পক্ষান্তরে আদি আধুনিক স্যাপিয়েন্স প্রজাতির আমাদের পূর্বপুরুষেরা পৃথিবীতে আসে দেড় লাখ বছর আগে। ৭০ হাজার বছর আগে তাদের অভিযোজনের ফলে আধুনিক মানব ইতিহাসের সূচনা হয়।
হোমো ইরেক্টাস হলো পৃথিবীতে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় বেঁচে থাকা মানব প্রজাতি। তারা প্রায় ২০ লাখ বছর পৃথিবীতে বিচরণ করেছে।
৫০ হাজার বছর আগে অন্য তিন সহোদর প্রজাতির সঙ্গে মিলন-মিশ্রণের ঘটনা বেশি ঘটে আমাদের। মোটামুটিভাবে ১২ হাজার বছর আগে সর্বশেষ হোমো ফ্লোরোসিয়েনসিস প্রজাতির বামন-সদৃশ মানবেরা বিলুপ্ত হওয়ার পর পৃথিবীর একক কর্তৃত্ব আসে আমাদের হাতে।
প্রধানত মাংসাশী ও তৃণভোজী নিয়ান্ডারথাল ও ইরেক্টাসদের এতো বেশিদিন টিকে থাকার রহস্যও উদ্ঘাটন করেছেন বিজ্ঞানীরা। তাদের মতে, বন্য পরিবেশে তাদের মাংসাশী অভ্যাস আধুনিক মানুষের আগমনের পরে উল্লেখযোগ্য অসুবিধা তৈরি করে। কারণ, আমরা অন্যান্য অনেক খাদ্য উৎস শোষণ করি। ফলে দৃশ্যপটের দ্রুত পরিবর্তনে তাদের খাদ্য মেন্যুতে উদ্ভিদও যোগ হয়।
স্পেনের বার্সেলোনার ইনডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অধ্যাপক কারেন হার্ডি নিয়ান্ডারথালদের নিয়ে গবেষণা শেষে বলেন, তারা ঘাস, বাদাম ও শিম জাতীয় সবজি খাওয়ার পাশাপাশি স্বচিকিৎসায় ঔষধি উদ্ভিদ শুষ্ক ফুল ইয়ারো ব্যবহার করতো। এটি দাঁতের ব্যথা কমাতো, পেট খারাপ দূর করতো, রক্তপ্রবাহ ঠিক রাখতো এবং সীমাবদ্ধ ঘাম উৎপাদনে সহায়তা করতো। প্রাগৈতিহাসিক এ ঔষধির পুষ্টি মান সম্পর্কে জানতো তারা।
দাঁতে লেগে থাকা খাদ্যের অবশিষ্টাংশ, প্রাচীন গাছপালার মাইক্রো জীবাশ্ম ও আঁচড়ের দাগ বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা আরও জানান, পরিবেশ ও কোন পৌষ্টিক মানের খাবার খাওয়া যাবে- সে সম্পর্কে নিয়ান্ডারথালদের বিস্তারিত জ্ঞান ছিলো। ঝুঁকিপূর্ণ বিষাক্ত গাছপালাও প্রথম থেকেই আলাদা করতে পেরেছিল তারা।
২০০৯ সালে প্রকাশিত একটি জেনেটিক গবেষণা থেকে যে জিন তিক্ত স্বাদ উপলব্ধি করায়, সেটি নিয়ান্ডারথালদের ছিলো বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এটি ইঙ্গিত করে যে, তারা নিজেদের প্রক্রিয়ায় খাবারকে বিষমুক্ত করা ছাড়া এ ধরনের খাদ্য চিনতে ও খেতে পারতো।
‘এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বিষাক্ত ও খাওয়ার যোগ্য গাছপালার পার্থক্য করতে সক্ষম এ জিন। তিক্ত স্বাদ তাদেরকে বিষক্রিয়াগত মাথাব্যথা হয়- এমন বিষাক্ত খাদ্য এড়াতে ইন্দ্রিয়কে সচেতন করে তোলে’, বলেন হার্ডি।
২০১৬ সালে হার্ডি ও তার সহকর্মীরা ৫০ হাজার বছর বয়সী নিয়ান্ডারথালদের দাঁতে মোচাকৃতির রজন কাঠের চিহ্ন পান, যে কাঠে ব্যাকটেরিয়ারোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। দাঁত পরিষ্কার রাখা ও ক্ষয় মোকাবেলায় এর টুথপিকও ব্যবহার করতো তারা।
জর্জিয়া থেকে পাওয়া ১৮ লাখ বছর বয়সী জীবাশ্ম প্রমাণ করে যে, নিয়ান্ডারথালদের আগেও হোমো ইরেক্টাসরা মাড়ির নানা রোগ প্রতিরোধে এ ধরনেরই টুথপিক ব্যবহার করেছিল।
হার্ডি বলেন, ‘এ গাছের কিছু অংশ চিহ্নিত করে তারা খেতো, যা ভোজ্য ছিলো। এ কাঠের কোনো অংশে পৌষ্টিক সুবিধা ছিলো, নিয়ান্ডারথালদের তা জানা থাকায় তারা তাদের মুখের মধ্যে এটিকে নির্বাণ করতে পারতো’।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০১৬
এএসআর/এসএনএস