একটি সামাজিক ও সমবায় প্রজাতি হিসেবে তাই আদিম কিন্তু ‘আধুনিক’ মুখই আমাদের নেতৃত্বে বসায়।
আমরা আধুনিক প্রজাতির মানুষ হোমো স্যাপিয়েন্সরা মুখের আকৃতি পেয়েছি আমাদের আদি পূর্বপুরুষ হোমো হাইডেলবার্গেনসিস ও সমসাময়িক হোমো নিয়ান্ডারথালদের কাছ থেকে।
বিবর্তনের ধারা বলছে, আমাদের নিকটাত্মীয় বানর, শিম্পাঞ্জি, গরিলা এবং পূর্বপুরুষ হোমো (মানব) প্রজাতিগুলোর মধ্যে হাইডেলবার্গেনসিসদের মুখ সবচেয়ে বড় আকারের ছিল। পৃথিবীর নেতৃত্ব আমাদের করায়ত্ব হতে ওই বড় আকৃতির মুখের অভিব্যক্তি একটি বড় ভূমিকা পালন করে।
আধুনিক মানুষের নাকের তলদেশ ও ওপরের চোয়ালের অধিকাংশ এলাকা আবার গরিলা জাতীয় প্রাণীর বিবর্তিত রূপ, যা চর্বণাস্থি নামে পরিচিত। এটি হাড়ের কোষকে শোষণ করে সমৃদ্ধ হয়েছে। কিন্তু নিয়ান্ডারথালদের এ এলাকাটি হোমো অস্ট্রালোপিথেকাসের মতো অন্যান্য প্রাথমিক হোমিনিন হাইডেলবার্গেনসিস্যান্ডের অনুরুপভাবে গঠিত। যেখানে হাড়ের মাধ্যমে মুখ বাইরে বা সামনের দিকে প্রসারিত হয়েছে, সেখানে প্রচুর কোষ ছিল।
নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি কলেজের টিমোথি ব্রোমেজ ও রডরিগো ল্যাকরাজ বলেন, ‘আধুনিক মানুষের চর্বণাস্থি সব গরিলা জাতীয় প্রাণীর থেকে বিবর্তিত। এ অভিক্ষিপ্ততা মানুষের মুখকে খুলি পর্যন্ত এগিয়ে এনেছে, যা তাকে অভিব্যক্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে। অভিব্যক্তির পার্থক্যই মানুষকে প্রাণীদের নেতৃত্বের আসনে বসিয়েছে’।
জার্মানির লিপজিগ বিবর্তনমূলক নৃ-বিজ্ঞান ম্যাক্স প্লাঙ্ক ইন্সটিটিউটের জাঁ জ্যাক হাবলিন ও তার সহকর্মীরা গবেষণা শেষে জানান, আধুনিক মানুষের দূরবর্তী পূর্বপুরুষ থেকে আমাদের আদিম বৈশিষ্ট্য অনেকটা অপরিবর্তিত রয়ে গেছে। যেমন- আমরা বিবর্তিত নিয়ান্ডারথালদের মতো মুখ পেয়েছি। তবে আধুনিক মানুষের তুলনায় তাদের মুখের নিজস্ব দিক আরও বিকশিত হয়েছে।
নিয়ান্ডারথালের আকৃতির কিছুটা তারতম্যের ব্যাখ্যা করে হাবলিন বলেন, ‘আমরা যদি একটি আধুনিক মানুষের খুলি দেখি, সেখানে এমন কিছু বিষয় পাবো, যা একটি নিয়ান্ডারথালের মতো দেখায় না। কিছু আলাদা রয়েই যায়। তবে তাদের আমাদের মতোই অদ্ভুত চোখ ছিল’।
‘তাই আরও বিকশিত বলা হলেও আমাদের ক্ষেত্রে আসলে এটির অর্থ হতে পারে, আরও আদিম’।
হোমো অ্যান্টেসেসরের মাথার খুলি নিয়ে গবেষণা করেন লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের নৃ-তত্ত্ববিদ ক্রিস স্ট্রিংগার । তিনি বিষ্মিত হন এটা জেনে যে, তাদের মুখও একইসঙ্গে আদিম ও আধুনিক ছিল।
স্ট্রিংগার বলেন, ‘দেখে মনে হচ্ছে, তাদের অঙ্গসংস্থান বিদ্যা আমাদের মাথার খুলিতে বজায় রয়েছে’।
এককথায়, আমাদের হোমিনিন পূর্বপুরুষদের, হাসি, ভ্রূকুটি বা বিতৃষ্ণাসহ মুখের সব অভিব্যক্তি মোটামুটি অবিকৃত রয়ে গেছে। ফলে আমরা অনায়াসে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছি এবং বিশ্ব নেতৃত্বের ক্ষমতা ও যোগ্যতা পরম্পরা হিসেবে গ্রহণ করেছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৭
এএসআর/