বিখ্যাত ব্রিটিশ প্রকৃতিবিদ আলফ্রেড রাসেল ওয়ালেসের নামে ওয়ালেসিয়ার নামকরণ করা হয়েছে। ওয়ালেস ১৮৫০ এর দশকে চার্লস ডারউইনের পাশাপাশি প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে স্বাধীনভাবে বিবর্তন আবিষ্কারে এ অঞ্চলে পরিভ্রমণ ও গবেষণা করেন।
ওয়ালেসিয়া অঞ্চলটি পশ্চিম এশিয়া ও পূর্ব অস্ট্রেলিয়ার বন্যপ্রাণীদের একটি পরিবর্তন জোন। এটির পূর্বাঞ্চল লাইডেকার ও পশ্চিমাঞ্চল ওয়ালেস রেখা বা লাইন দিয়ে সীমায়িত করা হয়েছে।
উভয় পাশের দ্বীপগুলো বিভিন্ন প্রজাতির স্তন্যপায়ী ও পাখি অধ্যুষিত হওয়ায় প্রকৃতিবিদরা এ সীমারেখা নির্ধারণ করেছেন।
ওয়ালেস বোর্নিও’র মতো বৈচিত্র্যময় নয়, কিন্তু দ্বীপটি বিশ্বের সবচেয়ে অস্বাভাবিক পশু জীবনযাপনের অঞ্চল। পরস্পরের সঙ্গে সাদৃশ্যহীন প্রাণীরা এখানে পাশাপাশি বসবাস করছে, যা সব সময়ই সর্বশ্রেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের পথ প্রশস্ত করে। আর এর বেশিরভাগ নিম্নভূমিই ক্রান্তীয় বনাঞ্চলে আচ্ছাদিত।
বোর্নিও’র অন্তহীন বিচিত্র পর্বত ও সুলাওয়েসি নদী বেষ্টিত ঘন বন-জঙ্গল এবং বুটন দ্বীপের স্বতন্ত্র জলাভূমির বনাঞ্চলও প্রাণী বেষ্টিত।
ওয়ালেস রেখার পশ্চিমে বোর্নিও’র মতো দ্বীপগুলোতে বাঘ, গন্ডার, ওরাংওটাং ও বানরের মতো পূর্ব এশিয়ার স্তন্যপায়ী প্রাণীরা বাস করে। বরফ যুগ থেকেই সমুদ্রস্তর এখানে নিচে। ফলে কিছু দ্বীপ ভূমিসেতুর মাধ্যমে এশিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে।
অন্যদিকে লাইডেকার লাইনের পূর্বের দ্বীপগুলোতে অস্ট্রেলিয়ার বেশিরভাগ থলিসংক্রান্ত স্তন্যপায়ী ও পাখি যেমন দেখা যায়, তেমনি জনবহুল। নিচু সমুদ্রতলের সময় থেকে এ দ্বীপপুঞ্জের অধিকাংশ দ্বীপই ভূমিসেতুর মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে।
লাইনের সুলাওয়েসি দ্বীপ ও ওয়ালেসিয়া অঞ্চল উভয় অঞ্চলের মিশ্রিত প্রাণী অধ্যুষিত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে, সুলাওয়েসি বিশ্বের একমাত্র দ্বীপ, যেখানে বানর ও শাবকবাহী জীব একত্রে বাস করে।
ওয়ালেসিয়া দ্বীপপুঞ্জ গভীর সামুদ্রিক খাত দিয়েও বিচ্ছিন্ন। তাই প্রাণীরা শুধুমাত্র সাঁতার কাটতে বা উড়তে পারে। এর মানে হল যে, ওয়ালেসিয়া দ্বীপপুঞ্জে দ্বীপগুলোতে পার্শ্ববর্তী দ্বীপপুঞ্জের চেয়ে বেশি স্তন্যপায়ী ও পাখি আছে। কিন্তু অনেক পাখি, সরীসৃপ ও পোকা প্রজাতির প্রাণীরা উড়ে বা সাঁতরে গভীর সমুদ্র পার হয় না।
এ অঞ্চলটি পৃথিবীর সবচেয়ে বৈচিত্র্যপূর্ণ একটি অংশ। কারণ, কোনো কোনো প্রজাতির প্রাণীরা শুধু এখানকার অনেক দ্বীপে দেখতে পাওয়া যায়। যেমন- উড়ুক্কু ব্যাঙ সেলিবেস, সোনালী সিল্কের অক্ষিগোলক-পটকার মাকড়সা,
এর মানে হল, এটি অনেক স্থানীয় প্রজাতির অঞ্চল, যা একটি বিশেষ দ্বীপ বা অঞ্চলের জন্য অনন্য এবং বিশ্বের অন্য কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সুলাওয়েসি শুধুমাত্র সেখানে পাওয়া যায়, এমন বন্যপ্রাণী দেখার জন্য একটি অবিশ্বাস্য স্থান। উজ্জ্বল সবুজ ব্যাঙ ও গাঢ় ব্যাঙ, বলদায়ক শব্দবাহী বনের নিদ্রাভঙ্গ করা পাখি, পোকা-মাকড় এবং স্তন্যপায়ী ও শাবকবাহী জীব এখানকার প্রতিটি আনাচে-কানাচে দেখতে পাওয়া যায়।
সুলাওয়েসির সবচেয়ে আকর্ষণীয় প্রজাতি শাবকবাহী জীব কাসকাস। শাবকবাহী জীব সাধারণত অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকায় সীমাবদ্ধ বলে মনে করা হয়। কিন্তু এ দ্বীপটিতেই এশিয়ার একমাত্র ব্যতিক্রমী শাবকবাহী জীব এবং বিশ্বের সবচেয়ে আদিম পোসাম নামক এক জাতীয় ইঁদুর পাওয়া যায়।
সুলায়েসিতে দুই প্রজাতির কাসকাস আছে- ভালুক কাসকাস ও বামন কাসকাস। তারা এশিয়ার বানর ও টারসিয়ার্স জাতীয় স্তন্যপায়ীদের সঙ্গে পাশাপাশি বাস করে এবং কচি পাতা খেয়েই বাঁচে।
বাংলাদেশ সময়: ২৩৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭, ২০১৭
এএসআর