এমনকি পুতুল শিল্পীরা এর একটি সুন্দর মুখ আঁকার জন্য নিজেদের জীবনকাল জুড়ে গবেষণা পর্যন্ত করেন।
জাপানের ঘন বনভূমির শীতপ্রধান তোহোকু অঞ্চলে জন্ম নেওয়া কোকেশি নামের পুতুলটি আসলে একটি মূর্তি পুতুল, যার স্রষ্টা সেখানে কাজের খোঁজে যাওয়া কাঠুরেরা।
কালক্রমে তোহোকু অঞ্চলের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে পরিণত হওয়া কোকেশি পুতুল এখন পুরো জাপানের আদরের ধন যেন। আর তাইতো দেশটিতে আয়োজিত অলিম্পিক ও পপ সংস্কৃতিতে স্থান পায়, দেশজুড়ে হয় প্রদর্শনী, গড়ে ওঠে কোকেশি তৈরির ক্লাব পর্যন্ত।
মানুষ এখন বাড়িতে নিজ হাতে পুতুল তৈরির চেষ্টা করছেন। অনেকে কারিগর ডেকে এনে পুতুল নির্মাণ কৌশলও শিখছেন।
সাম্প্রতিককালের কোকেশি ক্রেজকে রেনেসাঁর সঙ্গেও তুলনা করা হচ্ছে।
নারুকো ওনসিয়েনের মিয়াগির পঞ্চম প্রজন্মের কোকেশি কারিগর আকিহিরো সাকুরাই বলেন, ‘এ পুতুলের দ্বিতীয় পর্যায়ের উত্তরণ দেখতে পেয়েছিলাম ১৯৬৪ সালের টোকিও অলিম্পিকের সময়। আমিও স্কুলের মধ্যম পর্যায়কাল থেকে কোকেশি তৈরি করছিলাম। স্কুলে একটি কোকেশি তৈরির ক্লাবও ছিল। আমরা ক্রীড়াবিদ ও সহযোগীদের ১২ হাজার গড়ে পুতুল পাঠাই’।
তিনি বলেন, ‘এ ক্লাব আমার জীবনের কেন্দ্রে ছিল এবং আমাদের স্থানীয় এলাকা থেকে কোকেশি প্রস্তুতকারকরা এসে আমাদেরকে শেখাতেন। এবং আমরা পাগলের মতো কোকেশি চর্চা করতাম’।
‘আজকের বিশাল জনপ্রিয়তায় দেশের এক তৃতীয়াংশ কোকেশি রেনেসাঁর মুখোমুখি’- বলেন আকিহিরো সাকুরাই।
কোকেশির সহজ, মসৃণ আকৃতি, গাঢ় রং ও শক্তিশালী লাইনআপ তাদেরকে আধুনিক পপ সংস্কৃতিতেও অন্তর্ভুক্ত করেছে। ব্যবহারকারীরা সেলিব্রিটিদের এমনকি নিজেদের মতো চেহারার পুতুল গড়িয়ে নিতে পারছেন। এছাড়াও বেড়াল চতুর এবং ক্ষুদ্র পাটিসহ নানা আকৃতির ও ছুটির থিমযুক্ত পুতুল গড়া হচ্ছে।
সেন্দাই এলাকায়তো চতুর ও ঐতিহ্যগত কোকেশি পুতুল গড়া, সংগ্রহ এবং শেখার হিড়িক পড়ে গেছে।
খেলনার ডিজাইনার শিগেরু মিয়ামোতো ছুটিতে নিরাপত্তার জন্য মিয়াই বা ডিজিটাল কোকেশি পর্যন্ত তৈরি করে ফেলেছেন। তাদের পাতলা, মসৃণ শরীরে বড় আকৃতির মাথা দিয়ে গড়া এ পুতুলগুলো।
নারুকো ওনশিয়েনের ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে চলা একটি জনপ্রিয় পুতুলের কারখানার পঞ্চম প্রজন্মের মালিক শিনজি ওনুমা ও রিওকান ওনুমা জানান, তাদের দোকানে পর্যটকরা পুতুল কেনা ছাড়াও নিজ হাতে এর পেইন্টিংয়ের চেষ্টা করেন।
তারা বলেন, ‘তোহোকুসহ অন্য অঞ্চলে তৈরি চতুর ও আধুনিক স্টাইলের কোকেশি সংগ্রহ তরুণীদের মাঝে এতো বেশি জনপ্রিয় হয়ে হয়েছে যে, ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করছেন তারা। কিন্তু তাদের অ্যাপার্টমেন্ট খুব বড় না হওয়ায় তারা ছোটগুলো কিনতে চান বেশি’।
গত বছরের সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে ইয়োকোহামা ডল মিউজিয়াম নারুতো ওনসিয়েনসহ দেশব্যাপী কোয়েকশি উৎসব ও প্রদর্শনী করে।
সুচিইয়ু ওনসিয়েন এলাকার কোকেশির কারিগর ও শিক্ষক মাস্টার ইউকিনোরি জিননোহারা বলেন, এটি তৈরি শিখতে সময় বেশি প্রয়োজন। সম্পূর্ণ শিল্প মানসম্মত একটি কোকেশি পুতুল গড়তে বছরের পর বছর সময় লাগে।
৪০ বছর ধরে ফুকুশিমা প্রিফেকচারের কোকেশি শিল্পে জড়িত প্রবীণ এ কারিগরের মতে, ‘এটি একটি সারা জীবনের গবেষণাও বটে। এটির কৌশল বা ইতিহাসকে আরও সম্প্রসারণ করতে এমনকি একটি সুন্দর মুখের সঠিক রূপায়নে জীবনকাল জুড়ে গবেষণা করতে হয়’।
‘এমনকি ৪০ বছর পরও আমরাও এখানে কাজের নৈপুণ্য অর্জনে গবেষণারত। কারিগর-শিল্পীরা ততোক্ষণ পর্যন্ত নৈপুণ্য অর্জনের চেষ্টা ও গবেষণা চালান, যতোক্ষণ না তারা মারা যান’।
বাংলাদেশ সময়: ১০০৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৫, ২০১৭
এএসআর/