চীনে আবিষ্কৃত অত্যাশ্চর্য জীবাশ্ম কোনো পরিচিত হোমিনিন প্রজাতির বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এটি নতুন প্রজাতির মানুষ হতে পারে বলেই ধারণা তাদের।
উত্তর চীনে পাওয়া জীবাশ্ম পরীক্ষা করে গবেষকরা জানান, মানুষের অজানা ওই প্রজাতি ৬০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার বছর আগে সেখানে অভিবাসিত হয়েছিল। অথবা পরিচিত দু’টি প্রজাতির শঙ্কর প্রজননে জন্ম নিতে পারে।
ওই সময় চারটি মানব প্রজাতি পৃথিবীতে বেঁচে ছিল। আমাদের প্রজাতিআধুনিক মানুষ হোমো স্যাপিয়েন্স তখন পর্যন্ত আফ্রিকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। সমসাময়িক নিয়ান্ডারথালরা ইউরোপ ও এশিয়ায় এবং ডেনিসোভানরা ইন্দোনেশিয়ায় বাস করতো। এছাড়া ইউরেশিয়ায় হবিট নামে পরিচিত একটি রহস্যময় চতুর্থ দল ছিল হোমো ফ্লোরোসিয়েনসিস্, যারা ডেনিসোভানের সঙ্গে নিয়ান্ডারথালের ইন্টারব্রিড বলে ধারণা বিজ্ঞানীদের।
কিন্তু নতুন প্রজাতিটির বৈশিষ্ট্য নিয়ান্ডারথাল ও স্যাপিয়েন্সসহ আধুনিক মানুষদের কোনো প্রজাতির সঙ্গেই মিলছে না। প্রাপ্ত তথ্য ও ছবি তার পরিচয় সম্পর্কে জানাকে আরো জটিল করে তুলেছে।
চীনের জুজিয়াও এর একটি গুহায় ১৯৭৬ সালে তাদের কিছু খুলিরটুকরা এবং চার ব্যক্তির নয়টি দাঁত আবিষ্কৃত হয়েছিল। দাঁতগুলোরবিস্তারিত বিশ্লেষণ আমেরিকান দৈহিক নৃ-বিজ্ঞান জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
সেখানে স্পেনের বার্গোস মানব বিবর্তন ন্যাশনাল রিসার্চ সেন্টারের মারিয়া মারটিনন টরেস ও তার সহকর্মীরা বলেছেন, দাঁতগুলোর ঢালেরপ্রতিটি খাঁজ উপত্যকার বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন একটি প্যাটার্ন বা সমন্বয় করেছে, যা একটি স্বতন্ত্র প্রজাতির হতে পারে।
তারা দাঁতের আকার, সারিবদ্ধ মাড়ি, রুট পদ্ধতি, খাঁজ, শিখর ও শিখাএবং সবগুলোর অবস্থান ও একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত থাকার আকৃতিনিয়ে গবেষণা করেন। পরে প্রায় সব পরিচিত হোমিনিন প্রজাতিরপ্রতিনিধিত্বমূলক ৫ হাজারেরও বেশি দাঁতের সঙ্গে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করেন।
ওই গবেষকদের মতে, এটি স্পষ্ট যে, দাঁতগুলো স্যাপিয়েন্সদের সঙ্গেসাদৃশ্যপূর্ণ ছিল না। আবার কিছু দাঁত পুরনো প্রজাতি হোমোইরেক্টাসদের মতো আর কিছু নিয়ান্ডারথালদের মতো বিভিন্ন আদিম বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন।
একই গুহায় পাওয়া অন্যান্য চেনা প্রজাতির কঙ্কালের শরীরের অংশের সঙ্গেও দাঁতগুলো মাপসই হয়নি।
মারটিনন টরেস বলেন, দাঁতগুলো একটি নতুন প্রজাতির প্রতিনিধিত্বকরতে পারে। আমরা দেখেছি, আমাদের জন্য এটি একটি অজানা গ্রুপ।
তিনি বলেন, ‘এটি হোমো স্যাপিয়েন্সের নয়, এটি হোমো নিয়ানডারথালেনসিসেরও নয়। তারা কিছু খুব আদিম প্রজাতির একটি মিশ্রণ, যা বর্তমানে অজানা’।
বিতর্ক থাকলেও বিজ্ঞানীদের সবাই একমত যে, দাঁতগুলোর নমুনা ছোটহলেও দৃঢ়ভাবে আগে অচেনা প্রজাতির উপস্থিতির প্রমাণ করে।
বাংলাদেশ সময়: ০৪৪৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৬
এএসআর