পুরাণে বিশ্বাসী নিউজিল্যান্ডের মাওরি গোষ্ঠীর মানুষেরা অনেক প্রাণীকে রাতের ত্রাস ও আতঙ্কজনক বলে মনে করেন। এর মধ্যে একটি পৌরাণিক পাখি হাকাওই।
যদিও এটিকে খুব কমই দেখা যায়, কেবল একটি শব্দ শুনে শুনে হাকাওইয়ের ডাককে একটি খারাপ লক্ষণ হিসেবে চিন্তা করা হয়েছে। ‘হাকাওই’, ‘হাকাওই’, ‘হাকাওই’- ডাকতে ডাকতে পাখিটি ঘাড়ের ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রেখে সোজা দাঁড়িয়ে থাকতে পারে পাখিটি। মাওরিরা এর দরদমাখা কিন্তু দ্রুত লয়ে উচ্চারিত এ স্বতন্ত্র শব্দেই ভীত হয়।
মানব ইতিহাসের ধাপে ধাপে মানুষ এভাবেই কিছু বাস্তব, কিছু কাল্পনিক ও কিছু পৌরাণিক- সব ধরনের প্রাণীকে অশুভ বলে মনে করে আসছেন। আজও এর অনেক উদাহরণ আছে। নিশাচর কিছু পশু-পাখিও অনেক সংস্কৃতিতে দীর্ঘকালীন সন্দেহ ও ঘৃণার লক্ষ্যবস্তু হয়েছে।
মাওরিদের দৃষ্টিতে হাকাওই একমাত্র অশুভ পাখি নয়। আরেকটি পৌরাণিক পাখি পৌকাইকেও অশুভ বলে মনে করেন তারা। কারণ, তাদের ধারণা, এরা মানুষকে খেয়ে ফেলার জন্য ডাক দেয় ও কাছে আসতে প্রলুব্ধ করে। এ বিভীষিকা ও মানুষকে বিনিদ্রতা থেকে সুরক্ষিত রাখতে নানা লোকাচারও পালন করেন তারা।
হাস্ট দ্বীপের গল বৃহত্তম ঈগলকেও অশুভ বলে মনে করা হয় মাওরিদের পুরাণে। এ ঈগল প্রায় ১ হাজার ৪০০ বছর আগেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। কিন্তু কিছু মানুষ মনে করেন, এটি যথেষ্ট বড় আক্রমণকারী ও মানুষখেকো ছিল।
পাখি বিশেষজ্ঞ কলিন মিসকেলি নিউজিল্যান্ডের চ্যাথাম দ্বীপপুঞ্জে গবেষণার সময় ১৯৮০ সালে প্রথম হাকাওইয়ের ডাক শোনেন। পরে ২০ সেন্টিমিটার লম্বা পাখিটির ডাক রেকর্ড করেন তিনি।
বিস্তারিত বিশ্লেষণ করে মিসকেলি বলেন, ‘এই নম্র পাখিটি অস্বাভাবিক শব্দ করে উচ্চগতিতে বাতাসে ডাইভিংয়ের মাধ্যমে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে লেজের বেজায় স্পন্দনে এটি ঘটায় পাখিটি’।
‘রাতের ভয়ঙ্কর এ পাখি সম্পর্কে মাওরি পৌরাণিক গল্প সম্ভাব্য ব্যাখ্যা দিতে পারেনি। অথচ এ পাখির অর্ন্তদৃষ্টি চ্যাথাম দ্বীপের মানুষকে বোঝার জন্যও উন্নত’।
মধ্যযুগে ইংল্যান্ডে পেঁচাকেও খুব নেতিবাচক ও অপছন্দনীয় হিসেবে চিহ্নিত করা হতো।
তবে এ অনুভূতি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে গেছে। পেঁচাকে এখন দীর্ঘ জ্ঞানের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। তাদের সম্পর্কে নেতিবাচক কুসংস্কারও আজ অনেক কম প্রচলিত।
বাংলাদেশ সময়: ০৪২৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০১৭
এএসআর