প্রত্নতত্ত্বগুলো বর্তমানে ইয়েরেভান স্টেট মিউজিযামে আর্মেনিয়ান ইতিহাস সংগ্রহের অংশ হিসেবে সংরক্ষিত হচ্ছে।
তবে উত্তর-পূর্ব তুরস্কের প্রত্যন্ত পার্বত্যাঞ্চলের মধ্যযুগীয় শহর আনি হচ্ছে একটি জীবন্ত জাদুঘর।
শত শত বছর ধরে বিভিন্ন রাজ্য ও সাম্রাজ্যের অধীনে থাকা সাবেক আঞ্চলিক শক্তি মালভূমির শহর আনি এখন ভুতুড়ে পরিত্যক্ত।
তুরস্কের কার্স প্রদেশের ৪৫ কিলোমিটার দূরবর্তী আখুরিয়ান নদীর উপত্যকার শহর আনি শহরে এক লাখ মানুষের বাস ছিল সেই মধ্যযুগেই। আনি’র একাধিক স্থানে মেলা বাড়ি ধ্বংসাবশেষ, কুমোরখানা থেকে দুরন্ত সব স্থাপত্যের গির্জা এর সত্যতা প্রমাণ করেছে।
খ্রিস্টপূর্ব ১০০০ সালে ব্রোঞ্জ যুগ থেকে শুরু করে তিনশ’ বছর আগে পরিত্যক্ত হওয়ার আগে পর্যন্ত আনিতে মেলা লাখো স্থাপত্যের নিদর্শন আজও বিশ্বের কাছে বিষ্ময়কর।
বিশেষ করে সৌন্দর্যমণ্ডিত অসংখ্য গির্জার কারণে আনিকে এককালে বলা হতো ‘এক হাজার এক গির্জার শহর’৷ আনি’র আর্মেনিয়ান শাসক ও শহরের বণিকদের এসব উপাসনালয় সর্বশ্রেষ্ঠ স্থাপত্য ও শৈল্পিক মন দিয়ে পরিকল্পিতভাবে গড়া ছিল। তুর্কি-আর্মেনীয় টানাপড়েনে ও কালক্রমে অনেকগুলো ধ্বংসাবশেষে পরিণত হলেও শাস্ত্রীয় পুরাতত্ত্ববিদরা বিভিন্ন স্থানে যে ৪০টি গির্জার সন্ধান পেয়েছেন, সেগুলো পৃথিবী বিখ্যাত হয়ে আছে আজও।
মালভূমির শেষ প্রান্তে সন্ত গ্রেগরির গির্জাটি তৈরি হয় দশম শতাব্দীর শেষ দিকে৷ গির্জাটির নিচে উপত্যকা ও নদী৷ টিগ্রান হোনেন্টস নামের এক ধনী ব্যবসায়ীর উদ্যোগে তৈরি গির্জাটির ভেতরের সব প্রাচীর-প্রাকার সেই আমলের দেয়ালচিত্র দিয়ে ঢাকা৷ ফ্রেস্কোগুলির দু’টি মূল বিষয়বস্তু হল খ্রিস্ট্র ও সেন্ট গ্রেগরির জীবন৷
শহরের দক্ষিণ প্রান্তে খাড়া ক্যাথেড্রালটি তৈরি হয় ১০০১ সালে৷ দূরে একটি রুশ ওয়াচ টাওয়ার থেকে আর্মেনীয় প্রহরীরা তুর্কি সীমান্তের দিকে এখন নজর রাখেন৷
অ্যাসট রাজবংশের রাজা তৃতীয় অ্যাসট নির্মিত কামারশালা ১০০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে আর্মেনীয় সামন্ততান্ত্রিক রাজ্যগুলোর বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্বের প্রতীক। এই রাজা কার্স্ থেকে আনিতে তার রাজ্যের রাজধানী স্থানান্তর করেন। ফলে এ শহরটির বর্ধনশীলতার একটি চিহ্ন হয়ে দাঁড়ায় কামারশালাগুলো।
লায়ন গেট বা সিংহ দুয়ার সম্ভবত ছিল শহরের মূল তোরণ৷ ১৯৯৬ সালে পুনর্নির্মাণের সময় এর প্রাচীর, দালান ও তোরণের অনেকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷
আনি’র মূল রাজপথটি এ সিংহদুয়ার থেকে নগরদুর্গের দিকে গেছে৷ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগেই এখানে প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজে একটি সুপ্রাচীন পানি সরবরাহ ব্যবস্থা আবিষ্কৃত হয়, যা মাটির নিচ দিয়ে চলে গেছে৷
মিনুচিহর মসজিদটি নগরদুর্গ আর ক্যাথেড্রালের মাঝামাঝি৷ মসজিদের কাছে গরুর পাল চরে বেড়াতো৷ এটি নির্মাণ করেছিলেন শাদ্দাদিদ বংশের প্রথম আমির মিনুচিহর৷ একাদশ শতাব্দীতে শাদ্দাদিদরা আনি’র সম্রাট ছিলেন৷
আজও যেসব পর্যটক আনির অতীত গৌরব দেখতে আসেন, তারা দেখতে পান মরে যাওয়া শহরের অনন্য বাড়ি-ঘর, কারিগরি শিল্প সমৃদ্ধ গির্জা থেকে আখুনিয়ান নদীর সবকিছুই। কিন্তু প্রাণের স্পন্দনের অভাবে আনি’র কান্না আড়ালে বেজে চলে।
বাংলাদেশ সময়: ০৪২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০১৭
এএসআর/