ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অফবিট

মানব প্রজাতির শৈশবাস্থল

অফবিট ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৭
মানব প্রজাতির শৈশবাস্থল সংগৃহীত

আমাদের আদি ও প্রথম পূর্বপুরুষদের সবচেয়ে বেশি জীবাশ্ম পাওয়া গেছে এবং এখনও যাচ্ছে আফ্রিকার বিভিন্ন গুহা ও সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলে। ফলে মহাদেশটি যে বিবর্তনের ধারায় উদ্ভব হওয়া আদি মানব প্রজাতিগুলোর জন্মস্থান ও শৈশবাস্থল ছিল, তার তথ্য-প্রমাণ ছড়িয়ে আছে সেখানকার (বর্তমান বিভিন্ন দেশের) অসংখ্য প্রত্নতাত্ত্বিক সাইটে। 

৬ মিলিয়ন বছর আগে প্রাইমেট (গ্রেট এপ বা মহান বানর শিম্পাঞ্জি) থেকে আলাদা হয়ে পর্যায়ক্রমিক বিবর্তনের ধারায় সাড়ে চার মিলিয়ন বছর আগে প্রথম মানব (হোমো জেনাস) জন্ম নেয় পৃথিবীতে, যাদেরকে অস্ট্রালোপিথেকাস প্রজাতির বলে চিহ্নিত করেন। ৩৬ লাখ ৬০ হাজার বছর আগের অস্ট্রালোপিথেকাস অ্যাফারেনসিস প্রজাতির মানবরা আমাদের প্রথম ও আদি পূর্বপুরুষ।

   

এদের ধারাবাহিকতায় আফ্রিকাতেই জন্ম নেওয়া হোমো নিয়ান্ডারথ্যালেনসিস বা নিয়ান্ডারথাল, হোমো ইরেক্টাস,  হোমো প্যারানথ্রোপাস্‌ বোইসেই, হোমো সোলোয়েনসিস, হোমো ফ্লোরেসিয়েনসিস ও হোমো ডেনিসোভানসহ বিভিন্ন প্রজাতি ১৫ থেকে ১৭ লাখ বছর আগে থেকে জন্মস্থান থেকে আরব উপদ্বীপ, সাইবেরিয়া ও ইউরেশিয়া হয়ে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। আমাদের আধুনিক প্রজাতির মানুষের পূর্বসুরীরাও (হোমো স্যাপিয়েন্স নামেরই আদি আধুনিক মানব প্রজাতি) আফ্রিকা থেকে ইউরেশিয়ায় অভিবাসিত হয় ৭০ হাজার বছর আগে।

আফ্রিকায় রয়ে যাওয়া ও ৪৫-৫০ হাজার বছর আগে ফিরে আসাদের থেকে বিবর্তিত হয়ে জন্ম নেয় হোমো রুডোলফেনসিস ও হোমো ইরগেস্টার। এমনকি সবচেয়ে সাম্প্রতিককালে আবিষ্কৃত মানব প্রজাতি হোমো নালেদিদেরও পাওয়া গেছে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গের রাইজিং স্টার গুহাশ্রেণীতে।

জোহানেসবার্গের ইউনিভার্সিটি অব উইটওয়াটারৠান্ডের নৃ-তত্ত্ববিদ লি বার্জারের নেতৃত্বে বিজ্ঞানীরা বহু বছর ধরে অনুসন্ধান ও খনন করে বিভিন্ন মানব প্রজাতির অসংখ্য জীবাশ্ম আবিষ্কার করেন।

১৯৯০ সালের প্রথম দিকে লি বার্জার যখন উইটওয়াটারৠান্ডে যোগ দিয়ে জোহানেসবার্গে জীবাশ্ম আবিষ্কার শুরু করেন। ২০০৮ সালে তিনি সত্যিকারের গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারটি করেন রাইজিং স্টার থেকে দশ মাইল দূরের মালাপায়। তিনি ও তার নয় বছর বয়সী ছেলে মথি  কিছু হোমিনিন জীবাশ্ম পান। পরের বছর বার্জারের দল দু’জন প্রাগৈতিহাসিক মানুষের প্রায় সম্পূর্ণ কঙ্কাল পান।

তিনি বলেন, প্রায় দুই লাখ বছর আগের এ প্রজাতিটি দক্ষিণ আফ্রিকায় বাস করতো। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা খুব আদিম ছিল। কিন্তু অস্বাভাবিকভাবে কিছু আধুনিক বৈশিষ্ট্যও ছিল। বার্জার বলেন, এটি অস্ট্রালোপিথেকাসের একটি নতুন প্রজাতি, যাকে তিনি অস্ট্রালোপিথেকাস সেডিবা নাম দেন।


আমাদের হোমো মহাজাতির উৎপত্তির দুই থেকে তিন মিলিয়ন বছর পরে প্রথম বিভক্তি হয় অস্ট্রালোপিথেকাস অ্যাফারেনসিস ও আমাদের সরাসরি পূর্বপুরুষ হোমো ইরেক্টাসদের মধ্য দিয়ে। অ্যাফারেনসিসদের সবচেয়ে বিখ্যাত প্রতিনিধি লুসির কঙ্কাল ১৯৭৪ সালে ইথিওপিয়ায় আবিষ্কৃত হয়। ১৯৮৪ সালে উত্তর কেনিয়ার মরুভূমি হ্রদ তুরকানায় পাওয়া যায়  হোমো ইরেক্টাসদের বিখ্যাত প্রতিনিধি ‘তুরকানা বয়’ বা ‘নারিওকোটমি বয়’ এর জীবাশ্ম।

ইরেক্টাসের চেয়ে পুরনো একটি প্রজাতি হোমো হ্যাবিলিসদের জীবাশ্ম ১৯৬৪ সালে তাঞ্জানিয়ায় খুঁজে পান লুই লিকি ও তার সহকর্মীরা। লুইয়ের ছেলে রিচার্ডের নেতৃত্বে বিজ্ঞানীরা ১৯৭০ এর দশকে কেনিয়ায় আবিষ্কার করেন  হ্যাবিলিসদের আরও কয়েকটি নমুনা।
বার্জার যুক্তি দিয়েছেন, হোমো হ্যাবিলিস মহাজাতির সবচেয়ে আদিম প্রজাতি ছিল। কিছু বিজ্ঞানী আবার বলেন যে, এটিও অস্ট্রালোপিথেকাসদের অংশ।

২০১৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রাইজিং স্টার গুহাশ্রেণী থেকে হোমো নালেদি প্রজাতির ১৫ জনের প্রায় দেড় হাজার হাড়ের টুকরাও আবিষ্কার করেন বার্জার ও তার সহকারীরা।
 
হোমো নালেদি আবিষ্কারক দলের নৃ-তত্ত্ববিদ মারিনা ইলিয়ট মনে করেন, অর্ধ শতাব্দীর মধ্যে সবচেয়ে বিস্ময়কর ও সর্ববৃহৎ মানুষের জীবাশ্ম আবিষ্কারের ঘটনা আবারও প্রমাণ করেছে, আফ্রিকাই আমাদের জন্মস্থান ও শৈশবাস্থল।

বাংলাদেশ সময়: ০১১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১৭
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।