ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অফবিট

প্রাগৈতিহাসিক রোগও বিলুপ্তির কারণ?

অফবিট ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩, ২০১৭
প্রাগৈতিহাসিক রোগও বিলুপ্তির কারণ? প্রাগৈতিহাসিক রোগও বিলুপ্তির কারণ?

ইউরেশিয়ায় অভিবাসিত হওয়ার পর আমাদের আধুনিক প্রজাতির মানুষ হোমো স্যাপিয়েন্সদের প্রথম সাক্ষাৎ ঘটে নিয়ান্ডারথালদের সঙ্গে। আমাদের সঙ্গে মিলন-মিশ্রণ, শংকরায়ন ও বিবর্তনের ধারাবাহিকতায় কিছু রোগে সংক্রমিত হয় সমসাময়িক এ মানব প্রজাতি। 

বিশেষত মানুষ নিয়ান্ডারথালদের মাঝে হারপিস জাতীয় রোগ ছড়িয়ে দেয় বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এ কারণে আমরাই নিয়ান্ডারথালদের বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার জন্য দায়ী বলে মনে করেন অনেকে।

হারপিস সিমপ্লেক্স ২ ভাইরাস বা জেনিটাল হারপিস বা সাধারণ হারপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাসের (HSV) সংক্রমণে এমন সব রোগ হয় যা, হেলিকোব্যাকটার পাইলোরি নামক ব্যাকটেরিয়াকে প্রভাবক করে ছড়ায়। এর প্রভাবে নিয়ান্ডারথালদের আলসার, যক্ষ্মা ও ফিতা ক্রিমি রোগে আক্রান্ত করে।

হারপিস ভাইরাসে সৃষ্ট ভাইরাল গ্রুপভুক্ত এসব রোগে নিয়ান্ডারথালরা দ্রুত মারা যেতো না, তবে যৌনাঙ্গ ও পার্শ্ববর্তী এলাকার ত্বকে বেদনাদায়ক ফোসকা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের স্নায়ুতন্ত্রের দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি করতো।

এটিকে একটি যৌনবাহিত সংক্রমণ (STI) হিসেবেও উল্লেখ করা হয়, যা অন্তরঙ্গ যৌন যোগাযোগের মাধ্যমে অন্যদের যৌনাঙ্গে হারপিস পাঠানোর ফল। মিলনের সময় স্যাপিয়েন্সরা নিয়ান্ডারথালদের যৌনাঙ্গে হারপিস দিয়েছে বলেও জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

HSV সংক্রমিত নিয়ান্ডারথালদের জীবাশ্মের মুখে ঠাণ্ডা ঘা পাওয়া যায়, যা শ্লৈষ্মিক ঝিল্লির আর্দ্র আস্তরণে প্রভাবিত ছিল।

এর আগে অনেকে গত ৮ হাজার বছরের মধ্যে প্রাথমিক কৃষিযুগে মানুষের মধ্যে পশুদের থেকে হারপিস ছড়িয়েছিল বলে ধারণা করতেন। কিন্তু এটা এখন স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে, মানুষের মাঝে এ রোগ হাজার হাজার বছর ধরেই ছিল।

নিয়ান্ডারথালদের অনেকেরই আমাদের মতোই বড় মস্তিস্ক ছিল এবং তাদের মতো একই ধরনের অনেক ডিএনএ আমরা বহন করছি। তারা ভালো ও দক্ষ শিকারি, অত্যন্ত ঠাণ্ডা মেজাজের এবং উত্তমরূপে অভিযোজিত ছিল। যেমন, অত্যাধুনিক পাথরের হাতিয়ার ব্যবহারের মাধ্যমে আমাদের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগি করতো তারা।

ভাইরাসদুই প্রজাতির ইন্টারব্রিডে সৃষ্ট আধুনিক ইউরোপীয় ও এশীয়দের মাঝে এসবের প্রমাণ দেখতে পাই আমরা।

ফলে খুব সহজেই মিলনের ফলে আমরা পেয়েছি তাদের ডিএনএ। এসব জিনের কিছু ও রোগ নতুন করে ছড়িয়েছিল নিয়ান্ডারথালদের সঙ্গে আমাদের মিলনে জন্ম নেওয়া ইন্টারব্রিড প্রজাতি রমস্‌দের মাধ্যমেও।

নতুন এক গবেষণায় আরও বলা হচ্ছে, রোগ সংক্রমণ অন্য পথেও চলে গেছে। কারণ, ইউরোপে সাক্ষাতের পর আমরা নিয়ান্ডারথালদের বিভিন্ন ক্ষতিকর প্যাথোজেন গ্রুপেও সংক্রমিত করেছি।

যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শার্লট হাউল্ডক্রফট ও তার সহকর্মী অক্সফোর্ড ব্রুকস ইউনিভার্সিটির সাইমন আন্ডারডাউন বলেন, আসলে সবচেয়ে সাধারণ নিয়ান্ডারথাল জিনোমে বসবাসকারী কিছু রোগ আধুনিক মানুষের দ্বারা বাহিত, তাদের ধ্বংসে যার একটি ভূমিকা রয়েছে। দুই প্রজাতির যুদ্ধের বিবেচনা পরে এসেছিল।

‘মানুষ আজ সাধারণত এসব প্রাচীন রোগে মারা যায় না। এগুলো শুধুমাত্র আমাদের সাধারণ স্বাস্থ্যের ওপর একটি ছোট প্রভাব বিস্তার করে। তবে নিয়ান্ডারথালরা যখন টিকে থাকার অন্যান্য চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়, তখন এ রোগগুলো তাদের সামনে আসে। এটি সামগ্রিকভাবে নিয়ান্ডারথালদের জন্য বিধ্বংসী হয়ে দাঁড়ায়’- বলেন আন্ডারডাউন।

বাংলাদেশ সময়: ০৩২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৪, ২০১৭
এএসআর/এএ

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।