তবে প্রাচীন হোমিনিন, বিশেষত হোমো হাইডেলবার্গেনসিস ও নিয়ান্ডারথালদের প্রশস্ত কপালের ঢালের সঙ্গে একটি বড় নাক ছিল।
বিবর্তনের ধারায় বড় নাক প্রয়োজনীয় ছিল।
নিয়ান্ডারথালদের বড় নাক থাকার কারণ সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা হচ্ছে, তারা প্লেইস্টোসিন বরফ যুগের ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় অভিযোজিত হয়। বৃহৎ অনুনাসিক গহ্বর ঠাণ্ডা বাতাসকে উত্তাপিত করে তাদের ফুসফুসে পৌঁছে দিতো। এটি তাদের শরীরকে গরম রাখতো।
ধীরে ধীরে পৃথিবী উষ্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বড় নাকের প্রয়োজনীয়তার পাশাপাশি এর আকারও কমেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, আমাদের শক্তিশালী কামড় আমাদের নাকের আকারের সঙ্গে সম্পর্কিত।
নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের রিকার্ডো গোডিনহো, পেনি স্পিকিনস্ ও পল ও হাইগিনস্ প্রকৌশল নীতি ব্যবহার করে প্রাগৈতিহাসিক হোমিনিনদের দেহাবশেষের জীবাশ্ম এবং আধুনিক মানুষের থ্রি-ডি কম্পিউটার মডেল ব্যবহার করে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করেছেন।
তারা বলেন, ‘একটি বৃহৎ নাকের প্রয়োজনীয়তা হারানোর পর আমাদের মুখ মস্তিষ্কের অধীনে আকৃতি পায় এবং শক্তি বৃদ্ধিতে ঘটনাক্রমে দাঁত দিয়ে ফুটো করা বা শক্তিশালী কামড়ের শুরু হয়’।
২০১০ সালে লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের নৃ-তত্ত্ববিদ ক্রিস স্ট্রিংগারও গবেষণা করে জানান, নিয়ান্ডারথালের সাইনাসের আকার আধুনিক ইউরোপীয় মানুষের মধ্যে পাওয়া যায়নি। হাইডেলবার্গেনসিসদের বড় নাক ছিল এবং পরবর্তী প্রজাতি নিয়ান্ডারথালদের মধ্যে জেনেটিক ড্রাফটের মাধ্যমে তা রয়ে যায়।
তিনি যুক্তি দেন যে, এই হাইডেলবার্গেনসিসরা নিয়ান্ডারথালদের সঙ্গে আমাদের সাধারণ পূর্বপুরুষ ছিল। নিয়ান্ডারথালরা প্রাগৈতিহাসিক যুগে আধুনিক মানুষের সঙ্গে তাদের সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল।
আধুনিক মানুষ ও আমাদের পূর্বপুরুষদের মধ্যে আরেকটি বিশিষ্ট পার্থক্যের কারণেও হাইডেলবার্গেনসিস ও নিয়ান্ডারথালদের বিলুপ্ত হতে পারে। কপালের ওপরে একটি শীর্ণ টুপির মতো বড় ললাট ঢাল থাকায় তাদের ভ্রু’র নড়াচড়া সীমিত হয়ে পড়ে। ফলে তাদের শারিরীক ক্ষতি ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগে ব্যর্থ হয়ে হারিয়ে যেতে থাকে।
নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দলের জন্য আরও বিস্ময়কর ছিল যে, তাদের বড় মুখ সত্ত্বেও হোমো হাইডেলবার্গেনসিসরা আধুনিক মানুষের চেয়ে কামড়ে দক্ষ ছিল, যদিও তাদের হাড় কামড় প্রতিরোধে সক্ষম। একই কাজ নিয়ান্ডারথালরা পারেনি।
তারা দেখলেন যে, ললাট ঢালের কোনো কাঠামোগত সুবিধা দুই প্রজাতিই পায়নি। চোখের ওপরের হাড়ের এই বিশিষ্ট খিলান প্রজাতির অন্যান্য সদস্যদের ওপর আধিপত্যও করতে পারেনি। অনেকটা এটি আমেরিকার হরিণ বিশেষের বড় শিংয়ের মতো হতে পারে।
স্ট্রিংগার আমাদের নিকট আত্মীয়দের মধ্যে বানরদেরকে তাদের আধিপত্য প্রদর্শনের অংশ হিসেবে তাদের ভ্রু বাড়াতে দেখেছেন। পশ্চিম আফ্রিকান বড় বেবুনরাও (ম্যানড্রিলস) তাদের উজ্জ্বল রং, ভ্রু ও নাকের প্রদর্শন গ্রুপের মধ্যে নিজেদের মর্যাদা নির্দেশে ব্যবহার করে।
ও’ হাইগিংস ও তার সহকর্মীরাও বলেন, ‘আধুনিক মানুষের হাড় অনেক আগেই ভাঙা। আমাদের সমতল আকৃতির কপাল প্রাকৃতিক নির্বাচনের ফল ছিল না, কিন্তু অন্য কিছু কারণে আমাদের পূর্বপুরুষেরা ওই আক্রমনাত্মক সুদর্শন ললাট ঢাল হারায়। ফলে তারা ভাষা সমৃদ্ধ হয়ে সূক্ষ্ম যোগাযোগের একটি ফর্ম অর্জন করতে সমর্থ হয়’।
‘বড় ললাট ঢালের কারণে ভ্রু’র নড়াচড়া সীমিত ছিল। কিন্তু ঢাল অদৃশ্য হওয়ায় যে পরিবর্তন আসে, তাতে আমরা সমতল মুখ ও একটি উল্লম্ব কপাল অর্জন করি এবং হঠাৎ ভ্রু পর্যন্ত স্থানান্তর করতে সমর্থ হই। এ বিবর্তন আরো সূক্ষ্ম সামাজিক যোগাযোগের ক্ষমতা দেয় আমাদেরকে’।
বাংলঅদেশ সময়: ০০৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৭
এএসআর