারফিজম নামের আধুনিক মানুষের একটি ফর্ম পাওয়া গেছে, যে ফর্মে অ্যাকোনড্রপ্লেসিয়ার কারণে ক্ষুদ্র মাথা হয়। এটি মাইক্রোসেফ্যালি বা ডাউন সিন্ড্রোম হিসাবে একটি জেনেটিক ডিজঅর্ডারের ফল।
ফ্রান্সের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের আন্তনিও ব্যালজেও ও ফ্রান্সের প্যারিস দেকার্ত ইউনিভার্সিটির ফিলিপ চারলিয়ার হবিটের মাথার খুলির হাড় নিয়ে যৌথ গবেষণা শেষে জানান, ‘তার খুলির আকৃতি স্পষ্টভাবে আধুনিক মানুষের চেয়ে আলাদা। এমনকি তার রোগও মানুষের নয়। হবিট তাই আমাদের প্রজাতির ছোট ও রোগাক্রান্ত সদস্য নয়। এর মাঝে আরো অনেক বহিরাগত বিষয় অন্তর্ভূক্ত হয়েছে’।
যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ব্রুকস ইউনিভার্সিটির শিমোন আন্ডারডাউন বলেন, ‘আধুনিক মানুষের কোনো পরিচিত প্রজাতির সঙ্গেও তার কিছুই মেলে না। যেমন, তার আকৃতি আমাদের সরাসরি পূর্বপুরুষ হোমো ইরেকটাস থেকেও ভিন্ন। তার চোখও খুব ছোট হয়। হবিটদের চিবুক গভীরভাবে আবৃত, যেখানে আমাদের চিবুক সামনের দিকে আবৃত। একটি চিবুকের উপস্থিতিই আমাদের প্রজাতির সংজ্ঞা দেওয়ার মতো বৈশিষ্ট্য অর্জন করেছে, সেখানে হবিটরা অন্য কোনো হোমিনিনে আবিষ্ট’।
কোনো কোনো বিজ্ঞানী অবশ্য মনে করেন যে, হোমো ফ্লোরেসিয়েনসিস্দেরকে আমাদের নিজস্ব মহাজাতি হোমোর খুব আদিম কোনো কোনো প্রজাতির সঙ্গে আরোপিত করা যায়। তার কঙ্কালে এসব প্রজাতির মানুষের মতো কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। আবার বন্য মানুষের ‘আদিম’ গ্রুপ অস্ট্রালোপিথস্ বা বিখ্যাত লুসি’র ঘনিষ্ঠ আত্মীয় বলেও মনে করেন তাকে। তবে লুসির খুলি পূর্ব আফ্রিকার ইথিওপিয়ায় আর হবিটের খুলি ফ্লোরেসের লিয়াং বুয়া দ্বীপে পাওয়ায় এ মত প্রমাণিত নয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পেন স্টেট ইউনিভার্সিটির রবার্ট ইখারডট্ বলেন, ‘আধুনিক মানুষের চেয়ে পৃথক জিনগত অবস্থা ও করোটির হাড়ের বৈপরীত্যের কারণে হবিটকে একটি আলাদা প্রজাতি হিসেবে বর্ণনা করা যায়’।
যুক্তরাজ্যের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম অব লন্ডনের ক্রিস স্ট্রিংগার নতুন ডেটিং গবেষণা করছেন হবিট জীবাশ্ম নিয়ে। তার মতে, ‘গবেষণা এ প্রজাতি সম্পর্কে নতুন অর্ন্তদৃষ্টি দিতে পারে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা স্পষ্টভাবে মানব মহাজাতির চক্রে হবিট প্রজাতির অবস্থান নিশ্চিত করতে পারিনি’।
বাংলাদেশ সময়: ০৩১৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৬
এএসআর