আনি শহরকে ঘিরে গড়ে ওঠা বাইজান্টাইন ও অটোমানদের বিশাল সাম্রাজ্যের সেসব গৌরবগাথা আজও ইতিহাসে স্মরণীয়। আনির স্থাপত্যকলাও এখনও ইতিহাসবিদদের কাছে আগ্রহের বিষয়।
তুরস্কের কার্স প্রদেশের ৪৫ কিলোমিটার দূরবর্তী আখুরিয়ান নদীর উপত্যকার শহর আনি এক সময় ছিল বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যাধীন। তাদের কাছ থেকে অটোমানরা দখলে নেওয়ার পর এর স্বকীয় ঔজ্জ্বল্য বেড়ে যায়, সকলের নজর কাড়তে শুরু করে।
আর্মেনীয়রা তাদের পূর্ব-পশ্চিম বাণিজ্যপথের মধ্যমণি হিসেবে গড়ে তোলে আনিকে৷
সপ্তম শতাব্দীতে আর্মেনীয়দের নির্মিত নগরদুর্গটি থেকে তুর্কি-আর্মেনীয় সীমান্ত দেখা যায়৷ অবশ্য এলাকাটি সাধারণ মানুষের জন্য প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷
দশম ও একাদশ শতাব্দীতে আনি পরিণত হয় একটি আর্মেনীয় রাজবংশের রাজধানী৷ আধুনিক আর্মেনিয়া এবং তুরস্কের পূর্বাংশ জুড়ে ছিল সেই রাজ্য, যাকে আর্মেনীয়রা তাদের জাতীয় ঐতিহ্য ও সত্তার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ বলে গণ্য করে৷
এককালে এ শহরে ছিল এক লাখ মানুষের বাস৷ যুদ্ধ-বিগ্রহ, ভূমিকম্প, খননকার্য এবং দস্যুতার শিকার হয়ে তিনশ’ বছর আগে পরিত্যক্ত হওয়ার পর এর প্রাসাদ, দুর্গ ও ভবনগুলো ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ছে৷
‘দ্য সিটি অব আনি’র এককালের জীবনের স্পন্দন আর গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের আনাচে-কানাচে এখন শুধুই নিস্তব্দতা। কোথাও মানুষের চিহ্ন পাওয়া যায় না। প্রাণের স্পন্দন হারিয়ে ফাঁকা শহর আর পরিত্যক্ত নির্মাণের ভেতর দিয়ে শুধুই বাতাসের বয়ে যাওয়া শোঁ-শোঁ শব্দ। এটাই এখন আনি’র রোজকার সঙ্গী।
বাইজান্টাইনদের পর মোট তিনশ’ বছরে ছয়টি রাজবংশ আনিকে শাসন করেছিল। অটোমানদের সঙ্গে সঙ্গে জর্জিয়ান, তুর্ক, সেলজুক, বাগরাটিড আর্মেনিয়ানস ও আনির সিংহাসনে বসেছিল।
এ শহরের দখল নিয়ে যুদ্ধও কম হয়নি। ১৮৭৭-৭৮ সালে রাশিয়া-তুরস্ক যুদ্ধে আনির নিয়ন্ত্রণ হারায় অটোমানরা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর অটোমানরা ফের একবার আনি দখল করে। রিপাবলিক অব আর্মেনিয়া নামে স্বাধীন দেশ গঠিত হলে তার অন্তর্ভুক্ত হয় আনি।
কিন্তু আনি শহর ও তার রাজ্য তাদের প্রাপ্য বলে ফের যুদ্ধ শুরু করে তুরস্ক। ১৯২০ সালে চূড়ান্তভাবে আনিকে দখলে নিয়ে আসে তুরস্ক। কিন্তু এরপর থেকে আনি শহরের পতন শুরু। গত ৯৬ বছরে আনি শুধুই পরিত্যক্ত এবং ভুতুড়ে শহর।
যুদ্ধ-বিগ্রহের একটি ক্ষেত্র হিসেবে আনি’র ইতিহাস ও ধ্বংসাবশেষ থাকা সত্ত্বেও শহরটি সংস্কৃতি, ধর্ম এবং শিল্পসম্মত মোটিফের একটি অসাধারণ অদল-বদলের প্রতিনিধিত্ব করছে।
পরিত্যক্ত হলেও শহরটি তাই এখনো আর্মেনীয়দের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ঐতিহ্যের প্রতীক৷
আর আনি’র পুন:প্রতিষ্ঠায় বহুদিন ধরেই প্রচেষ্টা চালাচ্ছে তুরস্কের সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। তাদের উদ্যোগের ফসল হিসেবে আনিকে ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ’ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে জাতিসংঘ।
বাংলাদেশ সময়: ০৪৪১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০১৭
এএসআর